মালদায় আদিবাসীদের ‘হিন্দু’ বানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত আরএসএসের কমলি পেলেন পদ্মশ্রী!

খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত আদিবাসী মেয়েদের হিন্দুধর্মে ফেরাতে গণবিবাহের আয়োজন হয় গাজলে। কমলি তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর জনজাতি সংগঠন ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’-এর সক্রিয় কর্মী কমলি। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণকারী আদিবাসী মানুষদের হিন্দুধর্মে ‘ফিরিয়ে আনা’ই প্রধান কাজ তাঁর। ধর্মান্তরিত মুসলিমদেরও ‘মূল ধর্মে’ ফিরিয়ে আনার কাজ করেন কমলি।

স্থানীয়দের দাবি, প্রথম জীবনে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে শুধু মানুষকে লক্ষ করতেন তিনি। তাঁদের ঘর-বাড়ি, জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখতেন। কারও বাড়িতে তুলসি গাছ না থাকলে, নিজে গাছ নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিতেন। তুলসীদেবীর উপাখ্যান শোনাতেন সকলকে। ধর্মত্যাগী বা ভিন‌্‌ধর্মে দীক্ষিত হতে যাওয়া মানুষকে বুঝিয়েসুঝিয়ে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনতেন।বিপদে আপদে তাঁদের সহায়ও হতেন। অসুস্থদের আশ্রমে নিয়ে এসে সেবাও করতেন।

এলাকাবাসী অনেকের কাছেই ‘গুরুমা’ হয়ে ওঠেন কমলি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে শুরু থেকেই দ্বিধাবিভক্ত এলাকার মানুষ। কারও কারও কাছে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় হলেও, অসহায়তার সুযোগ নিয়ে মানুষকে ধর্মান্তরণে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে অযোধ্যায় শুরু হল মসজিদ নির্মাণের কাজ

2020-র শুরুতে তেমনই একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন কমলিনী। সে বার খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত আদিবাসী মেয়েদের হিন্দুধর্মে ফেরাতে গণবিবাহের আয়োজন হয় গাজলের আটমাইল এলাকায়। কমলি তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।

এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে এলাকাবাসীর একাংশের গোলমালও বাধে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, যেতে হয় পুলিশকে। সেই সময় তৃণমূলের তরফে জোর করে ধর্মান্তরণের অভিযোগ তোলা হয়। ধর্মান্তরণের জন্য পরিবার পিছু ১০-১২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।

সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ কমলিকে সমাজকর্মীর আখ্যা দিয়ে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মালদহ জেলার তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, ‘‘সরকারের অনুগত থাকলে এমন ধর্মীয় সমাজ সেবিকাও সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পায়। গাজলের কমলি সোরেনের পুরস্কার পাওয়াটা তারই উদাহরণ। ভোটে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য পদ্মশ্রীর মতো সম্মানকে ব্যবহার করছে সরকার।’’

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন মুনবাদী আরএসএস এই হিন্দুদের কি উচ্চবর্ণে তুলে আনতে পারবে? বর্ণাশ্রম প্রথার কট্টর সমর্থ আরএসএস ও তার রাজনৈতিক চ্যালা বিজেপি আসলে দলিত ভোট ব্যাঙ্ক হাতাতে চাইছে। এই কাজটি তারা বহু বছর ধরেই করে। অথচ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিতদের ওপর সবথেকে বেশি নির্যাতন করা হয়। আদিবাসীদের তারা মানুষ বলে গণ্য করে না। তাদের ডাকে আদিবাসীরা সাড়াও দেয় না। সে কারণে এখন তারা কমলি সোরেনের মত আদিবাসীদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করছে। অভিযোগ ধর্ম নিরপেক্ষ লোকজনের।

এদের মাথায় বিদ্বেষের বিষ ঢোকাতে চাইছে। খ্রিস্টান ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে এদের লেলিয়ে দিতে চাইছে। বিজেপি একটা বিষয় বুঝে নিয়েছে যে, শিক্ষিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা বেশিদিন তাদের এই বিদ্বেষ রাজনীতি মেনে নেবে না। তাই তারা আদিবাদী ও দলিতদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

তাদের সব চেষ্টাই ভোট কেন্দ্রিক। বাংলায় ভোট। অতএব আরএসএসের এই মহিলাকে পদ্মশ্রী দেওয়া । এমনিতে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার দলিত ভোট দখল করতে না পারলে মুশকিল। লোকসভায় লোকে ভোট দিয়েছিল মোদিকে দেখে। এবার তা হবে না। এবার লোকের চোখ এখনও দিদির দিকে। মাটির কাছে থাকা সাংবাদিক এবং ওয়াকিবহাল মহল তেমনই মনে করছেন।

আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবসে উল্টো জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন দিলীপ ঘোষ

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest