দিন দুই আগেই ক্ষমতাসীন সরকারকে ফেলে দিয়ে প্রশাসনের দখল নিয়েছে সেনাবাহিনী। মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে গোটা বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। এরপরই দেশে ফেসবুক নিষিদ্ধ করল জুন্টা সরকার।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ দিন অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা আং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মায়ানমারে নাগরিক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। তাতে সাড়া দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশটির শত শত চিকিৎসাকর্মী। দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজিয়ে আর থালা-বাসন বাজিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাগরিকেরা। অসহযোগ আন্দোলনকে একজোট করতে খোলা হয় একটি ফেসবুক পেজ।
মায়ানমারে ফেসবুক খুবই জনপ্রিয়। সু চি সরকার এত দিন ফেসবুকেই যাবতীয় সরকারি ঘোষণা করত। ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি বাসিন্দার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বুধবার রাত থেকেই ইন্টারনেট পরিষেবায় ঝামেলা দেখা যাচ্ছিল। তার পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার ‘টেলিনর মায়ানমার’ জানিয়েছে, যোগাযোগ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে মোবাইল অপারেটর এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের ফেসবুক সাময়িক ভাবে বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নরওয়ের সংস্থার শাখা ‘টেলিনর মায়ানমার’ জানিয়েছে, তারা মনে করে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন, যদিও নির্দেশ মানতে বাধ্য।
আরও পড়ুন: মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান, সাতসকালেই আটক সু চি-সহ বহু রাজনীতিক, এক বছরের জন্য দেশের দখল নিল সেনা
ফেসবুকের তরফে সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘মায়ানমারের টেলিকম প্রোভাইডারদের ফেসবুক ব্লক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ফেসবুক সংযোগ দ্রুত ফেরানো হোক। যাতে মানুষ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, গুরুত্বপূর্ণ খবর পান।’’
ফেসবুক ব্লক করে অবশ্য হালে পানি পাচ্ছে না সেনা সরকার। বিশেষ করে অসহযোগ আন্দোলনে চিকিৎসকদের অংশ নেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসায়। দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় করোনা-পরিস্থিতি সামলে এই মুহূর্তে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন চিকিৎসকেরা। সেই চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ জানিয়ে দিয়েছেন, সেনা সরকারের অধীনে তাঁরা কাজ করবেন না।
১৯৬২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পরে পাঁচ দশক মায়ানমার শাসন করেছে সেনাবাহিনী। সু চি-র নেতৃত্বে কয়েক বছর হল গণতন্ত্র পেয়েছেন বাসিন্দারা।মঙ্গলবারের মতো বুধবার রাতেও পথে নেমেছিলেন বিক্ষোভকারীরা।বিক্ষোভে ভেসে উঠেছে ১৯৭৭-এর একটি সুর। আমেরিকার রক ব্যান্ড ‘কানসাস’-এর ‘ডাস্ট ইন দ্য উইন্ড’-এর সুরে ‘কাবার ম্যাকায় বু’। যার অর্থ— ‘‘এই পৃথিবী না-বদলানো পর্যন্ত আমরা থামব না।’’
আরও পড়ুন: দু-নৌকায় পা! কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশংসা করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও সমর্থন হোয়াইট হাউসের