নয়াদিল্লি: “এই দেশে বিরোধীরা কথা বলেন পাকিস্তানের ভাষায়, পাকিস্তানে সেনা অভিযান হলে মুষড়ে পড়েন ভারতের বিরোধীরা”— বিরোধীদের কোণঠাসা করতে এবং নির্বাচনী বৈতরণী পেরোতে এই ভাষাতেই এখন কথা বলেন নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর রাজনৈতিক শিবির। নির্বাচনের ঠিক আগে বালাকোটে সেনা অভিযান নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি হত না বিজেপির প্রচার ব্রিগেডের। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশকে টুকরো-টুকরো করতে আগ্রহী বিরোধীরা, এই অভিযোগও তোলা হয়েছে শাসক বিজেপির পক্ষ থেকে, যার সমালোচনায় বিরোধীদের ‘টুকরে-টুকরে গ্যাং’ নামও দিয়ে ফেলেছে তারা।
কিন্তু বুধবার পাল্টে গিয়েছে খেলা। নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি জিতে ক্ষমতায় এলে ভারত-পাকিস্তান শান্তির সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে, ইমরান খানের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পরই তোলপাড় ভারতের রাজনীতি। এত দিন বিরোধীদের দিকে পাকিস্তান প্রেম এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে নির্বাচনী প্রচারের ছক সাজাচ্ছিলেন মোদী-শিবিরের সেনাপতিরা। এরই মধ্যে ইমরানের এই মন্তব্যের পর কটাক্ষ, বিদ্রুপ আর সমালোচনা নিয়ে মোদী-শিবিরকে আক্রমণ করতে আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি।
ইমরানের মন্তব্য যেন নতুন অক্সিজেন পেল বিরোধী শিবির। বিজেপির এত দিনের সুরে সুর মিলিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘পাকিস্তান সরকারি ভাবে মোদীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মোদীকে ভোট দেওয়া মানে পাকিস্তানকে ভোট দেওয়া।’ একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মোদীজি, প্রথমে নওয়াজ শরিফ আপনার বন্ধু ছিলেন। এখন ইমরানও আপনার বন্ধু। ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে গিয়েছে।’ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘ইমরান খানের এই মন্তব্যের পর মাথা চুলকোচ্ছেন মোদী ভক্তরা। ওঁরা বুঝতে পারছেন না, ইমরানকে সমর্থন করবেন কিনা’।
মুফতির সঙ্গে সরব জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাও। একের পর এক টুইট করে সোশ্যাল মিডিয়া রীতিমতো সরগরম করে তোলেন তিনি। একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান সমর্থন করলে কী হত, একবার ভেবে দেখুন। এখন তা হলে টুকড়ে-টুকড়ে গ্যাং-এর সদস্য কারা?’ আরেকটি টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘এত দিন শুনতাম, পাকিস্তান ও তার সমর্থকরা চায়, বিজেপি এই নির্বাচনে হেরে যাক। এ বার তা হলে কী হবে?’
আসরে নামতে দেরি করেননি আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীবালও। মোদীকে উদ্দেশ করে তাঁর প্রশ্ন, ‘মোদীকে জেতাতে কেন উৎসাহী পাকিস্তান? দেশ জানতে চায়, আপনার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কতটা গভীর। দেশ জানতে চায়, মোদী জিতলে কি পাকিস্তানে বাজি পোড়ানো হবে?’