ত্রিপুরায় আসন্ন পুরসভার নির্বাচন। সেখানে আন্দোলন চরমে তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর বিপ্লব দেবের প্রশাসন এবং দল সেখানে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। এই পরিস্থিতিতে এবার ত্রিপুরা বিজেপির বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন। যা বিপ্লব দেব প্রশাসনের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘দিন শেষ হয়ে এসেছে। কদিন আর বাকি আছে। তাই ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছেন। ত্রিপুরায় পুরভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে। মূল শত্রুকে চিনতে ভুল করছে বিজেপি। শিশুসুলভ আচরণ নেতৃত্বের।’
গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূল (Tripura Civic Polls) যে যে অভিযোগ করেছে, এ দিন সুদীপ রায় বর্মণের গলাতেও কার্যত তারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে৷ বিপ্লব দেবের (Biplab Deb) নাম না করেই তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুদীপ রায় বর্মণ৷ বিজেপি-র বিদ্রোহী বিধায়কের দাবি, ভোটের আগে হামলা, হুজ্জতি করে আসলে দলেরই বদনাম হচ্ছে৷
এ দিন আগরতলায় রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে বিপ্লব দেব সরকারের সমালোচনায় সরব হন সুদীপ রায় বর্মণ৷ তিনি বলেন, ‘ইদানিংকালে যে ঘটনাগুলি রাজ্যবাসী চাক্ষুস করছেন,হামলা, হুজ্জতি, রাতের অন্ধকারে বাড়ি ঘর ভাঙা, প্রার্থীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো- এই ঘটনাগুলির আমরা তীব্র নিন্দা জানাই৷ ভারতীয় জনতা পার্টির মূল মন্ত্র সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস৷ ভারতীয় জনতা পার্টি যে চিন্তাধারায় আবদ্ধ, তাতে দেশের স্বার্থ সবার আগে, তার পর দল, ব্যক্তি৷ এই দুই মূল মন্ত্রের কোনওটাই রাজ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে না৷ উন্নয়ন, বিশ্বাসের উপরে ভোট হলে এসব হামলা, হুজ্জতির প্রয়োজন ছিল না৷’
তাঁর আরও দাবি, ‘যে চিন্তা ধারায় ভারতীয় জনতা পার্টি আবদ্ধ, তাতে দেশের মানুষ সবার আগে৷ কিন্তু এখানে উল্টো ছবি দেখছি৷ আমাদের রাজ্যের সংস্কৃতি হল উৎসবের মেজাজে ভোট৷ এখন গোটা দেশ সেই ত্রিপুরাকে অন্য ভাবে চিনছে৷ এটাই আমার আক্ষেপ৷’
এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সুদীপ রায় বর্মণ বোঝাতে চেয়েছেন, তৃণমূল নয়৷ আসলে ত্রিপুরায় বিজেপি-র প্রকৃত প্রতিপক্ষ বামফ্রন্টই৷ সুদীপ রায় বর্মণের মতে, ‘আমরা নিজেদের প্রকৃত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেই চিনতে পারিনি৷’ তৃণমূলের তরফে বার বারই ত্রিপুরা পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মেনে নিয়েছেন সুদীপ রায় বর্মণও৷ যদিও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার নেপথ্যে অন্য অঙ্ক দেখছেন বিজেপি-র বিদ্রোহী বিধায়ক৷ তাঁর দাবি, ‘আমরা নিজেদের মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিনতে পারিনি৷ পুলিশ আজকে ঠুঁটো জগন্নাথ৷ মানুষের রাগ, অভিমান যাতে আরও বেশি করে বিজেপি, রাজ্য সরকারের উপরে বেশি করে পড়ে, সেটাই পুলিশ সুনিশ্চিত করছে৷ যে সব পুলিশ অফিসাররা বাম সরকারের আস্থাভাজন ছিল, তাঁরাই এখন শীর্ষ স্তরে রয়েছে৷ এই বিষয়টি শিশুসুলভ, প্যারাসুট থেকে নেমে পড়া নেতারা বুঝতেই পারছেন না৷ যখন বুঝবেন তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে৷’
সুদীপ রায় বর্মণের সঙ্গে বিপ্লব দেবের সংঘাত অনেক দিনের৷ যে কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে হয় সুদীপ রায় বর্মণকে৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্বও সুদীপের বদলে বিপ্লব দেবের উপরেই আস্থা রাখে৷ যা সুদীপ রায় বর্মণের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে৷ যদিও সংঘাত চূড়ান্তে পৌঁছলেও দল ছাড়েননি সুদীপ৷ এর আগেও বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন তিনি৷ বিজেপি-ও সুদীপ রায় বর্মণের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷
স্বাভাবিক ভাবেই এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিপ্লব দেব তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। স্বাভাবিকভাবেই ঘরে–বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়ে গিয়েছে বিপ্লব দেব এবং তাঁর দল।