কলকাতাঃ ফাল্গুন মাসে নজিরবিহিন কালবৈশাখীর তাণ্ডবের সাক্ষী থাকল শহর। প্রভাব পড়ল রাজ্যও। সোমবার প্রথম কালবৈশাখীটি শহরের বুকে আছড়ে পড়ে ভোর ৩টে ৫৫ মিনিট নাগাদ। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৪৪ কিমি। দ্বিতীয় কালবৈশাখী শহরের বুকে আঘাত হানে ভোর ৪ টে ২৫ মিনিট নাগাদ। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিমি। শিলাবৃষ্টির জেরে রাজপথ ঢেকে গেল সাদা চাদরে।
ফাল্গুন মাসে পর পর দু’টি ঝড়ের তাণ্ডবে এবং সেই সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টির জেরে কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে কলকাতা। একই অবস্থা সল্টলেকেও। উপড়ে পড়েছে গাছ, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। গাছের ডাল ভেঙে বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা ও বিধাননগরের বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়ে রয়েছে। তবে পুরসভার আধিকারিকদের কাছে ওইসব গাছের ডাল সরিয়ে রাস্তা সাফ করার নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে।বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোডের একটি বাড়ি থেকে। কালবৈশখীর দাপটে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শহরের বেশ কিছু ট্রাফিক সিগনাল। ছিঁড়েছে ওভারহেড বিদ্যুতের তার। সল্টলেকে সেন্ট্রাল পার্কে সরস মেলার বেশকিছু স্টলও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।ঝড়-বৃষ্টির দাপটে এদিন এক ধাক্কায় কমেছে ৫ ডিগ্রি কমেছে শহরের তাপমাত্রা। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে সোমবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি কম।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সঙ্গে পূবালী হাওয়ার সংঘাতের কারণেই রাজ্য জুড়ে এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব। বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হয় গতকাল মাঝরাত থেকেই। তবে এর রেশ থাকতে পারে আরও দুই থেকে তিন দিন। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, উত্তর ভারত থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ক্রমশ এগিয়ে আসছে রাজ্যের দিকে। তার জেরে সোমবার থেকে তিন দিন বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে কমতে পারে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে আকাশ মেঘলা থাকবে, পাল্লা দিয়ে চলবে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট।শনিবার থেকেই পূর্বাভাস ছিল রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হবে। রবিবার বিকালে বৃষ্টি হয়েছে বর্ধমান, হুগলি, বাঁকুড়া ও মেদীনিপুরের একাংশে।
জোড়া কালবৈশাখীতে বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। জখম পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।দিঘা-সহ উপকূলবর্তী এলাকায় গতকাল রাতে ঝড়বৃষ্টির পর এ দিন সকাল থেকে আকাশ কিছুটা পরিষ্কার ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব। প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে।