বাতাসে অল্প অল্প শীতের আমেজ।আর শীতের সময় ঠান্ডা জায়গায় যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। এই সময় বেরিয়ে পড়তে পারেন দার্জিলিং জেলার সিটং গ্রামের উদ্দেশ্যে । সিটং-এর পরিচিতি তার কমলালেবুর জন্য। ছবির মতো সুন্দর গ্রামের রাস্তার দু’পাশে সারি সারি কমলালেবুর গাছ। আর তা থেকে ঝুলে রয়েছে টুসটুসে কমলালেবু।
সিটং দুই ভাগে বিভক্ত— আপার ও লোয়ার সিটং। আপার সিটং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব পরিষ্কার দেখা যায়।
আপার সিটং-এ থাকার ব্যবস্থা বলতে হোম-স্টে। বড় আন্তরিক ব্যবহার সকলের। মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই সামনে হাজির হয়ে যায় সব কিছু। আর খাবার! আহা! হাসি মুখে পরিবেশনের জুড়ি মেলা ভার। তাও আবার কাঁসার থালা-বাটিতে।
আপার সিটং-এর আকর্ষণ যদি হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, তা হলে লোয়ার সিটং-এর আকর্ষণ হলো রিয়াং নদী। এমনটাই বলেন স্থানীয়রা। পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট এক জনপদের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে চঞ্চলা রিয়াং নদী। ইচ্ছে করলে, পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায় এই নদী। নদীর উপরে একাকী সুন্দর ব্রিজটি রোজই প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখে। মাঝে মাঝে কোনও পর্যটকের পা পড়ে তার শরীরে।
আরও পড়ুন: দুনিয়া দেখার ইচ্ছে থাকলে এই সুযোগ! এবার দিল্লি থেকে লন্ডন যেতে পারবেন বাসে…
এখান থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় লেপচা ফলস। তবে সে দিকে না গিয়ে, যাওয়া যায় কবিগুরুর বাড়ি দেখতে, মংপুতে। সেখান থেকে নামথিং লেকের দিকে। পাইনের জঙ্গলে ঘেরা নামথিং লেকে এই সময় একেবারেই জল থাকে না। জানা গেল, বর্ষাকাল ছাড়া এই লেক একেবারেই শুকনো থাকে। লেকের খানিক দূরেই রয়েছে অহলধারা, যেখানের শেলপু হিলস থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য ভিড় জমান পর্যটক থেকে স্থানীয়রা।
সেখান থেকে লাটপেনচর ফরেস্ট। আঁকাবাঁকা অসাধারণ জঙ্গল পথ। এখানে জোরে কথা বলা বারণ, মোবাইল বন্ধ না করলেও সাইলেন্ট মোডে রাখতে হয়। পড়ন্ত বিকেলে জঙ্গলের রূপ বেশ রহস্যময় লাগল। টিকিট কেটে সরু পায়ে চলা পথে ঢোকা যায় জঙ্গলের ভিতরে।জঙ্গলে কেমন ঝুপ করে সন্ধে নেমে আসে।!
কিছু জরুরি তথ্য—
১। বর্ষাকাল বাদে সারা বছরই ভ্রমণের জন্য আদর্শ সিটং। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারির উপরি পাওনা গাছ ভরা কমলালেবু।
২। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়িতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে সিটং পৌঁছতে। গাড়ি আগে থেকে বুক করতে পারেন। না হলে এনজেপি থেকেও ভাড়া করা যায়।
৩। এখানে থাকার জন্য হোম-স্টে রয়েছে। সব জায়গাতেই পরিষেবা বেশ ভাল। তবে জেনারেটর হয়তো সব জায়গায় পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলে ইলেকট্রিসিটির সমস্যা রয়েছে খুবই।
৪। মোবাইল টাওয়ার সব সময়ে কাজ করে না।
৫। প্রয়োজনীয় ওষুধ, টর্চ, ছাতা অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে।
৬। খাওয়াদাওয়ার বিশেষ অসুবিধা হবে না। তবে হোটেলের মতো নানাবিধ ডিশের আশা একেবারেই করা উচিত নয়।
৭। এখানে থাকা-খাওয়ার হিসেব সাধারণত হয় মাথাপিছু ও দিন হিসেবে। প্যাকেজে নয়।
আরও পড়ুন: গঙ্গা ভ্রমণের সঙ্গে মহানগরের ইতিহাস জানার সুযোগ, মাত্র ৩৯ টাকায় ‘ক্রুজ রাইড’ কলকাতায়