কয়েকবছর আগেও তাঁরা ছিলেন একই দলে সহকর্মী। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভার সাংসদ করেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীকে। রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যসভার সাংসদের পদে মনোনয়ন পেশ করে নবান্নে এসে বয়সে ছোট মমতার হাঁটু ছুঁয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন মিঠুন। সময় বয়ে গিয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তৃণমূলের সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মিঠুন। রাজনীতি থেকেই সন্ন্যাস নিয়েছিলেন তিনি। রবিবার সেই মিঠুনই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে গদগদ কণ্ঠে বললেন, এইদিনটা তাঁর কাছে এক স্বপ্নের দিনের মতো। কারণ, তিনি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে রয়েছেন।
বাঙালির প্রিয় মহাগুরু এদিন ব্রিগেড ময়দানে পৌঁছান একদম বাঙালি সাজে। ধুতি-পাঞ্জাবিতে সেজে মঞ্চে পৌঁছান মিঠুনদা। প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড মঞ্চে পৌঁছানোর কয়েক মুহূর্ত আগেই দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্ম শিবিরে নাম লেখালেন মিঠুন চক্রবর্তী। গেরুয়া ভক্তের উদ্দেশে তাঁর বার্তা- ‘আমার নাম মিঠুন চক্রবর্তী, আমি যা বলি তা করে দেখাই’।
মিঠুন এদিন সভামঞ্চে বলেন, আজকের দিনটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। এদিন স্মৃতিমেদুর মহাগুরু ছেলেবেলার কথা স্মরণ করে ফিরে যান, জোড়াবাগানে কাটানো দিনগুলোতে। এদিন হিন্দি-বাংলা মেশানো বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্ধ গলি থেকে দেশের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে এক পৌঁছে যাওয়াটা সত্যি স্বপ্নের মতো। এদিন নিজেকে গর্বিত বাঙালি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলায় থাকা সব মানুষই বাঙালি। যাঁরা এখানে বড়ো হয়েছে তাঁদের এখানকার সব জিনিসে অধিকার আছে। আর সেই অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমাদের মতো কিছু মানুষ রুখে দাঁড়াবে’।
‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’, এমএলএ ফাটাকেষ্টর বহুপরিচিত সংলাপ উচ্চারণ করে নতুন ডায়লগ বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশে ছুঁড়ে দেন মিঠুনদা। ইঙ্গিতে স্পষ্ট করে দেন, শুধু দলে যোগ দেওয়ায়ই নয় ভোটের ময়দানেও নামছেন তিনি। মিঠুন চক্রবর্তী বললেন, ‘আমার ক্যাম্পেন শুরু করার আগে, আপনাদের বলতে চাই- আমি জল ঢোরাও নই, বেলে বোরাও নই। আমি একটা কোবরা। আমি জাত গোখরো…এক ছোবলে ছবি। এবার কিন্তু এটাই হবে। দাদার প্রতি ভরসা রাখবেন। আমার কথায় বিশ্বাস রাখবেন। দাদা কোনওদিন মুখ ফিরিয়ে পালিয়ে যায়নি। আমি সব সময় পাশে থাকব’।
মিঠুনের বক্তব্য উস্কে দিল নতুন জল্পনা, একুশের নির্বাচনে তবে মিঠুনই কি হতে চলেছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী? উত্তর পাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মিঠুনের ওই উচ্ছ্বাস প্কাশের কিছুক্ষণের মধ্যে শিলিগুড়িতে বক্তৃতা করতে উঠলেন মমতা। প্রত্যাশামতোই কড়া আক্রমণ করলেন মোদীকে। মোদীর ব্রিগেডকে। কিন্তু মিঠুন নিয়ে একটি শব্দও শোনা গেল না তাঁর মুখে। এটা ঘটনা যে, মিঠুনও তাঁর পুরনো দল বা নেত্রী সম্পর্কে একটি শব্দও বলেননি। সেটা সম্ভবত উভয় পক্ষের ব্যক্তিগত সৌজন্য। তবে মিঠুন না বললেও বাণ ছুড়লেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। তাও আবার এক্কেবারে মদন সুলভ ভঙ্গিতেই।
TV9 বাংলাকে মদন মিত্র বললেন, “আমি খুব দুঃখ পেলাম। মিঠুন চক্রবর্তী বলে আমি যে মানুষটাকে চিনতাম, চাপের কাছে নত হওয়ার মতো মেরুদণ্ড ছিল না তাঁর। কিন্তু দেখা গেল মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে, যে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর চেষ্টা হয়।”
ঠিক এই জায়গাতেই মদন মিত্রকে প্রশ্ন করা হয়, ঠিক কোন ‘চাপের’ কথা বলছেন তিনি? মদন কথার রেশ টেনেই বলতে থাকলেন, “মিঠুন যে বললেন, আমি হেলেও নই, ঢোরাও নই, আমি গোখরো, সত্যিই ওঁ যদি গোখরো হতেন, তাহলে মোদীর পায়ে গিয়ে জমা হতেন না।” ফের প্রশ্ন ‘এটা কি সিবিআই/ইডি-র চাপ?’ মদনের উত্তর, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।’ তবে গোখরো প্রসঙ্গে চলতে থাকে কথা। মদন বলেন, “ডায়লগে গোখরো বলা যায়। জীবন যখন হেলে, ঢোড়া হয়ে যায়, তখন বাইরে ডায়লগটা থাকে গোখরোর মতো, কিন্তু ওটা আসলে হেলে ঢোরা হয়ে যায়।”
আজ ‘গর্বিত বাঙালি’ মিঠুনকে কটাক্ষ করেন ফিরহাদ হাকিমও। বললেন, “মিঠুন দা কখন কোন দলে থাকেন, তা বোঝা দায়। এর আগে সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে ছিলেন, তারপর আমাদের সঙ্গে। এখন বিজেপির সঙ্গে। এরপরে হয়তো অন্য কারোর সঙ্গে থাকবেন।”
আরও পড়ুন: তৃণমূল ফেরত ‘চোরেদের’ সঙ্গে নিয়ে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন ফেরি মোদীর