নয়াদিল্লি: ভারত আসন্ন বিপদের সম্মুখীন। তাও আবার তিনদিক দিয়ে। এমনই আশঙ্কাবাণী শোনালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। শুক্রবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দ্য হিন্দু পত্রিকায় লেখেন, “উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসাবে গড়ে ওঠা ভারত পিছিয়ে যাচ্ছে”।
দেশ এই মুহূর্তে একটি “ভয়াবহ ও কঠিন” পরিস্থিতি মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলেও বর্ণনা করেন প্রবীণ ওই কংগ্রেস নেতা। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মনমোহন সিং।”অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ের সঙ্গে আমি এটা লিখতে বাধ্য হচ্ছি… আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে দেশের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি কেবল ভারতের আত্মাকেই ভেঙে ফেলতে পারে তাই নয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের অবস্থানকেও হ্রাস করতে পারে”।
নিজের লেখায় মনমোহন সিং দিল্লিতে ঘটা হিংসার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, আমাদের সমাজের কিছু বিশৃঙ্খল মানুষ এই ঘটনার জন্য দায়ি। পাশাপাশি রাজনৈতিক বহু নেতাও এই বিশৃঙ্খল মানুষদের দলে পড়ে। এরা সম্মিলিত ভাবে সাম্প্রদায়িক এই হিংসার আগুনে ঘি ঢেলেছে।
পাশাপাশি গত কয়েক মাসে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসগুলিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি লেখেন, ‘ভারতে ইতিহাসের অন্ধকার কালকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে গত কয়েক মাস। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পাবলিক প্লেস এবং বাড়ি-ঘরেও হিংসাত্মক সাম্প্রদায়িক উস্কানি বয়ে চলেছে। আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানগুলি নাগরিকদের সুরক্ষা না দিয়ে নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছে। ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠান এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ, মিডিয়াও আমাদের হতাশ করেছে।’
আরও পড়ুন: হাঁড়ির হাল! এবার Yes Bank গ্রাহকদের টাকা তোলার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিল কেন্দ্র
অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এরকম সামাজিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প শুরু করতে রাজি নয় এবং তাদের ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছাও হারিয়েছেন। সামাজিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কেবল তাদের ভয় আরও বাড়িয়ে তুলেছে।’ দেশের টালমাটাল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে হাল ধরা উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকারের, এই পরামর্শও দিতে দেখা যায় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘সত্যটি হল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত মারাত্মক। আমরা যে ভারতকে জানি এবং লালন করি সেই ভারত দ্রুত পিছলে পড়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে ঢাকা হচ্ছে। জাতি হিসাবে আমরা যে গুরুতর ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছি সেগুলির সমাধান করার সময় এসেছে।’
এছাড়া করোনা আতঙ্কের কথাটিও উঠে আসে তাঁর লেখায়।তিনি মোদি সরকারের জন্য একটি তিন দফা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন – “প্রথমত, করোনা ভাইরাস বা COVID-19 এর সঙ্গে যুঝতে সব রকমের প্রস্তুতি রাখা উচিত এবং এই রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত শক্তি ও প্রয়াস প্রয়োগ করা উচিত । দ্বিতীয়ত, দেশে তৈরি হওয়া বিদ্বেষের পরিবেশ থামাতে এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত বা এই আইনে ফের সংশোধনী আনা উচিত। তৃতীয়ত, দেশের অর্থনীতিকে পুনরজ্জীবিত করার জন্যে একটি বিশদ ও চুলচেরা আর্থিক পরিকল্পনা করা উচিত।”