রাফাল থেকে কোভ্যাক্সিন, দুর্নীতির জোড়া ফলায় বিদ্ধ মোদী সরকার

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

এখন মোদীকে নিয়ে চৰ্চা ফ্রান্স এবং ব্রাজিলে। সেটা অবশ্য ইতিবাচক নয়। সমালোচনা মূলক। দুই দেশই নরেন্দ্র মোদীর জমানায় হওয়া দুই চুক্তিতে দুর্নীতির খোঁজে তদন্তে নেমে আপাতত ঘুম কেড়েছে তাঁর সরকারের। ফ্রান্সে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া রাফাল-বিতর্ক অস্বস্তিতে ফেলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাঁর সরকার এবং দলকে। একই ভাবে, ব্রাজিলে কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তি ঘিরে দুর্নীতির শোরগোল শোনা যাচ্ছে। ফলে হাতে অস্ত্র পেয়েছে কংগ্রেস। যদিও এমন অস্ত্র যে এই প্রথম তারা পেল এমন নয়। কিন্তু কংগ্রেস সেগুলিকে কাজে লাগাতে পারেনি। এখন আঞ্চলিক দলগুলো অবশ্য শক্তিধর হয়ে উঠছে। আর সেটাই ভাবাচ্ছে বিজেপিকে।

আরও পড়ুন : মহাশূন্যে হাঁটলেন চীনের দুই মহাকাশচারী

ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে মোদী সরকারের করা চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্রাজ়িলে আবার ভারত বায়োটেক আইসিএমআরের কোভিড-প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে দু’টি বিষয় নিয়েই আপাতত মুখ বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার তথা বিজেপি। কিন্তু সংসদে আসন্ন অধিবেশনে এ বিষয়ে কেন্দ্রকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে বলে প্রমাদ গুনছে বিজেপি নেতৃত্ব।

গত কালই কংগ্রেস রাফাল-চুক্তিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) মারফত তদন্তের দাবি তুলেছিল। রবিবার সিপিএমও একই দাবি তুলেছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী সরকার নীরব কেন? ফ্রান্সের আদালত এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেও বিজেপি ঢাল করছে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে। সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা গেলেও, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ রাফাল-চুক্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। অবসরের পরে গগৈকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত করা হয়। সে দিকে ইঙ্গিত করে এ দিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, জেপিসির রাজ্যসভা আসনের দরকার নেই। অর্থাৎ, রাজ্যসভা আসনের ‘লোভ দেখিয়ে’ জেপিসিকে বাগে আনা যাবে না। টুইটারে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী সরকার কেন জেপিসিতে নারাজ? অপরাধবোধ? বন্ধুদের বাঁচানো? জেপিসির রাজ্যসভা আসনের দরকার নেই। নাকি এর সবকটাই ঠিক!’’

মোদী সরকারের আমলে ৩৬টি রাফাল কিনতে ৫৯ হাজার কোটি টাকার যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মূলত দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে ফ্রান্সে তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্রাজ়িলে অবশ্য ২ কোটি ডোজ় কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তিতে কোনও আর্থিক লেনদেনের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠে গিয়েছে। সেখানে বিরোধীদের অভিযোগ, কোভ্যাক্সিন ব্রাজ়িলে ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই ৩০ কোটি ডলারের ওই চুক্তি করে ফেলেছিল প্রেসিডেন্ট জ়াইর বোলসোনারোর প্রশাসন। কেন ফাইজ়ারের থেকে বেশি দামে এবং তা-ও ছাড়পত্র পাওয়ার আগে বোলসোনারো প্রশাসন কোভ্যাক্সিন কিনতে অত উৎসাহী হয়ে পড়েছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সাম্বার দেশে। চাপের মুখে চুক্তি বাতিল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে দুর্নীতি, ঘুষ, টাকার লেনদেন ছিল কি না, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।

ভারত বায়োটেকের দাবি, নিয়ম মেনেই চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়েও মোদী সরকারের জবাবদিহি চাইছে কংগ্রেস। মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের বক্তব্য, ‘‘শুধু বেসরকারি সংস্থা ভারত বায়োটেক নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর-ও টিকা (কোভ্যাক্সিন) তৈরিতে অর্থ ঢেলেছে। ফলে করদাতাদের টাকা এখানে জড়িত। তা কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটা হচ্ছে কি না, তার তদন্ত দরকার। সরকারকেও মুখ খুলতে হবে।

রাফাল নিয়ে কংগ্রেসের আর এক মুখপাত্র পবন খেরার প্রশ্ন, ‘‘ফ্রান্সে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু ভারতে রাফাল কেনার জন্য করদাতাদের টাকা খরচ হয়েছে। তা হলে এ দেশে কেন তদন্ত হবে না?’’ রাফাল-চুক্তিতে শিল্পপতি অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। খেরার প্রশ্ন, ‘‘দেশের নিরাপত্তা নিয়ে বাগাড়ম্বর করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন নিজের শিল্পপতি বন্ধুদের ফায়দা পাইয়ে দেওয়ার সময়ে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে গুরুত্ব দেন না?’’ এ বিষয়ে সংসদে কংগ্রেস সরব হবে বুঝিয়ে আজ রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে জেপিসি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

এই তোপের মুখে মোদী সরকার এখনও প্রায় ‘স্পিকটি নট’। বিজেপি মুখপাত্ররা রাহুলকে পাল্টা আক্রমণ করছেন। কিন্তু সরকারের কেউ আপাতত মুখ না-খোলার নীতি নিয়েছেন। বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিন্‌হার অভিযোগ, ‘‘রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং দেশের অপমান করছেন।’’

সামনে ইউপি নির্বাচন। বাংলায় পরাজয় হয়েছে বিজেপির। আস্ফালনই সার হয়েছে শাহ-মোদীর। তৃণমূল বিজেপির রাজনীতির ফানুস ফুটো করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতে মুসলিমদের যে গলা ছেড়ে গলা দিয়ে হিন্দু সেন্টিমেন্ট কব্জা করবে সেই উপায়ও বন্ধ। কারণ ভাগবত নিজে তা নিষেধ করেছেন। বিজেপি মানেই বিদ্বেষ এই ভাবমূর্তি দূর করতে চাইছে সংঘ। ফলে এই মুহূর্তে চাপ বাড়ছে বিজেপির।

আরও পড়ুন : কোলন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেন পোপ ফ্রান্সিস

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest