প্রযুক্তি নির্ভর আজকের দিনে কুরবানী কী আদৌ প্রাসঙ্গিক? রইল প্রিয়জনদের পাঠানোর জন্য মেসেজ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলি মাসুদ

ফি বছর কুরবানী নিয়ে একটা তরজা চলে। একদল বলেন, কুরবানী না করে সেই টাকা গরিব দুঃখীদের দিয়ে দেওয়া হোক। কেউ বলেন, পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে কোনও ত্যাগ হতে পারে না। মানুষের জন্য ওরা কষ্ট পাবে কেন? কেউ আবার পাল্টা বলেন, কুরবানী না হলে কি পশু জবাই বন্ধ থাকে। তাহলে বিফ রফতানিতে আমরা ব্রাজিলকেও মাঝেমধ্যে টেক্কা দিই কি করে? যে বিফ প্রতিদিন রফতানি হয়ে বিদেশ চলে যায় তার জন্য কারো নাকে কান্না নেই। যখন গরিব মানুষ কিছু মাংস খেতে পাই তাতেই ছদ্ম পশুপ্রেমীদের কুমির কান্না।

বছরের এই একটা দিনের জন্য বহু দরিদ্র মুসলিম পরিবার এবং কিছু জায়গায় আদিবাসী পরিবার অপেক্ষায় থাকে। যে পরিমাণ মাংস এই গরিব পরিবারগুলি এদিন পান তা কোনও কালে কেনার সামর্থ তাদের নেই। শুধু তাই নয় , গ্রামের বহু কৃষক পরিবার এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন। ছাগল, ভেড়া বিক্রি করে তারা হাতে কিছু বাড়তি টাকা পান। মূলত দু’বার তাদের বড় বাজার। একটি ঈদ অন্যটি পুজো। কালীপুজোর আগে তারা একটা বাজার পান। আর দুর্গা পুজোর নবমীর দিন বলি উপলক্ষে একটা বাজার হয়। তাই আবেগ, ‘গেরুয়া মানবতা’ এবং অবাস্তবতার শিকার না হয়ে বিষয়টিকে আর্থিক দিক দিয়েও দেখা উচিত। কেবল মুসলিম নয়, এর সঙ্গে বহু চর্মজীবিদের জীবন সার্বিকভাবে জড়িয়ে। তাছাড়া যারা দানের কথা বলছেন, তাদের আটকাচ্ছে কে ! তারা দেন করুন না। দেন করতে তো বাধা নেই। এমনটা মনে করছেন বহু মুসলিম।

ঈদ-উল-আজহা কেন পালিত হয় তা কমবেশি সকলের জানা। পরম করুণাময়,নবী ইব্রাহিমের ভালোবাসা ও ভরসার পরীক্ষা নিয়েছিলেন। ‘আপন প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে কুবানি কর।’ এই প্রত্যাদেশ পেয়েছিলেন ইব্রাহিম। প্রত্যাদেশ ছিল সৃষ্টি কর্তার। তাঁর ইচ্ছাতেই তামাম বিশ্ব-চরাচর চলছে। ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে। তিনি এক। তিনি সত্য। তিনি সুন্দর। তাই তাঁর আহ্বানের কাছে জাগতিক এ বিশ্বের সবকিছু তুচ্ছ।

যেমন বাবা, তেমনই পুত্র। বাবার আত্মার আকুতি বুঝতে কিশোর পুত্রের বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। তিনি বাবাকে বলেন, যেভাবে প্রত্যাদেশ পেয়েছেন, সেইভাবেই যেন তাঁকে পরম করুনাময়ের কাছে নিবেদন করা হয়। একেই বলেই রুহানি তাকত(আধ্যাত্মিক শক্তি)। স্রষ্টা তো এটাই চাইলেন। আর তিনি তা চাইলেন আমাদের মত সাধারণ মানুষকের কাছে চিরন্তন করে দিতে। সে কারণেই ইব্রাহিম-ইসমাইলের সেদিনের কুরবানীকে এমন করে গুরুত্ব পেল ইসলামে।

আরও পড়ুন : চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন কোভিড আক্রান্ত ‘গরিবের ডাক্তার’ ফুয়াদ হালিম, জানালেন স্ত্রী সায়রা

ইব্রাহিম নবীর দেখানো আলোকিত পথ ধরেই এসেছে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলাম। সেই অর্থে ইসলাম কোনও নয়া ধর্ম নয়। ইব্রাহিমের সেদিনের একত্বের ডাক ইসলামে পূর্ণতা পায়।  ইসলামকে সেই অর্থে দ্বীনের ফাইনাল পাবলিকেশন বলা যেতে পারে। তাই ইসলাম সমস্ত নবীদের সম্মান প্রদর্শন করে। ইসলামের আগমনের হাজার হাজার বছর আগে যারা সত্য ও ন্যায়ের ডাক দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি মুসলিমরা শতত শ্রদ্ধাশীল। এই নবীদের নাম উচ্চারণ করলে সঙ্গে সঙ্গে বলতে হয় ‘তাঁদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’

প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিকতার যুগে অনেকে প্রগতিশীল মুসলিম একান্তে বলেন, আজকের যুগে এই কুরবানী কি প্রাসঙ্গিক? তাঁরা বেশিরভাগই পশু জবাইয়ের কথা বোঝাতে চান। কেউ কেউ বিষয়টিকে নিষ্ঠুরতা হিসাবে দেখেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরেই। কখনও কখনও তাতে ভিন ধর্মাবলম্বীদের প্রভাব যে থাকে না, তা নয়। এখানে সেটি বিবেচ্য নয়।

একথা সত্য যে, যেভাবে কুরবানীর কথা বলা হয়েছে তা আজকের দিনে হচ্ছে না। কেবল পশু জবাই হচ্ছে। তা নিয়ে হতাশার কোনও কারণ নেই। বহু বিএ পাস ছেলে রয়েছে যারা ইংরেজিতে দরখাস্ত পর্যন্ত লিখতে পারে না। তাবলে কি তাদের কলেজগুলি বন্ধ করে দিয়ে আসা যুক্তির কাজ হবে?

পশুর মাংস বিলি করছেন, ভালো কথা, কিন্তু জীবনের প্রতি পরম মোহ কি বিসর্জন দেওয়া গেল? পরশ্রীকাতরতা কি বন্ধ হল? কূ-প্রবৃত্তি থেকে কি মুক্তি মিলল? যদি না মেলে। হতাশ না হয়ে চেষ্টা করে যান। ফিবছর স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ত্যাগ নিয়ে আলোচনা হয়, তাতে কি চুরি, ধাপ্পাবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? ৫ বছর অন্তর বিধায়ক ও সাংসদরা শপথ নেন দেশের সম্প্রতি ও অখণ্ডতা রক্ষার। সংবিধান মেনে চলার প্রতিশ্রুতি নেন প্রকাশ্যে । কিন্তু তা বাস্তব হয় কি? তাই আপনিও হতাশ হবে না। তবে ওদের আদর্শ না করে, কিভাবে নিজের পশু জবাইকে  কুরবানীতে (ত্যাগে) রূপান্তরিত করা যাই সে চেষ্টা চালিয়ে যান।

এদেশে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়, ব্রিটিশদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে নয়। এটা আসলে আমাদের সম্মানের লড়াই ছিল। সম্ভ্রমের লড়াই ছিল। পরাধীনতা থেকে মুক্তির লড়াই ছিল। কিন্তু আজ স্বাধীন দেশে বহু কেলেঙ্কারি এবং দুর্নীতি আমাদের ব্যাথিত করে। কিন্তু তাতে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব খাটো হয়ে যায় না। কারণ এই দিনটি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমাদের গর্বের ইতিহাসে। তাইতো তার এমন উজ্জাপন। কিছু না হোক ইব্রাহিমের ও ইসমাইলের সেই মহান ত্যাগের আলোচনায় করুন না। তাতেই বা অসুবিধা কোথায়? একালে মন্ত্রী- আমলারা দু -চার লক্ষ টাকা ঘুষ খেতে গিয়ে হুল অপারেশনে ধরা পড়েন। এমন সময়ে এমন মহান পিতা-পুত্রের আত্মত্যাগের এমন উজ্জাপন তো বরং সার্বিক হওয়া উচিত।

প্রেমের অন্যতম দাবি আবেগ। ধর্মেরও তাই । আবেগ বিবর্জিত মানুষ প্রেমের কিনারাও ছুঁতে পারে না। স্রষ্টার একত্বের প্রচারের জন্য অত্যাচারী শাসকের তৈরী করা প্রজ্জলিত অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিতে মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি নবী ইব্রাহিম। যেহেতু তাঁর জীবন চরিত আলোচিত হবে বিচারদিবস পর্যন্ত, তাই স্রষ্টা তা অত্যন্ত কঠিন করে বানিয়েছিলেন। পরম প্রত্যাদেশ পেয়ে রুক্ষ মরুভূমিতে স্ত্রী হাজেরা ও শিশু ইসমাইলকে রেখে আসেন ইব্রাহিম। কষ্টে বুক ফেটে গিয়েছিল । তবু একবারও পিছন ফিরে তাকান তিনি। শিশু জলের জন্য হাহাকার করেছে। মরীচিকা দেখে বারবার দৌড় লাগিয়েছেন মা। সেই শিশুর জন্য জমজমের প্রবাহ খুলে দিয়েছেন এই জগতের প্রতিপালক। সেদিন আকুল হয়ে হাজেরা যে ভাবে ছুটেছিলেন, সেই দৌড়ের ভঙ্গি হজ করতে যাওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। যতদিন এই বিশ্ব থাকবে, ততদিন শিশু ইসমাইলের ও তাঁর মায়ের আকুতি বেঁচে থাকবে হজের ভিতরে।

খ্রিস্টপূর্ব ১৯৯৬ সালে ইব্রাহিমের জন্ম বলে জানা যায়। অর্থাৎ যীশুর জন্মেরও প্রায় দুহাজার বছর আগে বিশ্বকে একক স্রষ্ট্রার বার্তা দিতে এসেছিলেন ইব্রাহিম। হজরত মুহাম্মদের জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। অথচ স্রষ্টাকে তুষ্ট করার জন্য ইব্রাহিমের সেদিনের দুটি কাজ– হজ এবং করুবানী ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে।স্রষ্টার একত্বের প্রতি নবী ইব্রাহিম ও ইসমাইলের অকুন্ঠ আনুগত্যকে আল্লাহ নিজেই ইসলামের বাধ্যতামূলক অনুসঙ্গ বানিয়ে দিয়েছেন।

অভিমত ব্যক্তিগত…

আরও পড়ুন : ঈদের দিনে খাবার টেবিলে থাকুক জম্পেশ আয়োজন, রইল কিছু চেনা–অচেনা রেসিপি…

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest