আরএসএস মানে শুধু হিন্দুদের সংগঠন নয়। যে সমস্ত ভারতীয়রা অখণ্ড ভারতের তত্ত্বে বিশ্বাস করে তাঁদের সকলের সংগঠন। তা সে হিন্দু হোক, বা মুসলিম। ভারতীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দিতে মরিয়া সংঘ। সেই লক্ষ্যে এবার সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতের ভাষণ সম্বলিত বই ছাপা হল উর্দুতে। যাতে দেশের উর্দুভাষী মানুষের মধ্যে সংঘ সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা আছে, তা দূর করা যায়।
সোমবারই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের লেখা বই ‘ভবিষ্যতের ভারতে’র উর্দু সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুস্তাকবিল কা ভারত’। বইটি প্রকাশিত হচ্ছে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর প্রমোশন অফ উর্দু ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে। এই বইটি মূলত ভাগবতের বিভিন্ন ভাষণের সম্মিলিত সংস্করণ। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর প্রমোশন অফ উর্দু ল্যাঙ্গুয়েজের ডিরেক্টর ডঃ আকিল আহমেদ বইটির অনুবাদক। তাঁর দাবি, মোহন ভাগবতের এই বইটির উর্দু সংস্করণের উদ্দেশ্যই হল ভারতীয় উর্দুভাষী মুসলিমদের আরএসএস সম্পর্কে যেসব ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেটা দূর করা। এর মাধ্যমে মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা আরএসএসের ভাবধারা এবং আদর্শ সম্পর্কে আরও সহজেই জানতে পারবেন। শুধু উর্দু নয়, আরও বেশ কয়েকটি ভারতীয় ভাষায় এই বইটি অনুবাদ করা হয়েছে।
ডঃ আকিল আহমেদ বলছেন, আরএসএসের ধারণাটা মুসলিমদের ছাড়া অসম্পূর্ণ। মোহন ভগবতজির ভাষণগুলিতে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। হিন্দুত্ব মানে শুধু হিন্দু ধর্ম নয়। এটা আসলে ভারতের সংস্কৃতি। আরএসএসের সংখ্যালঘু শাখা মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের প্রচারক ইন্দ্রেশ কুমার বলছেন,”এটা উর্দুভাষী মুসলিমদের দেশগঠনে তাঁদের শামিল করার চেষ্টা।”
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা নাবালিকাকে ‘নির্বাসনে’ মায়ানমারে পাঠাল মোদী সরকার, বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা
যদিও গোটা বিষয়টিকে একেবারেই ভালো নজরে দেখছে না মুসলিম সমাজ। বিষয়টিকে তারা কসাইয়ের সঙ্গে ছাগলের বন্ধুত্ব হওয়ার চোখেই দেখছে। এতদিন পর্যন্ত তারা মনে করছে, মুসলিম ভোট ছাড়াই দিন কেটে যাবে সহজে। হিন্দুরাষ্ট্র ঘটনা করা, মনুবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করা যাবে সহজেই। কিন্তু কম -বেশি ৩০ শতাংশ ভোট শুরুতেই চলে গেলে আখেরে যে ক্ষতি হয়, এই বোধ এতদিনে হয়েছে আরএসএসের। সেই কারণে ৫ রাজ্যের ভোট চলাকালীন নিজেদের ভাবমূতি পরিষ্কার করতে নামছে তারা।
কয়েকদিন আগে পর্যন্ত এনআরসি’র জুজু মুসলিমদের দেখানো বিজেপির বড় – মেজ- সেজ – সব নেতার রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যত ভোট এগিয়ে এসেছে সেই সুর নরম হয়ে গেছে। এখন অবস্থা এমনই যে কোনো নেতার মুখেই আর শোনা যাচ্ছে না সেসব কথা। বরোগ কৈলাশ বিজয়বর্গিও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে , ক্ষমতায় এলেও হয়ে না এনআরসি।
আর একটি হাস্যকর কথা হল এই যে, উর্দু ভাষাটিকে মুছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা একসময় করেছে আরএসএস। এর হরফকে ‘জেহাদি’ দের বলে দাগানো হয়েছে। বিপাকে পরে এখন নিজেদের প্রচারের জন্য সেই ভাষারই দ্বারস্থ হতে হয়েছে মোহন ভাগবতদের।
আরও পড়ুন: মধ্যস্থতাকারী ভারতীয় সংস্থাকে ১০ লক্ষ ইউরো ‘উপহার’ দাসো-র! রাফাল নিয়ে ফের বিতর্ক