ভাদ্রে রান্না করে আশ্বিনে খাওয়া! জেনে নিন অরন্ধনের ব্রতের ইতিহাস

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

‘অরন্ধন’-এর আভিধানিক অর্থ হল অ রন্ধন অর্থাৎ যে দিন রান্না করা হয় না বা রান্না নিষেধ। তবে এই ‘অরন্ধন’ যখন উৎসবের আকার নিয়ে হুজুগে বাঙালির রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে তখন আর ‘বিনা রান্না’ বা ‘রান্না নিষেধ’, কোনো কিছুই আর থাকে না।

ভাদ্র সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন পরিবারের কল্যাণার্থে গৃহিণীরা শিবের মানসপুত্রী দেবী মনসার উদ্দেশে নানা বিধ পদ রান্না করে নিবেদন করেন। রান্নাপুজোর দিন সাধারণত উনুনের পুজো হয়। সারা বছর আমরা যে উনুনে রান্না করি তার উপাসনা করা হয় এই পুজোয়। অন্য দিকে উনুনের গর্ত হল মা মনসার প্রতীক। তাই দেবী মনসার উদ্দেশে পুজো বোঝাতেই এই উনুনপুজো করা হয়।

দেবী মনসা বাংলার লৌকিক দেবদেবীর মধ্যে অন্যতম। ভরা বর্ষা কাটিয়ে যখন সূর্যের আলো ঝলমলে রোদ ভূমি স্পর্শ করে, শীতকালে শীত-ঘুমে যাওয়ার আগে গ্রামাঞ্চলে সাপের আনাগোনা শুরু হয়। চাষ করতে গিয়ে অনেক মানুষের জীবনহানিও ঘটে। তাই দেবী মনসাকে সন্তুষ্ট রাখতে, সংসারজীবনে দেবীর কৃপালাভের আশায় আগের দিনের রান্না করা পান্তা ভাত, সজনে শাক, ভাজাভুজি, ওলের বড়া, মাছের বিভিন্ন ধরনের পদ সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করা হয়। ওই দিন বাড়িতে টাটকা রান্নার নিয়ম নেই।

আরও পড়ুন: Biswakarma Puja 2020: পেটকাটি, চাঁদিয়াল মোমবাতি, বক্কা… জেনে নিন কেন বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে ঘুড়ি ওড়াতে হয়?

দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসব রান্নাপুজো বলে পালিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই পুজোর জন্য দৈনন্দিন ব্যবহারের উনুন গোবর জল দিয়ে পরিষ্কার করে আলপনা দিয়ে মনসা পাতা দিয়ে সাজিয়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে পুজো হয়। শহরে খুব একটা না হলেও গ্রাম বাংলায় মনসা পুজোর কদর যথেষ্ট। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন সাধারণত অমাবস্যার অন্ধকারই থাকে। সেই ঘোর অন্ধকারে বাড়ির সবাইকে জুটিয়ে সারা রাত ধরে কুটনো, বাটনা, রান্না। আর পর দিন দেবী মনসাকে নিবেদন করে তবে খাওয়া। এর পর যা কিছু উৎসব সবই হবে মহালয়ার পর থেকে, সুপর্বে। যে জন্য দেবী দুর্গার অন্যতম নাম ‘সুপর্বা’।

রান্নাপুজোয় বিভিন্ন আয়োজন এর মধ্যে, ছোলা-নারকেল দিয়ে কালো কচুর শাক এবং একই সঙ্গে আরও এক পদ ইলিশের মাথা দিয়ে। নানা রকম সব্জি ভাজা, বিশেষত গাটি কচু, শোলা কচু আর চিংড়ি-ইলিশ থাকতেই হবে। খেসারির ডাল বেটে শুকনো ঝুরি, মালপোয়াও থাকে। সঙ্গে অবশ্যই পান্তা। তবে আজকাল অনেকেই শরীর সচেতন। তাই বাসি খাওয়ার প্রথা ভেঙে দেবতাকে উৎসর্গের পর গরম গরম খাওয়ার রীতিও চালু হয়েছে।

রাঢ়বঙ্গে চৈতন্য দেবের সময় মনসাকেও দুর্গার অপর রূপ ভেবে পুজো করার বিধি প্রচলন ছিল। তাই এই পুজোতেও বলিপ্রথার প্রচলন ছিল। বর্তমানে সে প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। তবে, বিশ্বকর্মা পুজো ও সঙ্গে অরন্ধনের নিমন্ত্রণে বাঙালির অন্তরে ফুটে ওঠে আতিথ্যের ছোঁয়াচ।

আরও পড়ুন: প্রতি বছর একই তারিখে হয় বিশ্বকর্মা পুজো, এবার দিন পাল্টে যাওয়ার কারণ জেনে নিন…

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest