কলকাতা: বুধবার বাংলায় জোড়া সভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। প্রথমটি শিলিগুড়ি এবং তারপর তিনি উড়ে আসবেন ব্রিগেডে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেছিলেন ৪ এপ্রিল থেকে প্রচার শুরু করবেন। কিন্তু সূচিতে বদল এনে দিনের দিনেই মোদীর সঙ্গে সওয়াল জবাব সারতে বুধবার থেকেই ময়দানে নামছেন দিদি। কোচবিহার থেকেই শুরু করবেন তাঁর প্রচার। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, গেরুয়া হাওয়া তুলতে প্রথম দফাতেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারেন নরেন্দ্র মোদী।
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসকে চাপে ফেলতে পারেন নরেন্দ্র মোদী।
১. দিল্লিতে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে বারবার মোদী কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের কথা বলেন। মা-বেটার সরকারের মতো রাজ্যেও পিসি-ভাইপোর সরকার বলে আক্রমণ শানাতে পারেন মোদী।
২. অনুপ্রবেশ বিজেপি’র বরাবরের ইস্যু। উত্তরবঙ্গের সমাবেশ থেকে এই ইস্যুতে মোদী অবশ্যই বলবেন। একই সঙ্গে ব্রিগেড থেকেও অনুপ্রবেশ বন্ধে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আক্রমণ চালাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
৩. উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপির বড় ইস্যু গোরক্ষা আরও সামনে আসে। এর পরে এই প্রথমবার নির্বাচন। এ রাজ্যে গো-পাচার নিয়েও শাসককে আক্রমণ করতে পারেন মোদী।
৪. ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের স্বাস্থ্য প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত লেগেছে। অন্য রাজ্যের মানুষ সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু বাংলা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বঞ্চিত বলে আক্রমণ শানাতে পারেন মোদী।
৫. কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা রাজ্য পেলেও তা ঠিক মতো খরচ করা হচ্ছে না বলে আগেই অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। ভোটের মুখে সে অস্ত্র অবশ্যই ব্যবহার করবেন প্রধানমন্ত্রী।
৬. এই রাজ্য শিল্পে পিছিয়ে থাকাকে আগেও নিন্দা করেছেন মোদী। বোমা শিল্পের কটাক্ষ ফের শুনতে হতে পারে শাসকদলকে।
৭. সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে আগেও একাধিক বার আক্রমণ করেছেন মোদী। সেটাও বাদ যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
৮. রাজ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু মানুষের ভোট দিতে না পারাকে ইস্যু করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
৯. সারদা-সহ চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে বাধা দেওয়া নিয়ে আগেই সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবারেও উঠতে পারে রাজীব কুমার প্রসঙ্গ।
১০. সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোট তৈরির চেষ্টাকে কটাক্ষ করতে পারেন মোদী।
পাল্টা কী কী বাক্যবাণে মোদীকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিঁধতে পারেন তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-
১. পাঁচ বছরে কিছুই করেনি মোদীবাবুর সরকার। আগেরবার চাওয়ালা সেজে ভোট চেয়েছিল। এ বার চৌকিদার সেজেছে। চৌকিদার চোর হ্যায়।
২. বলেছিল বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি দেবে। কিন্তু কিচ্ছু করেনি। বাংলায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান বেড়েছে।
৩. রাজ্যের প্রকল্পকে কেন্দ্রের বলে চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যসাথী থেকে কৃষক বন্ধু, সব আমাদের দেখে দিল্লি টুকলি করেছে।
৪. নোটবন্দির পর ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমিই একমাত্র বলেছিলাম, এটা ডিজাস্টার হতে যাচ্ছে। বলেছিল নোটবন্দি করে কালো টাকা ওয়াপাস করবে। আসলে নিজেদের কালো টাকাকে সাদা করেছে। এটা ভারতের সব থেকে বড় দুর্নীতি। নতুন সরকার এসে এর তদন্ত করবে।
৫. বলছে বাংলায় নাকি দুর্গাপুজো হয় না। আপনারা বলুন, বাংলায় দুর্গাপুজো হয় কি হয় না? সরস্বতী পুজো হয় কি হয় না? এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো হয় কি হয় না? ছট পুজো হয় কি হয় না?
৬. গেরুয়া জামা গায়ে দিয়ে হিন্দ্বুত্বের ঠাকুরদাদা সেজেছে! আমি ওদের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি।
৭. কেন্দ্রের প্রকল্পেও রাজ্যকে টাকা দিতে হয়। দিল্লি সব টাকা দেয় না। সেখানে শুধু নিজের ছবি লাগিয়ে প্রচার করছে।
৮. বাংলায় বিজেপি আর আরএসএস এক জোট হয়ে দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। আর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে শুধু মিথ্যে কথা বলছে।
৯. জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যগুলোকে কিনে নিয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। বিরোধিতা করলেই এজেন্সি লেলিয়ে দিচ্ছে।
১০. সেনাদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে। এই পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।