অমরাবতী: আমলাশোলের সনাতন মুড়ার মৃত্যু কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। অনাহার তত্ত্বে প্রশাসন অস্বীকার করলেও তলে তলে শিউরে উঠেছিলেন পুলিশ কর্তারা। সাল ২০১৮। ঘটনাস্থল ঝাড়গ্রামের জঙ্গলখাস এলাকা। ১৫ দিনের মধ্যে ৭ শবরের মৃত্যু ঘিরে ফের তোলপাড় শুরু হয় দেশে। অনাহারক্লিষ্ট, রুগ্ন-অপুষ্টিপীড়িত শবদেহ গুলি দেখে সেবারও অনাহারের বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছিল প্রশাসন। বরং শবরদের অসংযমী জীবন, খাদ্যাভাসের বৈশিষ্ট্যকেই খাড়া করা হয়েছিল মৃত্যুর প্রকৃত কারণ হিসেবে। সাল ২০১৯। অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম। মাটি খুড়ে দুই শিশুর পচা গলা শব বাইরে এনে স্তম্ভিত প্রশাসন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলল, অনাহারে মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। একটি ছেলে, অন্যটি মেয়ে। বয়স পাঁচের আশপাশে। পাকস্থলী ভর্তি মাটি দিয়ে। খিদের জ্বালা মেটাতে দলা দলা মাটি খেত তারা।
জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক আগে মা-বাবার সঙ্গে অন্ধপ্রদেশে এসেছিল ছোট্ট সন্তোষ। সঙ্গে ছিল তার আরও পাঁচ ভাই-বোন। মা-বাবার তেমন কোনও রোজগার নেই। আশ্রয়হীন সন্তোষদের দিন কাটে গাছের তলায়। আর রাতে শুতে হয় রাস্তায়।একটা সময়ে খিদে মেটাতে নেশাগ্রস্ত মা-বাবার চোখের আড়ালেই মাটি খেতে শুরু করে বছর পাঁচেকের সন্তোষ। মাটি খেত তার সমবয়সী মাসতুতো বোন বেন্নেলাও। গত ২৮ এপ্রিল মারা গিয়েছে সে। সন্তোষের মৃত্যু হয়েছিল আরও আগে, তা প্রায় ছ’মাস হয়ে গিয়েছে। তবে তেমন হইচই হয়নি মিডিয়ায়। সম্প্রতি এই মর্মান্তিক কাহিনি প্রকাশ্যে এনেছে অন্ধ্রপ্রদেশের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গোটা বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) দ্বারস্থও হয়েছেন তাঁরা। এনএইচআরসি-র কাছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি, অনাহারেই মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুদের। চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে যে অন্ধ্রপ্রদেশ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে একটা সময় সুনামের শিখর ছুঁয়েছিল, সেই প্রদীপের তলাতেই এমন অন্ধকার থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে আরও, লোকসভা ভোটের মতো গণতান্ত্রিক যজ্ঞের প্রস্তুতি ও পালন পর্বে যখন লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে, সে সময়েই অনাহারের বলি হতে হচ্ছে দেশের এক প্রান্তের শিশুদের!
অন্ধ্রের কাদিরি এলাকার পুলিশ সুপার এ ইসমাইল বলেছেন, “ঘটনার কথা আমরা জানতে পেরেছি। ওই পরিবারের কোনও থাকার জায়গা ছিল না। গাছতলায় যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছিল, তার সামনেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেওযা হয়েছিল দুই শিশুকে।” কাদিরি রেভিনিউ ডিভিশনাল অফিসার (RDO) টি অজয় কুমারের কথায়, “আমরা জানতে পেরেছি সন্তোষের মা, বাবা ছিল নেশারু। নিজেদের ছেলেমেয়েকে দেখতো না। তাদের জন্য খাবারের জোগাড়ও করতো না। এই গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে শিশুদের।” একই তত্ত্ব খাড়া করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরই বিষয়টি নিয়ে জানা যাবে বলে দায় এড়িয়ে গেছেন জেলাশাসকও।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে অচ্যুত রাও জানিয়েছেন, মহেশদের কোনও রেশন কার্ড ছিল না। ছিল না আধার কার্ডও। গোটা ঘটনার খবর জানাজানি হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। মহেশের পরিবারের জন্য রেশন কার্ডের বন্দোবস্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে তারা। ওই এলাকার বিভাগীয় রাজস্ব আধিকারিক টি অজয় কুমার তড়িঘড়ি পৌঁছন মহেশদের গ্রামে। ওই পরিবারকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আধার কার্ড করিয়ে দেওয়া হবে। হবে রেশন কার্ডের বন্দোবস্তও। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে বিভিন্ন পরিকল্পনাতেও তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। মহেশ ও নীলার বাকি চার সন্তানদের আপাতত সরকারি হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের কাছে লেখা চিঠিতে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অচ্যুত রাও দাবি করেছেন, মহেশদের বাকি সন্তানদের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করা হোক, যাতে সন্তোষ বা বেন্নেলার মতো আর কোনও প্রাণ অকালে ঝরে না যায়!