তৃণমূলের অভিযোগই যেন সত্যি হল। একুশের বিধানসভায় মুড়ি-মুড়কির মতো টাকা উড়িয়েছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটের সাত মাস পর নির্বাচন কমিশনের থেকে পাওয়া তথ্য এমনটাই বলছে। কমিশন সূত্রে খবর, একুশে যে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে তাতে মোট খরচ করেছে ২৫২ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাতেই খরচ হয়েছে ১৫১ কোটি! যা মোট খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে বাকি চার রাজ্যে মোট খরচ হয়েছিল ১০১ কোটি টাকা। যার মধ্যে অসমে ৪৩ কোটি ৪১ লক্ষ, কেরলে ২৯ কোটি ২৪ লক্ষ, তামিলনাড়ুতে ২২ কোটি ৯৭ লক্ষ, পুদুচেরিতে ৪ কোটি ৭৯ লক্ষ।
নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই এ রাজ্যে ঘাঁটি গেড়়েছিলেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। মাসের পর মাস ধরে বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের আনাগোনার সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। তাদের সফরের জন্য খরচ করতে হয়েছে মোটা টাকা। এছাড়াও সভা সমিতিতে কর্মী-সমর্থকদের খাওয়া-দাওয়ার খরচও বহন করতে হয়েছে তাদের। বাংলা জুড়ে বিজেপি-র পোস্টার-ব্যানারও সে সময় নজর কেড়েছিল। এত খরচ করে ক্ষমতা দখল না হলেও বিরোধী দলের মর্যাদা আদায় করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতা তথাগত রায় দাবি করেছিলেন, ‘ভোটের আগে ‘কাড়ি কাড়ি টাকা’ ছড়িয়ে সেলিব্রিটিদের নিয়েছিল দল। তাঁরাই এখন সব দল ছেড়ে যাচ্ছেন।’
পশ্চিমবঙ্গ বাদে বাকি চার রাজ্যের মধ্যে বিজেপি সবথেকে বেশি খরচ করেছে অসমে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। সেখানে খরচ করা হয়েছে ৪৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। ৭৫টি আসন দখল করে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। কেরল থেকে বামেদের উৎখাত করতেও চেষ্টা চালিয়েছিল বিজেপি। খরচ করেছিল ২৯ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু দক্ষিণের এই রাজ্যে খাতা খুলতে পারেনি বিজেপি। তামিলনাড়ুতে গত নির্বাচনে এআইএডিএমকে-র থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে ডিএমকে। বিজেপি মাত্র ২.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে দক্ষিণের ওই রাজ্যে। সেখানে তারা খরচ করেছিল ২২ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। পুদুচেরীতে ৪ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা নির্বাচনে খরচ করেই ক্ষমতা দখলে সফল হয়েছে বিজেপি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচন থেকে বিজেপির খরা শুরু হয়েছে। বাংলায় যে স্বপ্ন ফেরি করা হয়েছিল তা বাস্তবে ঘটেনি। ফলে মোহভঙ্গ হয়ে এখন গেরুয়া সংস্রব ছাড়তে শুরু করেছেন সাংসদ–বিধায়ক থেকে নেতা, কর্মীরা। বাকি চার রাজ্যের মধ্যে অসম ফসল ঘরে তুললেও কেরল, তামিলনাড়ু এবং পদুচেরী বিরাট কোনও সাফল্য বযে আনেনি। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সে তথ্য নিজেরাই দেখতে পেয়েছেন। আবার পর পর উপনির্বাচনেও দেশজুড়ে সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে। এখানে সবচেয়ে বড় খবর পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে বিজেপি সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছিল। যা নিয়ে এখন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এবং মোদী–শাহ–নাড্ডাকেও।