নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনেই শবরীমালায় ইতিহাস। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে জয় হল মহিলাদের। বুধবার শবরীমালা মন্দিরে ঢুকলেন বছর চল্লিশের দুই মহিলা।
পুলিস সূত্রে খবর, এদিন ভোরে চল্লিশোর্ধ্ব দুই মহিলা মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেন। পুলিসের সাহায্যেই তাঁরা মন্দিরের ভেতর প্রবেশ করেন বলে জানা যাচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মন্দিরে ঢোকার জন্য শবরীমালা পাহাড়ের পেম্বা বেস থেকে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ভোর তিনটে বেজে ৪৫ মিনিটে আয়াপ্পার দর্শন করে প্রার্থনা জানান ওই দুই মহিলা। ওই দুই মহিলার নাম বিন্দু এবং কণকদুর্গা বলে জানা যাচ্ছে। তাঁদের দু’জনেরই বয়স ৪০-এর আশেপাশে। তাঁদের কর্ডন করে নিয়ে যায় ছোট্ট একটি পুলিশের দল। ওই দলে ইউনিফর্ম পরা এবং সাদা পোশাকের পুলিশ ছিল। কালো কাপড় পরে তাঁরা মন্দিরে ঢুকে আয়াপ্পা স্বামীর কাছে প্রার্থনা সেরে বিনা বাধায় নীচে নেমে আসেন।
সুপ্রিম কোর্ট দরজা খুলেছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। চার মাস কেটে যাওয়ার পরও ঋতুমতী কোনও মহিলা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি। এদিন অবসান হল ১০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বয়সের মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার। শুরু হল এক নয়া অধ্যায়ের।
শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছরের অর্থাৎ ঋতুকালীন বয়সের মহিলারা প্রবেশ করতে পারতেন না। ১৯৯১ সাআল থেকে এই প্রথাই চলে আসছিল। এমনকি, মন্দিরে ঢোকার সময় বয়সের প্রমাণপত্রও দেখাতে হত মন্দির কর্তৃপক্ষকে। এই প্রথার বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্ট এ বছরের সেপ্টেম্বরে রায় দিয়ে জানায়, ধর্মাচরণে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করা যায় না। সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম রায়ের পরই অশান্তি ও ক্ষোভ বেড়েই চলেছে কেরলে। সুপ্রিম রায়ের বিরোধিতায় বিক্ষোভ তো চলছেই। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ের পর দেখা গিয়েছে গত তিন মাসে বার বার মহিলাদের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা হলেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। প্রবল বিক্ষোভের মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এর আগে রূপান্তরকামীরাও মন্দিরে প্রবেশে বাধা পেয়েছেন। প্রতিবাদ-বিক্ষোভে আটকে দিয়েছেন মন্দিরে প্রবেশের রাস্তা। এত দিন পুলিশ-প্রশাসনও সেখানে ছিল কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও মন্দিরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছিল একাধিক সংগঠন। মন্দিরের প্রায় এক কিলোমিটার আগে থেকেই কার্যত এই সংগঠনগুলি দেওয়াল তুলে দিয়েছিল। কেউ মন্দিরে প্রবেশের জন্য পাহাড়ে উঠতে গেলেই তাঁদের বাধা দিচ্ছিল। তেমনই একটি সংগঠন ‘আয়াপ্পা ধর্ম সেনা’র এক সদস্য রাহুল ঈশ্বর বলেন, ‘‘আমি মনে করি না এটা সত্যি। ওই দুই মহিলা অত্যন্ত গোপনে মন্দিরে প্রবেশ করে থাকতে পারে। বিষয়টি সত্যি বলে আমরা জানতে পারলে, তার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’