#নয়াদিল্লি: জি-২০ সামিটে যোগ দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ভোরবেলা জাপানে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সামিট চলাকালীন বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন মোদী।
জাপানের ওসাকায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগেই ট্রাম্প ভারতের উপর চাপ তৈরি করে রাখলেন বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। যদিও ভারতের দাবি, অন্যান্য দেশের তুলনায় এই শুল্ক হার বেশি নয়। আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে গত ১৫ জুন ভারত ২৮ টি পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ আমেরিকা আমদানি করলে এই ২৮টি পণ্যের উপর বেশি হারে শুল্ক দিতে হবে। নয়াদিল্লির এই সিদ্ধান্তেই ক্ষুব্ধ আমেরিকা। এবং এই শুল্কবৃদ্ধিই তুলে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার একটি টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে এমনিতেই আমেরিকার আমদানির উপর ভারত উচ্চ হারে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি সেটা আবারও বাড়ানো হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না এবং অবশ্যই এটা তুলে নেওয়া উচিত। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’’
শুল্ক নিয়ে ইন্দো-মার্কিন ঠান্ডা যুদ্ধের সূত্রপাত এ মাসের গোড়ায়। আমেরিকার থেকে ভারত যে সব পণ্য আমদানি করে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এবং সবচেয়ে বেশি আমদানিকারী হিসেবেঅনেক ক্ষেত্রেই ছাড় পেত ভারত। স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ছিলই না। কিন্তু গত ১ জুন থেকে সেই সুবিধা তুলে নিয়ে এই দুই পণ্যের উপর কর চাপিয়ে দেয় ওয়াশিংটন। শুধু ভারতই নয়, অধিকাংশ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও একই ভাবে শুল্ক বাড়ানো হয়, অথবা নতুন করে শুল্ক চাপানো হয়। জবাবে ১৫ জুন থেকে ভারতও ২৮টি পণ্যের উপর শুল্ক অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাতেই ক্ষুব্ধ হোয়াইট হাউস।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার ওসাকায় জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের ফাঁকে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই বিষয়টি যে উঠবেই, তা আগে থেকেই আঁচ করছিলেন কূটনৈতিক শিবির। এ বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের পর সেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হল। পাশাপাশি বৈঠকের আগেই ভারতের উপর স্নায়ুর চাপ বাড়াতেই ট্রাম্পের এই কৌশলী টুইট বলেও মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।
দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদী। অবশ্য লোকসভায় বিজেপির জয়ের পর ট্রাম্প ফোন করে মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তিন দিনের এই জি-২০ সামিটে ১০টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন মোদী। তার মধ্যে ট্রাম্প ছাড়াও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিংপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গেও বৈঠক রয়েছে মোদীর।
বুধবারই মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন। বাণিজ্য নিয়ে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে যে নীতিগত পার্থক্য আছে, তা স্বীকার করে নেন পম্পিও। তিনি বলেন, ভালো বন্ধুদের মধ্যেও অনেক বিষয়ে অমিল থাকে। সেটা বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করে। মার্কিন বিদেশ সচিব ও ভারতের বিদেশমন্ত্রী দুজনেই জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান তাঁরা। তার মধ্যে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স চুক্তি নিয়ে আমেরিকা যে বিরোধিতা করেছে, সে বিষয়েও আলোচনার প্রয়োজন বলে তাঁদের মত।
জাপানে জি-২০ সামিটে যোগ দিতে যাওয়ার আগে মোদী বলেন, “এর পরেই ২০২২ সালে ভারতে জি-২০ সামিট হবে। ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা বছরে এক নতুন ভারতের দিকে এগিয়ে যাব আমরা।” সেইসঙ্গে মোদী আরও বলেন, “এ বারের বৈঠকে মহিলাদের ক্ষমতায়ন, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াইয়ের উপরেই সওয়াল করা হবে। কারণ এই দ্রুত বদলাতে থাকা দুনিয়ায় সব দেশ মিলে একসঙ্গে এই বিষয়ে কাজ করলে তবেই উন্নতি সম্ভব।”
এই সামিটে রাশিয়া-ভারত-চিন ও জাপান-আমেরিকা-ভারত দুটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথাও রয়েছে। এ চারাও ব্রিকস-এর অন্তর্ভুক্ত দেশের প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন মোদী, এমনটাই জানা গিয়েছে।
জি-২০ সামিটে যে ২০টি দেশ অংশ নেয়, সেগুলি হলো- আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।