মানহানির মামলায় মুক্তি পেলেন প্রিয়া রমানি। ২০১৭ সালে প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী এম জে আকবরের নামে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন প্রিয়া রমানি। তার প্রেক্ষিতেই আকবর মানহানির মামলা করেছিলেন। বুধবার সেই মামলা থেকেই প্রিয়াকে নিস্তার দিল দিল্লি আদালত।
আদালতের রায়ে প্রিয়া রমানিকেই সমর্থন করে বলা হয়, “কয়েক দশক বাদেও একজন মহিলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনতে পারেন।” অন্যদিকে, মামলা থেকে সসম্মানে মুক্তি পাওয়ায় প্রিয়া রমানি বললেন, “যৌন হেনস্থাকে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা দেওয়া হয়েছে।”
২০১৮ সালে #MeToo বিতর্ক ঝড় তুলেছিল সমগ্র দেশে৷ একে একে নাম জড়িয়েছিল রাজনৈতিক মহল থেকে সিনেজগত এবং সংবাদমাধ্যমের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের৷ তখনই আকবরের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন সাংবাদিক প্রিয়া রমানি৷ তাঁর অভিযোগ, প্রায় ২০ বছর আগে বলপূর্বক তাঁকে চুম্বন করার চেষ্টা করেছিলেন আকবর৷ সেই সময় ‘Asian Age’ সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন তিনি।
এরপর এই বিশিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে সরব হন ২০ জন মহিলা সাংবাদিক৷ তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বে থাকাকালীন তাঁদের যৌন হেনস্তা করেছেন মোদি সরকারের বিদেশমন্ত্রকের এই প্রাক্তন মন্ত্রী। এই অভিযোগের পরই মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন আকবর৷ পাশাপাশি, তাঁকে ‘এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া’ থেকেও বরখাস্ত করা হয়। এদিকে, নিজেকে বারবার নির্দোষ দাবি করেছেন আকবর। মুখ বাঁচাতে প্রিয়া রমানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সংসদে মহুয়ার ভাষণ বিশ্বের অন্যতম সেরা, উচ্ছ্বসিত হয়ে টুইট বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রধান কৌশিক বসুর
প্রিয়া রমানির টুইটেই দীর্ঘ অর্জিত সম্মান ভূলুন্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছিলেন এমজে আকবর। এরপ্রেক্ষিতেই রমানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন আকবর। আজ আদালতের শুনানিতে বলা হয়, “সম্মানজনক কোনও ব্যক্তিও হেনস্থাকারী হতে পারেন।”
এদিন অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র কুমার পান্ডে বলেন, “যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে মহিলাদের। এর জন্য তাদের সাজা দেওয়া যায় না। যে কোনও সংশ্লিষ্ট জায়গায় যে কোনও সময় যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন মহিলারা। তাঁদের এই অধিকার ভারতীয় সংবিধান দিয়েছে। এটা মাথায় রাখতে হবে যে যৌন নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনা বন্ধ দরজার আড়ালে ঘটে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজে একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখ খোলেন না নির্যাতিতারা।”
এখনও যে সারা দেশে যৌন হেনস্থার ঘটনা হচ্ছে সেটি অত্যন্ত লজ্জানক বলে এদিন তাঁর রায়ে লিখেছেন বিচারক। মহাভরত ও রামায়ণের কীভাবে মহিলাদের সম্মান জানানোর শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেই কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্বাধীন ভারতে প্রথমবার কোনও মহিলার প্রাণদণ্ডের আদেশ, ফাঁসির দড়ি আসছে বক্সার থেকে