রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য ফের একবার DVC-কে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর শনিবার নবান্নে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বন্যা কবলিত এলাকার জেলাশাসক এবং সব দফতরের প্রধান সচিবরা। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা ম্যান মেড ক্রাইম। আমি এই বিষয়ে আগেও একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছি। আবারও লিখব। মুখ্যসচিবকে বলেছি ক্যাবিনেট সেক্রিটারিকে চিঠি লিখতে।’
তাঁর অভিযোগ, উন্নয়ন করলেও সেই টাকা ‘জলে যাচ্ছে’। পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে ডিভিসি-র থেকে ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত চাওয়া হতে পারে— শনিবার এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা।
শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে কপ্টারে হুগলির আরামবাগের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। পৌঁছন সাড়ে ১২টা নাগাদ। সেখান থেকে সড়কপথে তিনি পৌঁছন কালীপুর এলাকায়। প্লাবন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর তাঁর অভিযোগ, ‘‘হঠাৎ না বলে ১২টার সময় জল ছাড়া হয়েছে। তার জেরে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়া এবং বীরভূম এই আট জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ডিভিসি-র জলে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে।’’ ডিভিসি-র জল ছাড়ার হিসাব দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আগের বার জুলাই মাসে যে বন্যা হয়েছিল তাতে ওরা জল ছেড়েছিল ১.১২ লক্ষ কিউসেক। আর এ বার যদি দেখেন, ওরা সাড়ে ৫ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছেড়েছে। একে তো বৃষ্টি, তার উপর জল ছেড়েছে। জলের উপর জল। রাজ্যকে কিছু জানায়নি।’’
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রসঙ্গে কেন্দ্রে একহাত নেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ওরা (কেন্দ্র) কিছুতেই টাকা দেয় না। আমফানে দেয়নি, বুলবুলেও দেয়নি। সব আমাদের দিতে হয়। কিন্তু দিতে দিতে তো আমাদেরও ফুরিয়ে যাবে। এবছর তো সব টাকা জলেই গেল।”
এমন পরিস্থিতিতে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ মিলিয়ে মোট ৫০টি দল উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে। আমরা নবান্ন থেকে চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছি।’’ মমতার মতে, ‘‘ড্রেজিং করলে ডিভিসি আরও ২ লক্ষ কিউসেক জল ধারণ করতে পারে। ঝাড়খণ্ড বন্ধু রাজ্য। ওদের বাঁধ সংস্কারের অনুরোধ করব।’’ এর পরেই তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘সব টাকা জলে যাচ্ছে। না হলে এমন দিন আসতে পারে যে ডিভিসি-র থেকেও ক্ষতিপূরণ চাইতে হতে পারে। ক্ষোভ বাড়ছে। আমি চাই না ক্ষোভ বাড়ুক।’’ বিষয়টি নিয়ে ঝাড়খণ্ডকেও আলোচনায় বসার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে DVC-র বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়ে খোলসা করে কিছু জানাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পুজোর আগে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির উপর ক্রমাগত নজরদারি চালানো হবে। উৎসবের মুখে এই বিপর্যয়ের জন্য DVC-কে দায়ী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এখন উৎসবের সময়। মানুষের আনন্দ করার কথা। কিন্তু, এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁদের।’