নারদ মামলায় রায় হল না আজও, গৃহবন্দিই থাকবেন ধৃতরা, ফের শুনানি বুধবার

চার্জশিট দেওয়ার পর গ্রেফতার কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। সিবিআইয়ের কৌশলী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটার উদ্দেশে আদালত এও বলে, আপনারা জামিনের বিরোধিতা করতে এত ব্যস্ত কেন?
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নারদ মামলায় ধৃত দুই মন্ত্রী -সহ চার জনের জামিনের ব্যাপারে রায় হল না সোমবারও। এদিন দীর্ঘ দু’ঘণ্টার শুনানি শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী বুধবার ফের এই মামলার শুনানি হবে। এই সময় পর্যন্ত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গৃহবন্দিই থাকতে হবে। আগামী কালই এই শুনানি হতে পারত। কিন্তু যেহেতু ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল মঙ্গলবার ছুটিতে থাকবেন, তাই শুনানি হবে পরশু বুধবার।

প্রসঙ্গত, ফিরহাদ হাকিম গত তিন ধরে গৃহবন্দিই রয়েছেন। শনিবার রাতে হাসপাতাল থেকে পার্সোনাল রিস্ক বন্ডে সই করে, প্রেসিডেন্সি জেলের আইনি কাজ মিটিয়ে গোলপার্কে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি হাউস অ্যারেস্ট হয়ে রয়েছেন। আর প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং মদন মিত্র সোমবার দুপুর পর্যন্ত এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আরও পড়ুন: কাছা খুলে বিজেপিতে স্বাগত করা হয়েছিল….তৃণমূলে ফেরার হিড়িক নিয়ে দলকেই খোঁচা তথাগতর

নিম্ন আদালত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমদের জামিন দিলেও তার বিরুদ্ধে সোমবার রাতেই হাইকোর্টে যায় সিবিআই। উচ্চ আদালত জামিনের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে ধৃত চার জনকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। গত শুক্রবার হাইকোর্টে নারদ শুনানির প্রাথমিক পর্বের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং বিচারপতি অরিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশনামা লেখেন তাতে বিস্তর ফারাক দেখা যায়।

বিচারপতি অরিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায় ধৃত চার জনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তাতে সায় ছিল না।এরপর বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে হাইকোর্ট। তাতে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন এই বেঞ্চেই নারদ মামলার শুনানি হয়।

এর মধ্যেই গতকাল মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন ফাইল করে সিবিআই। তাতে দুটি বিষয় বলা হয়েছে। এক, বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনকে চ্যালেঞ্জ এবং হাইকোর্টের শুনানিতে স্থগিতাদেশ। হাইকোর্টে মামলা চলা সত্ত্বেও সিবিআইয়ের কী প্রয়োজন পড়ল সুপ্রিম কোর্টে মাঝরাতে অনলাইন পিটিশন দাখিল করার তা নিয়ে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এদিন শুনানির শুরুতেই প্রশ্ন তোলে। চার্জশিট দেওয়ার পর গ্রেফতার কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। সিবিআইয়ের কৌশলী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটার উদ্দেশে আদালত এও বলে, আপনারা জামিনের বিরোধিতা করতে এত ব্যস্ত কেন?

বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন: হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চে মামলা শুনানির নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন আপনাদের শীর্ষ আদালতে আবেদন করতে হল? এত তাড়াহুড়ো করার কি সত্যি কোনও প্রয়োজন ছিল? দীর্ঘ সময় ধরে মামলার তদন্ত করেছে সিবিআই। এমন কোন পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হল, যাতে রাতারাতি মামলা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যেতে হল!

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা: বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবগত করা হয়েছে।

অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি: রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী, একজন বিধায়ক ও শোভন চট্টোপাধ্যায় গৃহবন্দি রয়েছেন। আমার আবেদন, মামলাটি যদি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় তাহলে রাজ্যের মানুষের ভাল হবে। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই আমার এই আবেদন।

তুষার মেটা: গত ১৭ মে রাজ্যের দুই মন্ত্রী একজন বিধায়ক ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেভাবে প্রভাব খাটিয়েছেন তাতে করে তদন্তকারী আধিকারিকরা এ রাজ্যে সুরক্ষিত নন এবং মামলার তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবেশ নেই এ রাজ্যে।

বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়: সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয়নি। এখন যদি মামলার শুনানি গ্রহণ করা হয়, তাহলে কি আপনাদের অধিকার খর্ব হবে? (তুষার মেটাকে প্রশ্ন)

তুষার মেটা: অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ, তাই শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। যদি বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানি হয় আমাদের কোনও আপত্তি নেই।

রাজ্যের অ্যাডভোকেড জেনারেল কিশোর দত্ত: রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা, তা সঠিক নয়। এই মামলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা নিয়েও তো হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে। এখন হাইকোর্টের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না কেন? এই মামলার কপিই রাজ্য সরকারের হাতে এসে পৌঁছয়নি। তাই আমি অনুরোধ করব এই বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটার কোনও মন্তব্য করাই উচিত হবে না।

বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়: ইয়াস ঘূর্ণিঝড় এ রাজ্যে আছড়ে পড়তে পারে, প্রযুক্তিগত সমস্যা হতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়নি। আগামী বুধবার প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে মামলার শুনানি নাও হতে পারে। তাহলে আজ অসুবিধে কোথায়? (তুষার মেটাকে প্রশ্ন)

এই সময়ে মামলার শুনানির ওপর মুলতুবি রাখার আবেদন করে সিবিআই। সে আবেদন খারিজ করল বৃহত্তর বেঞ্চ। মামলার শুনানি শুনবেন বলে জানালেন বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতিরা।

তুষার মেটা: সিবিআই অফিসের সামনে মানুষের জমায়েত হয়ে রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে তাদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তাদের সিবিআই অফিসে বসিয়ে রেখে ভার্চুয়াল শুনানি করতে হয়েছে। মামলার কেস ডায়েরি সিবিআই আদালতে হাজির করতে পারেনি।

তুষার মেটা: নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে এত মানুষের জমায়েত হয়েছিল যে সেখানে তদন্তকারী আধিকারিকরা ভয় পেয়ে যান। এই কারণেই সংবিধানের ৪০৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী আমরা মামলাটি অন্য রাজ্যে সরানোর আবেদন জানিয়েছিলাম।

বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়: রবিবার সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে। সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে কিছু জানানো হয়েছে? (প্রশ্ন তুষার মেটাকে)

বিচারপতি সৌমেন সেন: সোমবার আপনারাই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা সিবিআইকে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই কারণে আপনারা আদলতের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছিলেন, তাই তো? (প্রশ্ন তুষার মেটাকে)

তুষার মেটা: আমরা জানিয়েছিলাম মামলা এখানে নিয়ে আসা হোক।

বিচারপতি সৌমেন সেন: নিম্ন আদালতের মামলাটি কী অবস্থায় রয়েছে? আপনারা ঠিক কী চাইছেন? চার অভিযুক্তের জামিন মামলা আমরা শুনব? (প্রশ্ন তুষার মেটাকে)

রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত: সিবিআই তাঁদের অফিসারদের এসকর্ট করে আদলতে নিয়ে গিয়েছে। ভার্চুয়াল শুনানিও সিবিআইয়ের ইচ্ছেতেই হয়েছে।

অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি: গত ১৭ মে সোমবার বিশেষ আদালতে মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় জামিন পেলেও হাইকোর্টে তাঁদের জামিন খারিজ হয় সিবিআইয়ের আবেদনে। এর পরে আজ তাঁরা জামিনে মুক্তি পাবেন কিনা, সেটাই আজকের বড় ইস্যু। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তাঁদের জামিনের পরে হাইকোর্ট জামিনের স্থগিতাদেশ দিলেও আমাদের কথা শোনা হয়নি।

তুষার মেটার উদ্দেশে বিচারপতি সৌমেন সেন: আপনারা মামলার তদন্ত অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাহলে চার অভিযুক্তকে কেন জামিনে মুক্তির বিরোধিতা করছেন?

তুষার মেটার উদ্দেশে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়: দীর্ঘ সময় ধরে মামলার তদন্ত করছেন। মামলার তদন্তে শেষ পর্যায়ে আপনারা চার্জশিট জমা দেওয়ার শেষ দিনে গ্রেফতার করলেন মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। আপনারাতো তাঁদের জামিনের বিরোধিতা করতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন কেন?

অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির উদ্দেশে বিচারপতি সৌমেন সেন: আপনারা কী বলতে চাইছেন? নিম্ন আদালতের রায়ের কপি না দেখেই ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিয়েছিল?

তুষার মেটার উদ্দেশে বিচারপতি সৌমেন সেন: সিআরপিসির ৪০৭ নম্বর ধারায় বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে। তাতে শুধু নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন খারিজ করা যায় কিনা সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আপনারা শুধু সেদিন ঘটনাক্রম ব্যাখ্যা করে আদালতে এসেছিলেন।

অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি: ১৭ই মে নিম্ন আদালতে মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের কোনও নেতা মন্ত্রীরা আদলত কক্ষের ভিতরে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা আদলতের বাইরে ছিলেন। কারণ, তাঁদের সহকর্মীদের গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সিবিআই যে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা: শুধুমাত্র একটি চিঠির উপর নির্ভর করে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিনের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের কথা শোনা হয়নি। ৪০৭ ধারার মামলায় জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া যায়?

এর পরেই এদিনের মতো শুনানি শেষ হয়।

আরও পড়ুন: কলকাতার ঠিক কোন দিক ঘেঁষে বেরোবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’? এলাকা স্পষ্ট করলেন বিশেষজ্ঞরা

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest