প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকবিহ্বল বাংলাদেশ। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা থেকে এসেছে একের পর এক শোকবার্তা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ থেকে স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, প্রত্যেকেই শোকবার্তায় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বাংলাদেশের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আজ সেদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র।
শেখ হাসিনা দাদা বলে ডাকতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। নড়াইলে যে প্রণবের শ্বশুরবাড়ি, জানার পরে বলেছিলেন— এ বার থেকে জামাইষষ্ঠীর তত্ত্ব পাঠাবেন দিল্লিতে। গত কয়েক দিন ধরে প্রণববাবুর খবর নেওয়াটা ছিল তাঁর রুটিন। সোমবার বিকেলে দাদার মৃত্যু সংবাদ আসার পরে বেশ কিছু ক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলেন শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর ৭৫ বছর পরে বিরল সম্মানে ভূষিত টিপু সুলতানের বংশধর ও ব্রিটিশ চর নূর ইনায়েত খান
প্রথা মেনে শোকবার্তা দিয়েছেন, শোক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁর দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, তার বাইরেও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে ৫০ বছরের স্মৃতি হাতড়ে এ দিন তিনি নানা কথা বলে গিয়েছেন। জানিয়েছেন, সেই ভয়ঙ্কর ১৯৭৫-এর অগস্টের কথা। অভ্যুত্থানে বাবা-মা, ভাই, স্বজনদের হারিয়ে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাসিনা। সেই সময়ে অভিভাবকের মতো তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন প্রণববাবু। তবে তারও আগে, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই তাঁর বাবা ও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক প্রণববাবুর। আর পদ্মা দিয়ে যত জল গড়িয়েছে, সেই সম্পর্ক ততই মজবুত হয়েছে। ইতিহাসের নানা ওঠাপড়ায় প্রণব ছিলেন বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গী, বন্ধুও।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ আব্দুল হামিদ তাঁর শোকবার্তায় বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরিতে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।” বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি প্রয়াত প্রণববাবুর ছিল সুগভীর অনুরাগ। দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’ শোকবার্তা পাঠিয়েছে বিএনপিও। বলা হয়েছে, ‘‘প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণ ও বিএনপি-ও সমব্যথী। তিনি ছিলেন উপ-মহাদেশের এক জন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ।’’