The News Nest: তারা সবসময় নামাযের টুপি পরে থাকে, ওরা খুব ঝগড়াপ্রিয়, সবাই দাড়ি রাখে, চোখে সুরমা লাগায়, পাঞ্জাবি পরে থাকে, কোনও মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র খুঁজতে চেষ্টা করে না। হাঙ্গামা, খারাপ কাজ, নিষ্ঠুরতা সবই মুসলিমদের কাজ। ফিল্মে ওরা শুধু খলনায়ক চরিত্রেই মানানসই। ওরা এত খারাপ যে, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মানুষের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়। ওরা এমনই, তাই ইতিহাসের তােয়াক্কা না করেই সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ‘পদ্মাবত’ সিনেমায় নিষ্ঠুর, নরমাংসভােজী, অসভ্যতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। কিংবা, বর্তমানে দুবাই, মুম্বইয়ের মাফিয়া ডন। মুসলিমরা ইতিহাসের আয়নায় অসভ্য, নিষ্ঠুর, অত্যাচারী । কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ও আশ্চর্যজনকভাবে মুসলিমরা আসলে যেমন ঠিক তেমন ভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দিরিলিস আরতুগ্রুল’ নামক ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে।
এই গল্প আসলে তুরস্কের উসমানিয়া সাম্রাজ্যের ইতিহাস। গল্প গড়ে উঠেছে আরতুগ্রুল নাম একজন মুসলিম বীর যােদ্ধাকে ঘিরে যে তরবারি চালিয়ে খ্রিস্টান নাইট বা দুর্ধর্ষ মােঙ্গলদের পর্যন্ত পরাস্ত করতে পারে, যে অসাধারণ মানবিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে গােষ্ঠীর সংকট নিরসন করে, সেই আবার গভীরভাবে একজনকে ভালােবাসতেও পারে।
ত্রয়ােদশ শতকে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হওয়ার পূর্বে সুলতান উসমানের পিতা আরতুগ্রুলের অকুতােভয় লড়াকু জীবনই প্রাণ সঞ্চার করেছে এই গোটা ওয়েব সিরিজ জুড়ে। ভিএফএক্স , এসএমএক্স, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয় দক্ষতা আর কাহিনির অসামান্য বুনােট স্মার্টফোন বা টিভির পর্দায় দর্শকদের আটকে রাখছে মিষ্টিতে বসে থাকা মাছির মতো! মধ্যপ্রাচ্য,দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ছড়িয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতেও এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশ্চাত্যের পপ কালচারকে হারিয়ে এরদোয়ানের দেশে তৈরি হওয়া টিভি সিরিজ টুকে পড়েছে সেখানেও। বিশ্বের ৬০ টির’ও বেশি দেশের কোটি কোটি মানুষ আরতুগ্রুল সিরিজ-জ্বরে আক্রান্ত।
আরও পড়ুন: স্বজনপোষণের বাইরে বেরোনোর চেষ্টা! ‘বেল বটম’- সিনেমায় বাণীর সঙ্গে রোম্যান্স করবেন অক্ষয়
জনপ্রিয়তায় বিশ্বের সব সিরিজকে ছাপিয়ে গেছে আরতুগ্রুল। মুসলিম ইতিহাসকে উপজীব্য করে বেশকিছু চলচ্চিত্র ও সিরিজ (মেসেজ, মুহাম্মদ দ্য মেসেঞ্জার অব গড) থেকে শুরু করে খিলােফতে রাশিদিন (ওমর সিরিজ বেশ জনপ্রিয়), সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর উপর সিরিজ রয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘দ্য মেসেজ’ ভালোই জনশ্রিয়। তবে দর্শকদের চাহিদার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সব সিনেমা ও সিরিজকে ছাড়িয়ে গেছে দিরিলিস আরতুগ্রুল। কারণ কাহিনির সঙ্গে সঙ্গে প্রোডাকশনও খুবই উন্নতমানের, যা যে – কোনও বয়সের দর্শককে স্ক্রিনে আটকে রাখতে সমর্থ হয়েছে। আর এই সময়টিতে স্ক্রিনে মুসলিমদের উপস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে এনেছে।
সাহসিকতার সঙ্গে সঙ্গে আধ্যায়িকতার মিশেল তার জীবনকে মহিমাণ্বিত করে তুলেছে। বর্তমান প্রজন্মের যুবক দেখছে সর্বত্রই মুসলিমরা চাপে পড়ে পর্যদূস্ত। করােনা ছড়ানাের ভুয়ো অভিযোগ তুলে তাদের হেনস্থা করছে । তখন সেই পরিস্থিতিতে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতে বসা যুবকরা নিজের প্রতিনিধিত্ব খুঁজে পেতে চেষ্টা করছে এই কাহিনিতে। এই কাহিনিতেও কুরতুগলু , কোচাবাঁশ , নাশেরের মত স্বার্থপর , কুটিল চক্রান্তকারী মুসলিম রয়েছে , কিন্তু জয় সেই ভালাে মুসলিমদেরই । কোনওভাবেই বিকৃত করা হয়নি ঈমানদার মুসলিম চরিত্রকে। মুসলিমরাও প্রোটাগনিস্ট হতে পারে, তা এই সিরিজ প্রমাণ করে দিয়েছে।
ঐতিহাসিক এই সিরিজে আরতুগ্রুলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তুর্কি অভিনেতা এনজিন আলতান দোয়াজতান। তার অনবদ্য অভিনয়ও দিরিলিস আরতুগ্রুলের দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তার সহযােগী বামসি, তারগুত , দোয়ান চরিত্রগুলি দর্শকদের মন জয় করেছে। সমকালীন দার্শনিক ইবনে আরাবির উপস্থিতি এর অনন্য বৈশিষ্ট তুলে ধরেছে। তুর্কি মুসলিমদের পরিচয়ের , হারানাে ইতিহাসের স্বরূপ সন্ধানও এতে করা হয়েছে। মেহমেত বােজশখ অসাধারণ একটি কাজ উপহার দিয়েছেন। নারী চরিত্রগুলিকে তিনি অসাধারণ সাহসী ও নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন দেখিয়েছেন। বাংলা , হিন্দি সিরিয়ালেতে তারা কান্না ও কুটিল চক্রান্ত করে সময় কাটায় না । তারা প্রয়োজনে তরবারি চালাতে পারে ও গোষ্ঠী পরিচালনা করতে পারে। হাইমে মা , হালিমা সুলতানা চরিত্রগুলি এই জন্যই জনমনে জায়গা করে নিয়েছে।
পাশ্চাত্য ভাবধারার বাইরে গিয়ে শালীনতা ও নৈতিক মান বজায় রেখে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে বিশাল আর্থিক সাফল্যও যে পাওয়া যায়, তারও প্রমাণ এই ঐতিহাসিক ড্রামা সিরিজ। ভালাে প্রোডাকশন, স্টোরিলাইন মন কাড়তে পারে দর্শকের। মুসলিমদের কাহিনি বা চরিত্র নিয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র বা সিরিয়াল নির্মাণ করা যায় না, এমন পূর্বধারণাকেও ভ্রান্ত প্রমাণ করেছে ‘দিরিলিসি আরতুগ্রুল‘।
আরও পড়ুন: শুধু আটপৌরে বাঙালি নন, জয়া অন্য পোশাকেও দারুণ, দেখুন অভিনেত্রীর অন্য রূপ