আমরা সাধারণত ক্রিসমাস নিয়ে যে সমস্ত পোস্ট শেয়ার করি বা আলোচনা এইই ঘটনাগুলি তার থেকে একেবারেই আলাদা। তাই একেবারে ক্রিসমাসের বেসিক গল্পের বাইরে গিয়ে যদি অফবিট ক্রিসমাস সম্পর্কে জানতে চান তবে আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনাদের জন্য। ক্রিসমাস বা বড়দিনর এই বিষয়গুলি সচরাচর আমাদের অনেকেরই চোখে পড়েনি। জেনে নেওয়া যাক ক্রিসমাস সম্বন্ধে এই বিশেষ বিষয়গুলি-
- ক্রিসমাসের দিন আমরা যীশু খ্রিস্টের জন্ম উদযাপন করি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যীশুর জন্ম তারিখটি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গিয়েছে। বাইবেলের পাতায় ২৫ ডিসেম্বরের কোনও উল্লেখ নেই। বহু ঐতিহাসিকদের মতে, যীশুর জন্ম গ্রহণ এই সময় নয় বরং বসন্ত কালে। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন যে এই তারিখটি মূলত বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ এটি স্যাটার্নালিয়ার পৌত্তলিক উত্সবের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল, যা উদযাপন এবং উপহার দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি দেবতা শনিকে সম্মানিত করার একটি প্রথা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়।
- ক্রিসমাস ট্রির ঐতিহ্য প্রাচীন মিশরীয় এবং রোমানদের সময় থেকেই ছিল, যারা শীতকালীন সময় চিরসবুজ দিয়ে সজ্জিত করে রাখত বসন্ত ফেরার আশায় । তাই আপনি যদি আপনার ঘরগুলিকে সবুজ গাছ, পুষ্পস্তবক বা চিরসবুজ মালা দিয়ে সাজান, এর অর্থ এই যে আপনি এই ঐতিহাসিক দিনগুলির সম্মান করছেন।
- বড়দিনের সময় যখন ঘর সাজানোর জন্য বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রি নিয়ে আসেন বা তাতে আলো দিয়ে সাজান, কখনও কি ভেবেছেন এই গাছটি কিভাবে ক্রিসমাসের একটি অঙ্গ হয়ে উঠল! এই গাছ প্রথম ১৮৪৮ সালে ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজের একটি খবরের কাগজে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। জার্মানির প্রিন্স অ্যালবার্ট এবং তাঁর স্ত্রী ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়া ক্রিসমাসের সময় এমন একটি গাছের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলেন। তার পর থেকেই এটিই একটি ট্রেন্ডে পরিনত হয়।
আরও পড়ুন: কৃত্রিম রূপটানের অপরাধ, ‘বিউটি কনটেস্ট’ থেকে ব্যাড বাদ ৪০ উট!
- আধুনিককালে এই চরিত্রগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় হল লাল পোশাক পরিহিত পৌরাণিক উপহার প্রদানকারী সান্টাক্লজ। সান্টাক্লজের উৎস একাধিক।সান্টাক্লজ নামটি ডাচ সিন্টারক্লাস নামের অপভ্রংশ; যার সাধারণ অর্থ সেন্ট নিকোলাস। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর নিকোলাস ছিলেন অধুনা তুরস্কের মিরার বিশপ। অন্যান্য সন্তসুলভ অবদানগুলির পাশাপাশি শিশুদের পরিচর্যা, দয়া ও উপহার প্রদানের জন্য তিনি খ্যাতনামা ছিলেন। অনেক দেশে তাঁর সম্মানে ৬ ডিসেম্বর উপহার আদানপ্রদানের মাধ্যমে উৎসব পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, বিশপের পোশাক পরিহিত নিকোলাস তাঁর সহকারীদের সহায়তায় বিগত এক বছরে শিশুদের আচরণের খোঁজখবর নিতেন; তারপর স্থির করতেন সেই শিশু উপহার পাওয়ার যোগ্য কিনা। খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সেন্ট নিকোলাসের নাম নেদারল্যান্ডে পরিচিতি লাভ করে এবং মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে তাঁর নামে উপহার আদানপ্রদানের ঐতিহ্য চালু হয়ে যায়।
- অনেক পরিবারেই বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ পারিবারিক ভোজসভা আয়োজিত হয়। ভোজসভার খাদ্যতালিকা অবশ্য এক এক দেশে এক এক রকমের হয়। সিসিলি প্রভৃতি কয়েকটি অঞ্চলে খ্রিষ্টমাসের পূর্বসন্ধ্যায় যে ভোজসভা আয়োজিত হয় তাতে পরিবেশিত হয় বারো রকমের মাছ। ইংল্যান্ড ও ইংরেজি সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবান্বিত দেশগুলিতে সাধারণ বড়দিন ভোজসভার পদে দেখা যায় টার্কি (উত্তর আমেরিকা থেকে আনীত), আলু, শাকসবজি, সসেজ ও গ্রেভি; এছাড়াও থাকে খ্রিষ্টমাস পুডিং, মিন্স পাই ও ফ্রুট কেক। পোল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের ভোজে মাছের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়; তবে এই সব অঞ্চলে ভেড়ার মাংসের মতো অত্যধিক-চর্বিওয়ালা মাংসের ব্যবহারও বাড়ছে। জার্মানি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় হাঁস ও শূকরের মাংস বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া প্রায় সারা বিশ্বেই গোমাংস, হ্যাম ও মুরগির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফিলিপিনসের ভোজসভার প্রধান খাদ্য হল হ্যাম।
আরও পড়ুন: বিক্রি করতে পারছেন না ‘কাঁচা বাদাম’! ভুবন বাদ্যকরকে ২০ হাজার টাকা দিলেন মদন মিত্র