সৈয়দ আলি মাসুদ
মনটা ভারি হয়েছিল গোটা দিন। ৩৪ বছরের একটা তাজা ছেলে এইভাবে চলে গেল! আমাদের কেউ ছিল না ও। কিন্তু মন তা মানছিল না। কেবল মনে হয়েছে কাছের কাউকে হারালাম। কেবল আমার নয়, গোটা দেশের অনুভুতিই এমন ছিল। কার কথা বলছি বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। ঠিক ধরেছেন আমি রাজপুতের কথাই বলছি।
চামচেবাজির এই ইঁদুর দৌড়ে সুশান্ত সিং নাম লেখাইনি। ‘ভক্ত’ সাজেনি। দলের নেতা কিংবা দেশের নেতার প্রতি গদগদ ভক্তি প্রদর্শন করেনি। নিজের খেয়ালে বেঁচেছে। নিজের খেয়ালেই চলে গেল। ওর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ওর মৃত্যু আসলে ওর নিজের সৃজন। নিজের তৈরী। ও কেবল তারকা হয়ে ওঠেনি। ও আসলে তারাদের প্রেমে পড়েছিল। তাই তো এমন করে আকাশভর্তি তারাদের দলে মিশে গেল।
আরও পড়ুন : ৭ বছর আগে সুইসাইড নোটে কি লিখেছিলেন ‘নিঃশব্দ’ অভিনেত্রী জিয়া খান? শেষ মেসেজই বা কি ছিল
আত্মঘাতীদের প্রতি আমার কোনো সিম্প্যাথি নেই। জীবন থেকে এমন করে পালিয়ে যাওয়ার আমি ঘোর বিরোধী। জীবন একটাই। মর্ত্যুও একটাই। তবু যা আসবেই, তাকে সেধে এমন বরণ কেন? তীব্র হতাশা নাকি ছেলেটিকে ঘিরে ধরেছিল। জীবনকে সে শূন্য মনে করতে শুরু করেছিল। নিজের বানানো স্বপ্ন এবং বাস্তবকে মেলাতে পারেনি ও।
মানুষ যখন জীবনে কেবল পেতে শুরু করে, তখন তা তার অভ্যাস হয়ে যায়। ভরা পেটে যেমন খাবার স্বাদ পাওয়া যায়না এ খানিকটা তেমনই। প্রতিদিন অগণিত মানুষ জীবনের কঠিন লড়াই লড়ছে কেবল দুমোঠো খাবার জন্য। কেবল পেট ভরে খেতে গিয়ে কত মানুষ বেইজ্জ্ত হয় তার হিসাব নেই। কিন্তু তারা জীবন থেকে সকলে পালিয়ে যাচ্ছে না। লড়ছে নিজের মত করে। আসলে মানুষ কেবল নিজের জন্য বাঁচে না। অন্যের জন্য বাঁচতে হয়। বহু সময় রোগী বুঝে যান তাঁর ক্যান্সার হয়েছে। হাতে সময় নেই। বাড়ির লোক তখন যেমন তার কাছে বিষয়টি লুকোয়। তিনিও তেমনি বাড়ির লোকের কাছে তা লুকিয়ে রাখেন। বাড়ির লোক তার অভাবে যে কি কষ্ট পাবে তিনি তা বুঝেও না বোঝার ভান করেন। অভাবের সংসারে সামান্য মুড়ি চিবিয়ে মা বলে ‘আজ খিদে নেই, তোরা খা।’ এটাই জীবন। এরা অধিকাংশই সুশান্তের মত পালিয়ে যায় না এই দূর্লভ জীবন থেকে।
সুশান্তের আত্মহত্যার পর কঙ্গনা রানাওয়াত তাঁর স্বভাব ও রুচি মোতাবেক বয়ানবাজি শুরু করেছেন। কার কার শুল ও ফাঁসি হয় উচিত তার লিস্টি বানাচ্ছেন। প্রকাশ্যে গালাগালি করলে সবখানেই ভিড় জমে। সেলেবদের যদি নেট পাড়ায় গাল দেওয়া যায় তবে তো কথাই নেই। ঠান্ডা ঘরে বসে সংগত করার লোকের অভাব হয় না। সুশান্তের আত্মহত্যা দায় কাদের কাদের ঘাড়ে চাপানো যায় তা নিয়ে রানাওয়াত আজ দিন তিনেক দুটি চোখের পাতা এক করতে পারছে না।
বলিউডের নেপটিজমের বাপান্ত করতে তিনি মূর্তিময়ী বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আরে বাবা আমার যদি একটা দোকান থাকে তাহলে আমি তো প্রথমে আমার ছেলেকেই দিয়ে যাব।এটা তো সার কথা। তাছাড়া সুশান্তের হাতে এখনও ৭ টি ছবি ছিল। তাই তার মৃত্যুর জন্য করণ জোহর, সলমন খান কিংবা আলিয়া ভাটকে দায়ী করা যায় না। এটাও স্বীকার করতে হবে অসম্ভব প্রতিভাবান এই ছেলেটিকে কিন্তু বলিউড জায়গা ছেড়ে দিয়েছিল। সারা ভারতে যার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়েছে তার পিছনে সেই বলিউড। প্রতিদিন এমন বহু ছেলে আত্মঘাতী হয়। নিজের লোক বুক ফাটিয়ে কাঁদে। বাকিরা কেউ সহানুভূতি দেখায় না। তারাও অভিমানেই মরে। অসম্ভব মেধাবী সুশান্তকে গোটা দেশ তথা বিশ্ব বলিউডের দৌলতেই চিনেছিল। তাছাড়া নেপোটিজম দিয়ে সবটা হয় না। দেখুন না অভিষেক বচ্চনকেই। তা খুঁটির জোর কি কম? সাফল্য কোথায়? তাকে তো কম কথা মিডিয়া শোনায় না। তা বলে কি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে হবে ?
ব্যার্থতা জীবনের অঙ্গ। অমিতাভ বচ্চনকে ব্যার্থতার মুখে পড়তে হয়নি? তাছাড়া কঙ্গনা নিজে যে এত গলা কাঁপাচ্ছেন, আপনি কজনকে হেল্প করেছেন? এটা ঠিক যে নেতা এবং অভিনেতারা অনেকেই ফুটেজ খাওয়ার সুযোগ মিস করতে চান না। কিন্তু তা বলে একটা ন্যূনতম সৌজন্য থাকবে না ?
যাক, চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। যেটা বলার সেটা হল সুশান্ত এক নন। তার মত বহু মানুষ চরম অবসাদের ভুগছেন। তার মধ্যে একটা বড় অংশ হল তরুণ প্রজন্ম। সামান্য পান থেকে চুন খসলে দায়িত্ত্বজ্ঞানহীন স্বার্থপরের মত এরা পালাতে চায়। তাদের জন্য আমার অনুরোধ সাফল্যের নেশায় জীবনকে অবহেলা কোরো না। জীবন অনেকে বড়। তা বাজারের ছকে দেওয়া সাফল্যের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নেই। (অভিমত ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন : সুশান্তের আত্মহত্যা উস্কে দিল জিয়া খানের স্মৃতি, কি কারণে চরম পথ বেছে নিতে বাধ্য হন তিনি…