কয়লা কাণ্ডে প্রথম গ্রেপ্তারি সিবিআইয়ের (CBI)। আসানসোল-বাঁকুড়া থেকে গ্রেপ্তার অনুপ মাজি ওরফে লালা ঘনিষ্ঠ চার ব্যবসায়ী। ধৃতদের নাম নারায়ণ নন্দ, গুরুপদ মাজি, নিরোদ মণ্ডল ও জয়দেব মণ্ডল।
বেশ কয়েকমাস ধরেই কয়লা কাণ্ডের (Coal Scam) তদন্তে নড়েচড়ে বসেছে সিবিআই। কলকাতা, বাঁকুড়া, আসানসোল-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। কিছুদিন আগে কয়লা পাচারচক্রের মাথা অনুপ মাজি ওরফে লালার শ্বশুরবাড়িতে হানা দেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সেখান থেকেই মেলে একাধিক সূত্র। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ধৃত জয়দেব মণ্ডলের আসানসোলের বাড়িতে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি বলিতোড়ায় লালা ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গুরুপদ মাজির বাড়ি ও অফিস সমেত চার জায়গায় হানা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা।
প্রায় এক বছর হতে চলল কয়লাকাণ্ডের তদন্তভার হাতে তুলে নিয়েছে সিবিআই। তবে এতদিন ঢেলে তদন্ত করলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ। এই প্রথম কয়লাকাণ্ডে গ্রেফতারি। তাও একই সঙ্গে চারজন। অভিযোগ, প্রত্যেকে লালার সিন্ডিকেটে যুক্ত। অর্থাৎ, কয়লা কোথায় পাচার করা হবে। কত টাকায় রফা হবে, কে কী ভাবে কয়লার টাকা দেবেন বা নেবেন সবটাই নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ধৃতদের। সিন্ডিকেটের একেবারে শীর্ষ পদে ছিলেন এই জয়দেব, নীরদ, নারায়ণ, গুরুপদ।
অভিযোগ, শুধু সিন্ডিকেটই নয়, লালার আরও একাধিক বেআইনি ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন চারজন। মূলত, এই ব্যবসায় কয়লা পাচারের টাকা খাটানো হতো বলে অভিযোগ। সেই ব্যবসায় ডিরেক্টর পদে নাম রয়েছে চারজনের। সিবিআই এর আগেও বহুবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাঁদের। কোনও বারই সন্তোষজনক জবাব পায়নি।
সোমবার বেশ কিছু প্রশ্নের জবাবে মুখই খোলেননি এই চার অভিযুক্ত। এরপরই তাঁদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হবে। সিবিআইয়ের তরফে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জিও জানানো হবে বলে সূত্রের খবর। এই চারজনকে জেরা করে অনুপ মাজি ও তাঁর কয়লার কারবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
জানা গিয়েছিল, এই দুই ব্যক্তিই কয়লা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে, বাম আমলে কয়লা পাচারের গোটা সাম্রাজ্য ছিল জয়দেব মণ্ডলের হাতে। তারপর বাম জমানা শেষ হয়ে যাওয়ায় কিছুইটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন ওই ব্যবসায়ী।
২০১১ সালে কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে জয়দেবকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু হাতিয়ারও বাজেয়াপ্ত করা হয়। তারপর জামিনে মুক্তি পেয়ে যান তিনি। এদিকে, পুরুলিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে গুরুপদ মাজির। লালার ব্যবসায় অংশীদার হওয়ার সুবাদেই এই প্রতিপত্তি বলে মনে করেন অনেকে। এছাড়া, বাঁকুড়ার মেজিয়ার তারাপুরের অমিয় স্টিল ফ্যাক্টরিতে হানা দিয়েছেন গোয়েন্দারা বলে খবর। এই ফ্যাক্টরিটির অফিস হচ্ছে কলকাতার লেনিন সরণিতে।