মুম্বই: কেরালার মালাপ্পুরমে বাজিভরা আনারস খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে এক মা হাতি ও তাঁর গর্ভে থাকা সন্তানকে। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। বিজেপি সাংসদ মানেকা গান্ধী থেকে শুরু করে বলিউড-টলিউড তারকারা সরব হয়েছেন। ধিক্কার দিচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
রাজ্যের বন বিভাগের অফিসার মোহন কৃষ্ণন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নক্কারজনক ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন। আনারসের মধ্যে বাজি ভরে খাওয়ানো হয়েছিল ওই হাতিকে। ঘটনা কেরলের মালাপ্পুরম জেলার।বিস্ফোরণের জেরে শরীরের ভিতরে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল ওই হাতির। এরপর সেই অবস্থাতেই তীব্র যন্ত্রণায় বেশ কয়েকদিন গ্রামের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় হাতিটি,এরপর ভেল্লিয়ার নদীতে নেমে যায় যন্ত্রণা লাঘব হওয়ার আশায়। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই মৃত্যু হয় হাতিটির। পরে জানা যায় হাতিটি গর্ভবতী ছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকেই সরব নেটিজেনরা। এই বর্বর ও নৃশংস ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল মনষ্যত্ব আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! গর্ভবতী হাতির মৃত্যু ঘিরে প্রতিবাদী তারকারাও। পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও কঠিন আইন দাবি করলেন আলিয়া ভাট, শ্রদ্ধা কাপুর, অনুষ্কা শর্মরা।
টুইটারের দেওয়ালে শ্রদ্ধা লেখেন, কীভাবে? এইরকম ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে? মানুষের কী হৃদয় নেই? আমার মন ভেঙে আছে…অপরাধীদের কঠিনতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি’। অনলাইনে একটি পিটিশন সই করার আর্জিও জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
পশুপ্রেমী হিসাবে পরিচিত রণদীপ হুডা পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে ট্যাগ করে টুইটে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন। তিনি লেখেন, এই ঘটনা একবারেই অমানবিক! বাজি ভর্তি আনারস খাইয়ে একটা গর্ভবতী,বন্ধুসুলভ হাতিকে হত্যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না.. দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি’
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সোনু সুদ! জেনে নিন ‘সুপারহিরো’র মতামত…
অভিনেত্রী আলিয়া ভাট এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করে লেখেন, নিন্দনীয়..মারাত্মক নিন্দনীয়। আমাদের ওদের আওয়াজ হতে হবে! এটা কোন ধরণের অসুস্থ মানসিতার পরিচয়? মন ভেঙে যাচ্ছে’।
পশু সুরক্ষা নিয়ে বরাবরই সরব অনুষ্কা শর্মা। তিনি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লেখেন, ‘ঠিক এই কারণেই পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন দরকার’।
হাতিটির অটপসি রিপোর্ট বলছে অন্তত দিন কুড়ি আগে আহত হয়েছিল হাতিটি। অর্থাত ঘটনাটি ঘটেছে মে মাসের শুরুর দিকে। এই দীর্ঘ সময় ধরে সহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেরিয়েছে হাতিটি। বনবিভাগের আধিকারিক মোহন কৃষ্ণন বলেছেন, ‘মানুষকে বিশ্বাস করাই হাতিটির কাল হল। খাবার খাওয়ার সময় সে হয়ত ভেবেছিল, মানুষ দিচ্ছে যখন নিশ্চয় ভালো হবে। ভাবছিল নিজের আসন্ন সন্তানের কথাও। প্রচন্ড যন্ত্রণা আর কষ্টেও হাতিটি কারও ক্ষতি করেনি। আসলে ওর ভিতরে ভালো ছাড়া আর কিছু ছিল না।’
কৃষ্ণন জানিয়েছেন, অন্য দুটি কুনকি হাতি দিয়ে নদী থেকে এই হাতিটিকে তোলার চেষ্টা হলেও সে কোনও সাড়াশব্দ দেয়নি। কৃষ্ণন বলছেন, ‘আমার মনে হয় ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করছিল। মৃত্যু আসন্ন ভেবেই সে আমাদের কিছু করতে দেয়নি।’ নদীতে দাঁড়িয়েই শেষ নিঃশ্বাস নেয় সে। মৃত্যুর পর তার দেহ ট্রাকে করে জঙ্গলে নিয়ে যান বনবিভাগের কর্মীরা, সেখানেই দাহ করেন তাকে। কৃষ্ণনের কথায়, ‘ডাক্তার ময়নাতদন্ত করে জানান, খুব তাড়াতাড়ি এক সন্তানের জন্ম দিত ও। মরার সময় কী যে কষ্ট হচ্ছিল ওর। মাথা নত করে ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম আমরা।’
আরও পড়ুন: মহেশ বাবুকে পছন্দ করি! মন্তব্য করে ধর্ষণের হুমকি পেলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বোন মীরা