তেহরান:চিন যদি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মৃত্যুপুরী হয় তাহলে সেই নিরিখে দ্বিতীয় স্থানটি হতে চলছে ইরান। ইরান প্রশাসন জানিয়েছে, রীতিমত মহামারির আকার নিয়েছে করোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। করোনা ভাইরাসে সংক্রমতি হয়ে বহুমানুষই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যা নিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্ন ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি চিনের বাইরে আর কোনও দেশে করোনার বলি এত মানুষ হয়নি।
মারণ অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন খোদ সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকর। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে সে দেশের মহিলা বিষয়ক দফতরেরও দেখাশোনা করেন। বাড়িতেই তাঁর শুশ্রূষা চলছে বলে জানা গেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ইরান সরকারের আরও এক প্রতিনিধি এই ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান মজতুবা জলনৌর।
ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে গত ১৯ তারিখে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম অসুস্থের সন্ধান মেলে। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াইশোজন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।যাদের মধ্যে ১০৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তৎপরতার সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয়েছে আক্রান্তদের।
ইরান সরকার জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও উদ্বিগ্ন। তেহরান, কোম, মাশাদ-সহ দেশের ২২টা শহরে শুক্রবারের নমাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আগামী সপ্তাহে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইরানের পরিস্থিতি দেখে সংলগ্ন সবকটি দেশ তাদের সীমাম্ত বন্ধ করছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি জানিয়েছেন, সরকার এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে তৎপর।
চিন ও ইরানের পরেই ঝুঁকির দেশ হিসেবে রয়েছে ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়া। যথাক্রমে ১৬ জন ও মারা গেছেন ১৩ জন মারা গেছেন সে দু’টি দেশে। আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক হাজার। ইতালির জনপ্রিয়, আন্তর্জাতিক পরিচিত শহর মিলান এবং ভেনিস শহর সংলগ্ন দুটি এলাকাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভেনেতো এবং লোম্বার্ডি অঞ্চলের একাধিক শহর লকডাউন।ভাইরাস আতঙ্কে ইতালির বহু স্কুল ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাতিল ইতালির কার্নিভাল । এছাড়া জাপানে ৫ জন, হংকংয়ে ২ জন, ফিলিপাইন্সে ১ জন, ফ্রান্সে ১ জন ও তাইওয়ানে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।
হু-এর আশঙ্কা, যেভাবে সমস্ত দেশে করোনাভাইরাস থাবা বসাচ্ছে, তাতে এই অসুখ এপিডেমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ‘প্যান্ডেমিক’ হতে পারে।
বিবিসি জানাচ্ছে, ইরানের পরেই সর্বাধিক করোনাভাইরাস সংক্রামিত দেশ হল দক্ষিণ কোরিয়া। চিনের নিকটবর্তী এই দেশে ১১ জনের মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কূটনীতিকের যুক্তি প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াতে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
কিন্তু কিম জং উনের সরকার সেটি গোপন করছে। তাঁদের দাবি, উত্তর কোরিয়া ও চিনের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। কিম সরকার সীমান্ত বন্ধ সংক্রান্ত কোনও বার্তা দেননি। ফলে উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন সব মহলে। এমনকি চিন সরকারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ নিয়ে কিছুই জানায়নি। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, চিনের বাইরে অন্তত ৩০টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এই সংক্রমণ এতদিন চিন সহ এশিয়াতেই তাণ্ডব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই অদৃশ্য হানাদার এবার ইউরোর ও মধ্য এশিয়ায় তার আক্রমণ শুরু করেছে। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।