কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে মহাত্মা গান্ধির (Mahatma Gandhi) স্মরণে একটি স্মারক মুদ্রার (Coin) প্রচলন করার কথা বিবেচনা করছে ব্রিটেন। একই সঙ্গে টিপু সুলতানের বংশধর, ব্রিটিশ গুপ্তচর নুর ইনায়েত খান- এর নামেও স্মারক মুদ্রার (Coin) প্রচলন করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক জানিয়েছেন, বেশ কয়েক জন ‘অ-ব্রিটিশ’-এর সম্মানে বিশেষ মুদ্রা তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কনজ়ারভেটিভ পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য জেহরা জ়াইদার। সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখছেন অর্থমন্ত্রী। এখন পৃথিবীজোড়া ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপনিবেশের অস্বস্তিকর ইতিহাস সরিয়ে রেখে নতুন ভাবমূর্তি তৈরি করতে উদ্গ্রীব ব্রিটেন। ইতিহাসের বিস্মৃত অধ্যায় থেকে তুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে গান্ধী, নুরের মতো অ-শ্বেতাঙ্গদেরও। ‘স্মারক মুদ্রার’ তালিকায় রয়েছেন ক্রিমীয় যুদ্ধের সময়ের কৃষ্ণাঙ্গ নার্স মেরি সিকোল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করা গোর্খা রেজিমেন্টের কুলবীর থাপা প্রমুখ।
ব্রিটেনের অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও সংখ্যালঘু অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর (বিএএমই) সহায়তায় এবং বর্ণবৈচিত্রের সমর্থনে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। আরএমএসি-কে লেখা চিঠিতে সুনাক বলেছেন, বিএএমই সম্প্রদায়গুলির সদস্যরা যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন ব্রিটেনের মুদ্রাগুলিতে তার স্বীকৃতি থাকা উচিত। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত স্বতন্ত্র কমিটি আরএএমসি মূলত যুক্তরাজ্যের মুদ্রাগুলোর বিষয়বস্তু ও নকশা নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জ, গুগলের কাছে বিতর্কিত মানচিত্র পাঠাচ্ছে নেপাল, লক্ষ্য স্বীকৃতি
মহাত্মা গান্ধি সারা জীবন অহিংসার পক্ষে ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধির অহিংসার বার্তাকে মাথায় রেখে প্রতি বছর ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস পালন করা হয়। ভারতের স্বাধীনতার কয়েকমাস পরেই তাঁকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি আততায়ীর হাতে মারা যান।
অন্যদিকে, ১৯৪৪-এর ১৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির দাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পেই মাথায় গুলি করে হত্যা করে হয়েছিল এক নুর ইনায়েত খানকে। মারা যাওয়ার সময়ে তিনি শুধু বলেছিলেন— লিবের্ৎ। ফরাসিতে যার অর্থ, স্বাধীনতা! আগের রাতে ভয়াবহ অত্যাচার করা হয়েছিল মেয়েটির উপরে। কিন্তু মুখ খোলেননি তিনি। বলেননি তাঁর আসল নামটুকুও। জার্মানরা জানত, তাঁর নাম নোরা বেকার। সন্দেহ করেছিল, তিনি এক জন ব্রিটিশ গুপ্তচর। সন্দেহ ঠিক-ই ছিল। তরুণীর আসল নাম নুর ইনায়েত খান। টিপু সুলতানের বংশধর। নাৎসি বাহিনীর হাতে হত্যার সময়ে বয়স ছিল ত্রিশ।
মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘জর্জ ক্রস’ দেওয়া হয়েছিল ইনায়েতকে। মরনোত্তর ‘ক্রোয়া দ্য গ্যের’ (ফ্রান্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্মান ‘যুদ্ধের ক্রস’)-ও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তা ছাড়া, লন্ডনের গর্ডন স্কোয়ারে তাঁর একটি মূর্তি রয়েছে। তাঁর ছবি দিয়ে ব্রিটেনে স্ট্যাম্প রয়েছে, ইনায়েতের সম্মানে তাঁর লন্ডনের বাড়ির সামনে ‘ব্লু প্লাক’ বসানো হবে। তা ছাড়া অবশ্য বিস্মৃতির অতলেই রয়ে গিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভুল শুধরে নিন, অ্যাপ নিষিদ্ধ করায় নয়াদিল্লিকে হুঁশিয়ারি বেজিংয়ের