সৈয়দ আলি মাসুদ
২৪ এপ্রিল থেকে সম্ভবত রোজা শুরু হচ্ছে । যার আরবি প্রতিশব্দ সিয়াম। বাংলায় রোজার যথাযত প্রতিশব্দ নেই । কেউ কেউ সহজ করে বোঝানোর জন্য উপবাস বলে থাকেন। তবে উপবাস ও রোজার মধ্যে কিছু ফারাক রয়েছে। নিছক পানাহার বর্জনের নাম রোজা নয়।
ইসলামী ক্যালেন্ডার চলে চন্দ্রমাসে। সে কারণে সৌর ক্যালেন্ডারের সঙ্গে তার ফারাক থাকে। রোজা সবসময় আরবি ক্যালেন্ডার রমজান মাসেই হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা সৌর ক্যালেন্ডারে তাকে ভিন্ন ভিন্ন মাসে পেয়ে থাকি। কখনও প্রচণ্ড গরম তো কখনও বর্ষা। কখনও বসন্ত তো কখনও শীত। চন্দ্র ক্যালেন্ডারের রমজান সৌর ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন মাসে ঘুরতে থাকে।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কের আবহেই আজ বিশ্বজুড়ে পৃথিবী রক্ষার শপথ…
করুণাময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য স্বেচ্ছায় পানাহার বর্জনের নাম রোজা । আল্লাহর পরিবর্তে কি ঈশ্বর বলা যায় না। এ প্রশ্ন তোলা সঙ্গত। আসলে ইসলামি মতে আল্লাহ পুরুষ কিংবা স্ত্রী নন। তাকে চেনা এই দুই লিঙ্গের মধ্যে ফেলা যায় না। ভগবানের স্ত্রী লিঙ্গ রয়েছে। তা হল ভগবতী। ঈশ্বরেরও স্ত্রী লিঙ্গ রয়েছে তা হল ঈশ্বরী। তাই আল্লাহর প্রতিশব্দ আল্লাহই। যদিও ফার্সিতে আল্লাহকে খোদা বলে উল্লেখ যে করা যে হয়নি তা নয়। তবে তার স্ত্রী বাচক শব্দ তৈরি করা হয়নি।
অনেকে রোজাকে এমনভাবে তুলে ধরেন যাতে রোজার থেকে বাহ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ইফতার। রোজার সঙ্গে পাকস্থলীর সম্পর্ক নেই। যদিও রোজা নিয়ে কথা উঠলেই অনেকেই প্রথমে ইফতারের কথায় চলে আসেন। যেন সন্ধে বেলায় আকণ্ঠ খাদ্য পানীয়ও গ্রহণের জন্যই রোজা। সন্ধ্যায় যদি রোজা ভঙ্গ হয়। তাহলে রোজা হল কখন। এ প্রশ্ন অত্যন্ত সঙ্গত।
আর হেঁয়ালি না বাড়িয়ে মূল কথাতে আসা যাক। রোজা হল সমস্ত কু প্রবৃত্তি নিজেকে সরিয়ে রাখার নাম। প্রবৃত্তি মানেই তা মানসিক। তাই রোজা একান্তভাবেই মানসিক অনুশীলন। সারা দিন কুচিন্তা করে পানাহার বর্জন করে তাহলে তাকে উপবাস বলা যেতে পারে কিন্তু রোজা বলা যাবে না। এক কথায় একজন মুসলিমের কাছে রোজা মানুষ হবার সিঁড়ি।
রোজা রেখে যেমন পানাহার করা যায় না। তেমনই কু চিন্তাও করা যায় না। কারও খারাপ চাওয়া যায় না। ঈর্ষা করা যায় না। অশ্লীলতা করা যায় না। অহং প্রকাশ করা যায় না। ঔদ্ধত্ব প্রকাশ চলে না। ঝগড়া-মারামারি চলে না। একথায় খাদ্য-পানীয় বর্জনের সঙ্গে যা খারাপ তা বর্জন করার নাম রোজা।
যদি তা মানুষ হওয়ার সিঁড়ি হয়ে থাকে তাহলে বছরে একমাস কেন? রোজা তো দিনলিপি হওয়া উচিত। কথাখানি ফেলে দেওয়া যায় না। কিন্তু তা যুক্তির কথা নয়। ছেলে পুলের সারা বছর পড়াশুনা করে।কিন্তু পরীক্ষা তো প্রতিদিন হয় না। পরীক্ষার প্রয়োজন পরে পড়ুয়ারাদের মেধা বিচারের জন্য। একই বই সকলে পড়ে। কিন্তু সকলে প্রথম হয় না। কেউ কেউ তো পাশ পর্যন্ত করতে পারে না। তাতে কি পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার যুক্তি খুব কাজের বলে বিবেচিত হয়? তা হয় না। তেমনি বহু মুসলিমের রোজা হয়ত নিছক উপবাস, কিন্তু তাতে রোজার গুরুত্ব কমে না। বছরে একবার রোজা এলেও তা আসলে বিশ্বাসী মুসলিমের কাছে সারা বছরের পাথেয়।
নুড়ি পাথরের সংখ্যা চিরকালই হীরের তুলনায় বেশি। তাতেই হীরের গুরুত্ব। তেমন প্রবৃত্তিকে বশীভূত করে রোজার প্রকৃত পরিচয় বহনকারী মুলমানের সংখ্যা কম। তাতে রোজার গুরুত্ব কমে না। হাতে গোনা মেধাবী ছেলেরা স্কলারশিপ পায়। তাতে কি স্কলারশিপের গুরুত্ব কমে? রোজাও প্রকত মুসলমানের কাছে তেমনই।
আরও পড়ুন: অচেনা করোনা আতঙ্ক হাসপাতাল ছাড়া করেছে মুমূর্ষু রোগীদের