‘নিজের ঘরে’ ফিরলেন সব্যসাচী দত্ত। বিধানসভায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে হাতে তুলে নিলেন ঘাসফুল পতাকা। ‘ঘরওয়াপসি’ করে সব্যসাচী বললেন,”দীর্ঘদিন পুরসভার প্রতিনিধি ছিলাম। ভাইস চেয়ারম্যান থেকেছি। মেয়র হয়েছি। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বিধায়ক ছিলাম। সবটাই মমতা দিকে সামনে রেখে পেয়েছি।”
২০১৯ সালে পুজোর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সব্যসাচী। ২ বছর পর ফিরে গেলেন পুরনো দলে। কেন গিয়েছিলেন বিজেপিতে? সব্যসাচীর বক্তব্য,”দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আবেগতাড়িত হয়ে অন্য দলে গিয়েছিলাম। আজ মমতাদি আবার গ্রহণ করলেন। পার্থদা, ববিদা গ্রহণ করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। দল যে ভাবে বলবে সে ভাবে কাজ করব।”
বিজেপি-তে থাকলেও সব্যসাচীর বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে দলবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগ উঠছিল বারবার। এই দুর্গাপুজো নিয়েও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দ্বৈরথে জড়ান তিনি। এই বছর পুজো হবে কি না তা নিয়ে বিজেপি দোলাচলে থাকায় সব্যসাচী সংবাদমাধ্যমকে জানান, গতবার ভোট ছিল তাই পুজো হয়েছে। এ বার ভোট নেই তাই পুজোও নেই। এর প্রেক্ষিতেই দিলীপ বলেন, ‘‘বিধি অনুযায়ী পুজো হওয়া উচিত। ভোট দেখে পুজো হওয়া ঠিক নয়। যাঁরা পুজো করেছিলেন তাঁদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।’’
এর পরে বুধবারও দিলীপের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে। সেখানে তৃণমূল-সহ বিরোধীদের যেতে না দেওয়ার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন সব্যসাচী। আর তাতেই দিলীপের সঙ্গে দ্বৈরথ। মঙ্গলবার দিলীপ যোগী আদিত্যনাথের সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপই করেছে।’’ বুধবার সব্যসাচী বলেন, ‘‘কোনও আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া পদ্ধতি হতে পারে না। এটা গণতান্ত্রিক দেশ, এতো তালিবান শাসন নয়।’’ বুধবার সব্যসাচী ওই মন্তব্য করার পর থেকেই জল্পনা তৈরি হয় যে সব্যসাচীর তৃণমূলে ফেরাটা পাকা হয়ে গিয়েছে।
গত কয়েকটি দিন ধরে সব্যসাচী যে তৃণমূলে ফিরতে পারেন তা নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়েছিল। দুপুরেই অবশ্য তা স্পষ্ট হয়ে যায়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনিই সব্যসাচীকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিধায়ক পদে শপথ নিতে এসেছিলেন মমতা। শপথের আগেই তিনি ঘনিষ্ঠমহলে বলেন, ‘‘আমি আজই ওকে নিয়ে নিতে বলেছি।’’ দুপুরে মমতার সেই ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব্যসাচী বিধানসভায় আসেন। বেলা ৩টে নাগাদ তৃণমূলে যোগ দেন।
বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক পদে ছিলেন সব্যসাচী। একই সঙ্গে আসন্ন খড়দহের উপনির্বাচনে তাঁকে ইনচার্জ করেছে গেরুয়া শিবির। ফলে এই দলবদলে অনেকটাই অস্বস্তিতে বিজেপি। যদিও পদ্মের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই দলবদলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘উনি যেচেই বিজেপি-তে এসেছিলেন। আমরা ওঁকে ডাকিনি। ফলে আজ তিনি চলে যাওয়াতেও আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ, বিজেপি নেতা-নির্ভর নয়, কর্মী-নির্ভর দল।’’