ওয়েব ডেস্ক: এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি দিল্লি। রাজধানীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে হিংসার চিহ্ন। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের থাবা বসেছে রাজধানীর উপর। ইতিমধ্যেই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের সন্ধান মিলেছে দিল্লিতে। এবার সেই ব্যক্তির সন্তানরা যেই স্কুলে পড়ত সেটিকে তিনদিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশিকা বেরোতেই আতঙ্ক বেড়ে গিয়েছে আরও কয়েক গুণ। স্কুলের অন্তত ৪০ জন পড়ুয়াকে ভর্তি করা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে। ২৮ দিনের জন্য তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।
ইতালি-ফেরত দিল্লির বাসিন্দার থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করা হয়েছিল। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। গৌতম বুদ্ধ নগরের চিফ মেডিক্যাল অফিসার অনুরাগ ভার্গব জানিয়েছেন, ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় আজ থেকে দু’দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নয়ডার ওই স্কুল। পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষাও। পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই স্কুল খোলা হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই স্ক্রিনিং করতে গিয়েই চমকে যান স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। দেখা যায় ওই স্কুলেরই এক পড়ুয়ার অভিভাবকের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে সংক্রমণ। তা সত্ত্বেও অভিভাবকের থেকে বাচ্চার শরীরেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই শিশুটির সহপাঠীদের নিয়ে মোট ৪০ জনকে ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।
নয়ডার স্কুলের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, এক অভিভাবক সিওভিডি-১৯ আক্রান্ত। তাঁর সন্তানের শরীরেও ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা প্রবল। যেহেতু সিওভিডি মানুষের থেকেই বেশি ছড়াচ্ছে তাই ওই বাচ্চাটির বাকি বন্ধুদেরও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। ৪০ জন পড়ুয়ার রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট না আসা অবধি তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।সিএমও অনুরাগ ভার্গব বলেছেন, মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে স্কুলে। পড়ুয়ারা ছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুলের কর্মচারীদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে। প্রতিটি ক্লাসঘর স্যানিটাইজ করা হবে।
আরও পড়ুন: করোনা সারবে গোবর এবং গোমূত্রে, আজব দাবি অসমের বিজেপি বিধায়কের
এ দিকে, আতঙ্কের কোনও কারণ নেই, সকলে মিলে একসঙ্গে লড়তে হবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। এমনই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার দুপুরে এ বিষয়ে একের পর এক টুইট করেন তিনি। জানান, আত্মরক্ষার জন্য কয়েকটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মেনে চলতে হবে। তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে তিনি একাধিক মন্ত্রকের সঙ্গে ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছেন। প্রস্তুতির প্রসঙ্গে নানারকম বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের বিমানবন্দরে পরীক্ষা করার বিষয়টিও।
Had an extensive review regarding preparedness on the COVID-19 Novel Coronavirus. Different ministries & states are working together, from screening people arriving in India to providing prompt medical attention.
— Narendra Modi (@narendramodi) March 3, 2020
নানারকম আলোচনার পাশাপাশি একটি ছবিও টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ছবিতে তিনি মৌলিক প্রতিরক্ষার জন্য কী কী করা যেতে পারে সেই দিকটি চিহ্নিত করেছেন। সেই পদ্ধতি ফলা করতে এই অসুখের সংক্রমণকে রোখা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘনঘন হাত ধোয়া, হাঁচি বা কাশির সময় মুখ-নাক ঢেকে রাখা– এই সব।
করোনা ভাইরাসে এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ৩০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে শুধু মাত্র চিনেই মারা গিয়েছে ২৯০০ জন। আক্রান্ত ৮৮০০০। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। আমেরিকায় করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর পরেই একাধিক দেশে মার্কিনিদের সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইতালি, ইরান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই চারদেশের নাগরিকদের এ দেশে আসার ভিসা বাতিল করেছে দিল্লি।