সংসদের ক্যান্টিনের সস্তা খাবার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বহু দিন ধরেই। বাজেট অধিবেশনের সূচনাপর্বেই ভর্তুকির রীতি পুরোপুরি বন্ধ করে সেই বিতর্কে ইতি টানছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভর্তুকি তুলে নেওয়ার ফলে চলতি সপ্তাহ থেকে সংসদের ক্যান্টিনের বিভিন্ন পদের দাম বাড়ছে।
সংসদের ক্যান্টিনে প্রায় ‘নিখরচায়’ ভুরি-ভোজে ইতি টানল মোদী সরকার। দীর্ঘধিন ধরে দেশের সাংসদদের জন্য রাখা খাবারের দামে ভর্তুকি দিচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের জন্য ক্যান্টিনে সস্তা খাবার নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।
সাধারণ মানুষকে যখন রেস্তোরাঁ বা অন্য দোকানে চড়া দামে লোভনীয় সব পদের স্বাদ নিতে হয় , তখন সাংসদদের কেন এই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিভিন্ন সময় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। লোকসভার বর্তমান অধ্যক্ষ ওম বিড়লা সংসদের ক্যান্টিনের খাবারের দাম বাড়ার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন। এবার প্রকাশিত হল খাবারের নয়া রেট-কার্ড। যেখানে ৩ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত খাবারের মেনু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সংসদ ভবনের ক্যান্টিনে নয়া তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে সস্তার খাবার হল রুটি। তার দাম রাখা হয়েছে ৩ টাকা। সবচেয়ে দামী খাবার হল ননভেজ বুফে লাঞ্চ। যার দাম পড়বে ৭০০ টাকা। এছাড়াও ভেজ বুফে লাঞ্চে দাম ৫০০ টাকা রাখা হয়েছে। নিরামিশ পদের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডিস।
আরও পড়ুন: সত্যযুগে বেঁচে উঠবে! দুই মেয়েকে হত্যা করল কুসংস্কারচ্ছন্ন উচ্চশিক্ষিত দম্পতি
সংসদের ক্যান্টিনের নতুন দাম অনুযায়ী চিকেন বিরিয়ানি, চিকেন কাটলেট, চিকেন ফ্রাইয়ের দাম ১০০ টাকা রাখা হয়েছে। ভেজ থালির দামও ১০০ টাকা রাখা হয়েছে। ৭৫ টাকায় মিলবে চিকেন কারি, ১২৫ টাকায় মিলবে মটন কারি। এছাড়াও ১৫০ টাকায় মিলবে মটন বিরিয়ানি ও মটন কাটলেট। অপেক্ষাকৃত সস্তার খাবারের তালিকায় থাকছে ব্রেড পাকোড়া এবং সিঙ্গাড়া, দাম রাখা হচ্ছে ১০ টাকা।
সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে ক্যান্টিনের ভর্তুকি বাবদ ১৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সে সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব প্রতাপ রুডি পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি বন্ধ করার কথা জানিয়েছিলেন। সংসদের ক্যান্টিনে জন্য সরকারের ভর্তুকির বহর কতটা, তা জানতে চেয়ে সুভাষ অগরওয়াল নামে এক সামাজিক আন্দোলনকারী তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় মামলা করেছিলেন। তার জবাবে ২০১৬ সালে সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, গত পাঁচ বছরে সাংসদদের খাবারে ৬০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
তৎকালীন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন অবশ্য সে সময় ভর্তুকি বহাল রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, সাংসদদের পাশাপাশি সংসদের সব স্তরের কর্মী, নিরাপত্তা রক্ষী, সাংবাদিক এবং দর্শকাশনের অতিথিরাও নিয়মিত ক্যান্টিনে খেয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত, লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে সাংসদের সংখ্যা ৭৯০ হলেও অধিবেশন চলাকালীন প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার জন সংসদের ক্যান্টিনে খান। সে কারণে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে।
সম্প্রতি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়েছিলেন, ভর্তুকির এই প্রথা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সঙ্গে তিনি জানান, উত্তর রেল কর্তৃপক্ষের পরিবর্তে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (আইটিডিসি)।
আরও পড়ুন: যৌন নিগ্রহে বম্বে হাইকোর্টের রায় ‘বিপজ্জনক’, জারি সুপ্রিম স্থগিতাদেশ