প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হল রাজধানী দিল্লি। বিক্ষোভকারীদের পুলিশের লাঠি-কাঁদানে গ্যাস, পুলিশের উপর আন্দোলনকারীদের পাল্টা হামলা, ট্র্যাক্টর উল্টে এক কৃষকের মৃত্যু, জখম ৮৬ জন পুলিশকর্মী, সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ, লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন— মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নেওয়ার পিছনে উঠে এসেছে পঞ্জাবি গায়ক-অভিনেতা দীপ সিধুর ইন্ধনের অভিযোগ। গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্রের ছাপ দেখছেন আন্দোলনরত কৃষক ইউনিয়নের নেতা তথা নাগরিক সমাজের একাংশ।
গতকাল কৃষকরা লালকেল্লার দখল নেওয়ার পরই ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। BKU নেতা রাকেশ টিকটেত দাবি করেছেন,”আমরা লালকেল্লায় যেতে চাইনি। অশান্তি যারা ছড়িয়েছে তাঁরা রাজনৈতিক দলের সদস্য। আমরা তাঁদের শনাক্ত করতে পেরেছি। কৃষকদের আন্দোলনকে কলুষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” এরপরই ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের হরিয়ানা ইউনিটের প্রধান গুরনাম সিং চাড়ুনি দাবি করেছেন,”পাঞ্জাবি গায়ক দীপ সিধুর নেতৃত্বেই কৃষকদের একটি দল লালকেল্লায় গিয়েছিল। ওই হিংসায় উসকানি দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের উত্যক্ত করেছে।” রাতে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত স্বরাজ ইন্ডিয়ার নেতা যোগেন্দ্র যাদবও (Yogendra Yadav) দাবি করেছেন, “দীপ সিধু কৃষকদের তাণ্ডবের সময় লালকেল্লায় উপস্থিত ছিল। আমরা শুরু থেকেই ওর বিরোধিতা করে এসেছি। গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।”
কিন্তু কে এই দীপ সিধু? সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্জাবের মুখ্তসর জেলায় ১৯৮৪ সালে জন্ম সিধুর। আইন নিয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য তা-ই পেশা করেছিলেন সিধু। এর পর ম়ডেলিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। ‘কিংফিশার মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা জিতে অভিনয় জগতে পা রাখেন ২০১১৫-তে। সে বছর ‘রামতা যোগী’ নামে একটি পঞ্জাবি ফিল্মে আত্মপ্রকাশ করেন সিধু। তবে ফিল্মি পর্দায় সাফল্য আসে তার বছর তিনেক পর। ’১৮-তে মুক্তি পায় ‘জোড়া ‘দশ নম্বরিয়া’। ওই পঞ্জাবি ফিল্মে গ্যাংস্টারের চেহারায় সিধুকে দেখা গিয়েছিল মুখ্য ভূমিকায়। এর পর খান তিনেক ফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ২০১৯ সাল থেকে সিধুকে রাজনীতির আঙিনায়ও দেখা যেতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: ‘পদ্মশ্রী’ পেলেন নারায়ণ দেবনাথ, মৌমা দাস–সহ বাংলার সাত, দেখে নিন তালিকা
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সিধুর একের পর এক ছবি পোস্ট এবং রি-পোস্ট হতে থাকে। তারই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, ’১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেতা সানি দেওলের প্রচারসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিধু। গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সানি। অন্য একটি টুইটে সানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশেও সিধু রয়েছেন। ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী সেই ছবিটি পোস্ট করেছেন। একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রয়েছেন সিধুর পাশে। এই দু’টি ছবিই টুইট করেছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও।
This is Deep Sidhu with Modi & Shah. He led the mob at Red Fort today & unfurled the Sikh religious flag there pic.twitter.com/dX9bQjAIim
— Prashant Bhushan (@pbhushan1) January 26, 2021
বিজেপি-র হেভিওয়েটদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসার মাঝেই গত বছর কৃষক আন্দোলনেও শামিল হন সিধু। ২৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় শম্ভু এলাকায় তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বহু সমাজকর্মী-আন্দোলনকারী তথা শিল্পী। ওই বিক্ষোভে কৃষকদের সঙ্গে ধর্নায় বসেন সিধুও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফলোয়ারদের উদ্দেশেও কৃষক আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য করেন তিনি। শম্ভু সীমানায় পাকাপাকি ভাবে ধর্নায় বসার কথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছিলেন। তবে সে সময় থেকেই এই আন্দোলনে সিধুর শামিল হওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বহু কৃষক ইউনিয়ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদী-শাহের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা সিধুকে ‘আরএসএসের এজেন্ট’ বলেও তকমা দেন তারা।
Was Deep Sidhu and his followers responsible for hoisting that flag at the Red Fort?
He is the same person who campaigned for BJP in Lok Sabha Elections. Last time also he caused trouble in the protest by giving alleged Pro-Khalistani statements. pic.twitter.com/vIR0N86kTf
— Dhruv Rathee ?? (@dhruv_rathee) January 26, 2021
SHARE MAX
Deep Sidhu along with @iamsunnydeol during Election Campaign. You can see Sunny Deol in the vehicle too.
He is like a Younger Brother to BJP Gurdaspur MP Sunny Deol. And now Sunny has disowned him 🙂 pic.twitter.com/bKrRcHdZUi
— DaaruBaaz Mehta (@DaaruBaazMehta) January 26, 2021
যার বিরুদ্ধে এই হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তিনি নিজেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। এক ফেসবুক লাইভে পাঞ্জাবী গায়ক-অভিনেতা দাবি করেছেন,”আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বলে লালকেল্লায় শুধু নিশান সাহিবের পতাকা লাগিয়েছি। ভারতের জাতীয় পতাকা সেখান থেকে সরানো হয়নি। ”
মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুকে একটি ভিডিওতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সিধু বলেন যে এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তিনি বলেন যে চাষীরা যা করেছে সেটাকে কোনো সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া উচিত নয়। এটি চরমপন্থীদের কাজ এমন ভাবেও দেখা উচিত নয়। তিনি বলেন প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে নিশান সাহিব ও কৃষকদের পতাকা সেখানে উত্তোলন করা হয়। তারা কৃষকদের একতার স্লোগান দেন বলেন দীপ।
আরও পড়ুন: জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে অযোধ্যায় শুরু হল মসজিদ নির্মাণের কাজ