ইউপি ভোটের আগে ঘন ঘন আসবে অশান্ত কাশ্মীরের খবর !গেরুয়া রাজনীতির পূর্বাভাস

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

বিন আনোয়ার

আবহাওয়ার খবরের মতই এবার নিয়মিত মিলবে কাশ্মীরের খবর। কারণ স্পষ্ট। ইউপি নির্বাচন আসছে। মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি বেশিরভাগ ভালো তাস খেলে দিয়েছে আগেই। ভালো তাস মানে ‘বিদ্বেষী হিন্দুত্বের’ তাস। উন্নয়নের ফানুস ফেটে গিয়েছে । বাংলায় পরাজয় বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা কোনঠাসা করে দিয়েছে। অথচ ২০২২ এ ইউপি নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশবাসী চোটে রয়েছে যোগী এবং বিজেপির ওপর । যোগীর বিরুদ্ধে দলের অন্দরেই বাড়ছে ক্ষোভ। গেরুয়া পরিধান করে আগের মত হিন্দুদের ঠকাতে তিনি নাকি ততটা সফল হচ্ছেন না।  সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে দিন দিন। অনেকে বলছেন বিজেপি যদি ফিরেও আসে তবে যোগীর অবস্থা হতে পারে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সোনোয়ালের মত। বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব নাকি বিকল্প মুখ বেছে রেখেছে।

আরও পড়ুন : শোনো কমরেড শোনো…এই সিপিমের ইতিকথা !

বাংলার এমন পরাজয়ের পর বিজেপির পক্ষে হলফ করে বলা মুশকিল যে ইউপিও তারা জিতবে। নেগেটিভ ভোটে বিদায় হতে পারে বিজেপি। ইউপির পঞ্চায়েত ভোটে ইতিমধ্যেই তার আভাস মিলেছে। সপা যদি একা লড়াই করে তাহলে বিজেপিকে টেক্কা দেওয়া কঠিন হবে না। কিন্তু তারা যদি কংগ্রেসকে সঙ্গে নেয়, তাহলে কোনও চান্স নেই। বর্তমানে কংগ্রেস এমন একটা দল, যাকে বলে বলে বিজেপি গোল দিতে পারে। কংগ্রেস থাকলে বিজেপির সুবিধা। মায়াবতীকে না ধরলেও চলবে। মায়ার বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি। ফলে বিজেপি তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করে সঙ্গে রাখবে।বিজেপিকে সাহায্য করা ছাড়া তাঁর হাতে এই মুহূর্তে  উপায় নেই। আগামী ভোটে তাঁর বিশেষ ভূমিকা থাকবে না।

ইউপির আগামী লড়াই হবে বিজেপি বনাম সপা। অখিলেশ মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে মমতার মত তিনিও বিজেপিকে পরাজিত করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বিজেপি যে নীতি গ্রহণ করতে পারে তার মোকাবিলা কেবল সপা কেন  সমতলের সব দলের পক্ষেই কঠিন। কারণ বিজেপি ফের কাশ্মীর তাস সামনে নিয়ে আসবে। অনেক পোড় খাওয়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা, তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরকে সমতলের লোক আপন মনে করে। কিন্তু কাশ্মীরিদের নয়। সেই কংগ্রেস জমানা থেকে মোদীর জমানা পর্যন্ত কাশ্মীরিদের সম্পর্কে সমতলের মানুষের মানসিকতা বদলায়নি। এদেশে সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে এবং বিদ্বেষীদের প্রবল অপপ্রচারের সৌজন্যে মুসলিমরা কাশ্মীরিদের সম্পর্কে কিছুটা সংবেদনশীল। সমতলের হিন্দুদের কাছে কাশ্মীরি এবং পাকিস্তানিদের সমার্থক করে দেখানোর যে প্রয়াস কংগ্রেস আমল থেকে শুরু হয়েছিল, তা সফল হয়েছে।

পুলওয়ামার ঘটনা নিশ্চয় সকলের মনে আছে। এই পুলওয়ামা নিয়ে অর্ণব গোস্বামীর হোয়াটসআপ চ্যাটের কথাও ফাঁস হয়েছে।  পুলওয়ামা হামলা থেকে অর্ণবের রিপাবলিক এবং মোদীজির বিজেপি কিভাবে সুবিধা নিয়েছিল তাও গোপন থাকেনি। মিঞা সাহেব অর্থাৎ নওয়াজ শরীফের আমলে পাকিস্তান নিয়ে গেরুয়া শিবির যে রাজনীতির ছক কষত, ইমরান জমানায় তা সহজ হচ্ছে  না। ইমরান অন্য ছক কষছেন। তিনি তাঁর ‘গুরু’ আমেরিকাকে দেখাতে চাইছেন যে, পাকিস্তান ‘সুবোধ’ হয়ে গিয়েছে। ‘ছায়া যুদ্ধে’ তার আর রুচি নেই। তিনি বোঝাতে চাইছেন, কাশ্মীর এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ফলে সবকিছু নয়াদিল্লির হাতে। এতে অন্য কাউকে তো দায়ী করা যায় না।

কাশ্মীর একইভাবে অশান্তই থাকছে, তাহলে ৩৭০ রদ করে লাভটা কী হল ? এমন প্রশ্ন অনেকের মনে। পুরনো প্রবাদ হল, ওপরের দিকে তুথু ফেললে তা নিজের গায়েই পরে। কাশ্মীরের তুথু এখন মোদী সরকারের গায়ে পড়ছে। ফলে একটা কিছু করতেই হবে। তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

কাশ্মীরকে ফের রাজ্যের মর্যাদা নাকি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মোদী বাবু বৈঠক করেছেন কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে। তবে যেটা হবে তা নিয়ে প্রথমেই ঝঞ্ঝাট বাধবে। কাশ্মীরের নির্বাচনী আসন ‘ডিলিমিটেড’ করা হবে। জম্মুর আসন কাশ্মীরের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সেখানে জম্মুর জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ানো হবে। অৰ্থাৎ কৌশলে হিন্দু জনপ্রনিধি বাড়ানো হবে।রাজনৈতিকভাবে আরও একদফা কাশ্মীরিদের চাপে ফেলে মিডিয়ায় প্রচার দেওয়া হবে। গুলাম নবী আজাদ নিজেই মোদীজিকে অনুরোধ করেছেন, যাতে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ফিরে আসেন। যদিও কাশ্মীরি পণ্ডিতরা অনেকেই মোদী সরকারের ওপর বেজায় বিরক্ত। তাদের নিয়ে যে কেবল রাজনীতি করা হয়েছে এবং আগামীতে তা হবে, একথা তারা বুঝে নিয়েছে। যে রাজনীতি তাদের নিয়ে কংগ্রেস করেছিল, সেই রাজনীতিই রং চড়িয়ে বিজেপি করছে। এখন আর তাদের কাশ্মীরে ফিরে যেতে বললে কেউ যাবে বলে বোধ হয় না। কিন্তু যাবে। যারা যাবে তারা আসলে সংঘের লোক। বিজেপির গুরু আরএসএসের কথা মত তারা সেখানে যাবে। আর তখনই সবটা জমে ক্ষীর!

স্বাভাবিক কারণেই ছোট হোক, বড় হোক একটা বাধা আসবে। পাকিস্তানও সবটা দেখে চুপ মেরে থাকবে না। একটা অশান্তি তৈরী হবে। ঘন ঘন কাশ্মীরে হিংসার খবর মিডিয়ার টিআরপি বাড়াবে। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা পাকিস্তানের বাপান্ত করে ছাড়বেন। ‘নেশন’ কেবল কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের কথা জানতে চাইবে! এই করতে করতেই ইউপি নির্বাচন চলে আসবে। পাক বিরোধী হুঙ্কার ছাড়বে মিডিয়াগুলি। সার্জিকাল স্ট্রাইক টাইপ কিছু ঘটনা ঘটতেও পারে। সেই সুযোগে মুসলমান, কাশ্মীরি এবং পাকিস্তানকে একবন্ধনীতে রেখে আগুন ঝরানো ভাষণ দেবে বিজেপি নেতারা। সেটার মোকাবিলা অখিলেশের পক্ষে মুশিকল হবে।রাজনৈতিক ধান্দায় আর একদফা পাক বিরোধিতার ‘ওয়েব’ তুলবে বিজেপি।

এদেশের বহু মানুষের কাছে দেশপ্রেম মানে পাক বিরোধিতা। পাক বিরোধিতার মধ্যে যে আবেগ ও যুক্তি নেই, তা নয়। কিন্তু এই পাক বিরোধিতা মানে দেশপ্রেম নয়। দেশ প্রেম আরও বৃহৎ অনুভূতি। বিজেপির হিন্দুত্ব যেমন সনাতন হিন্দুধর্ম নয়, ঠিক তেমনি কেবল পাক বিরোধিতা দেশপ্রেম নয়। কিন্তু দুটোকেই কৌশলে কাজে লাগানো হয়েছে। তাতে ফলও যে খারাপ মিলেছে তা নয়। গেরুয়া হিন্দুত্বে বিদ্বেষ আছে। তাকে সহজেই ভোটব্যাংকে রূপান্তরিত করা যায়। তেমনই পাক বিরোধিতাকে কৌশলে মুসলিম বিদ্বেষ হিসাবে চালনা করা যায়। আর তার গোটা সুফলটা বিজেপি পায়। নরম হিন্দুদের পৃষ্টপোষক কংগ্রেস বহু বছর এর ক্ষির খেয়েছে। সে কথা সত্য।

কাশ্মীর অশান্ত হয়ে উঠলে মিডিয়া ব্যস্ত থাকবে কাশ্মীর নিয়ে। করোনা তখন আর খবরে থাকবে না। ভ্যাকসিনের কথা লোকে আর তুলবে না। যারা দেশপ্রেম মানে পাক বিরোধিতা জেনেছে তারা হুঙ্কার ছাড়বে। এমন অবস্থায় অখিলেশ যাদব যদি বিজেপির বিরোধিতা করে তবে তাকে পাকপন্থী বলে দেগে দেবে বিজেপি। এমনটিতে তার বাবা মুলায়মকে তারা ‘মৌলানা মুলায়েম’ বলে কটাক্ষ করত। তবে সত্য কথা বলতে কি মুলায়েম আসলে মুসলিমদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে দেখছেন। মজার বিষয় হল, সেটা মুসলিমরা জানত।  কে তাদের কখন ভোটব্যাংক হিসাবে দেখে, তা মুসলিমরা বোঝে। তবে মুসলিমরা যে বোঝে,সে কথা তাদের যারা বোকা বানানোর চেষ্টা করে তারা বোঝে না। বিজেপির নিজস্ব ‘বিদ্বেষী হিন্দুত্ব’ ও ‘ নির্মিত দেশপ্রেম’ রাজনীতির সঙ্গে পেরে ওঠা অখিলেশের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে।

এই লড়াইটা বিজেপি জিততে থাকবে, যতদিন না এদেশের মানুষ বুঝতে পারবে দেশ কী এবং দেশপ্রেম কাকে বলে। যতদিন না এদেশের মানুষ বিদ্বেষ ও ধর্মকে আলাদা করতে পারবে, ততদিন গেরুয়া পার্টির জয় রুখবে কে? যদি বিজেপি নামক এই দলটি কোনওদিন নাও থাকে, তবু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষদলগুলির ভিতরে থেকে যাবে এই ‘বিষাক্ত ধর্ম’ ও ছদ্ম দেশপ্রেম।

দেশপ্রেম মানে চুরি না করা,করফাঁকি না দেওয়া।ঘুষ না খাওয়া, অপচয় না করা,ধর্মীয় বিদ্বেষ পোষণ না করা। নিজের দেশের সম্পদ সুইস ব্যাংকে পাঠিয়ে না দেওয়া, লোক না ঠকানো, অহরহ দেশপ্রেমের নাম করে মিথ্যা কথা না বলা। দেশপ্রেম মানে কাজকে, জাতি, ধর্ম, বর্ণের ওপর ঠাইঁ দেওয়া। শ্রমের মর্যাদা দেওয়া। শ্রমিক, কৃষক , সেনা, শিক্ষক ও চিকিৎসকে একই সম্মানের চোখে দেখা। এই অনুশীলন শুরু হলে তবে দেশ কী তা বুঝতে পারবেন দেশবাসী। তা না হলে স্বাধীনতা দিবসে পাক বিরোধী এবং ব্রিটিশ বিরোধী সিনেমা দেখাকেই পবিত্র কর্তব্য বলে মনে হবে। যেমনটা এতদিন হয়ে এসেছে।

একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে বাংলায় বিজেপির এমন দশা হল কেন ? আবেগ দিয়ে না দেখে ভালোভাবে দেখলে বুঝবেন বিজেপি কিন্তু কম আসন পায়নি। তারা বাংলার প্রধান বিরোধী দল। তাদের বিদ্বেষ পছন্দ করেছে এই বাংলার বহু মানুষ।   তারা কেবল অবাঙালি বলে ঠোঁট উল্টালে চলবে না। তারা অনেকেই বাঙালি। ‘ডিগ্রিধারী বিদ্বেষী’ বাঙালি।

আরও পড়ুন : ইংরেজদের কাছে বহুবার ক্ষমা প্রার্থনা, নিজেই নিজেকে দিয়েছিলেন ‘বীর’ উপাধি – জন্মদিনে জানুন সাভারকারের বিতর্কিত জীবন সম্পর্কে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest