শ্রাদ্ধের আগের দিন হেঁটে ফিরলেন মৃত। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ব্যস্ত পরিবার। আত্মীয় স্বজনও আসতে শুরু করেছে। বাড়ির ছাদে সাদা কাপড়ের প্যান্ডেলও প্রায় শেষ। স্বজন হারানোর দুঃখে ছলছল করছে পরিবারের চোখ। এমন সময় হঠাৎ ফোন বাজল। বারাসাতের জি এন আর সি হাসপাতালের ফোন। যে হাসপাতালে বাড়ির কর্তা ভর্তি ছিলেন। ফোনের ওপাশ থেকে বলতে শোনা গেল, “আপনার রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে”।
অথচ গত ১৩ নভেম্বর শিবদাসবাবুর পরিবারকে হাসপাতালের তরফ থেকে জানানো হয়, করোনার জেরে মারা গিয়েছেন পরিবারের কর্তা। হাসপাতালের থেকে তুলে দেওয়া হাসপাতাল থেকে দেহ মিললে করোনা বিধি মেনে তাঁর সৎকারের কাজও সারা হয়ে যায়। হাতে চলে আসে ডেথ সার্টিফিকেটও। শনিবার ছিল শ্রাদ্ধ। আর তার ঠিক আগের রাতেই অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে বাড়ি ফিরলেন শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছেলে তখন শ্রাদ্ধের কাজে ব্যস্ত। চিরতরে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ কীভাবে করতে হয় বুঝতে পারছিলেন না পরিবার। আনন্দে কেঁদে ফেলে তাঁরা। অপেক্ষা করতে থাকে অ্যাম্বুলেন্সের। বিশ্বাস করতে বেগ পেতে হয় তাঁদের।
আরও পড়ুন: এবার ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন টাটা, বিড়লা, আম্বানি
হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে তাঁর সৎকার করেছিল ছেলে। হবিষ্যি খেয়ে নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে মনকে বুঝিয়েছে বাবা আর নেই। মৃত ব্যক্তি আর ফিরে আসে না। তাঁকে আর ছুঁয়ে দেখা যায় না। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতি নিমেষে মিথ্যে হয়ে যাওয়াতে ছলছলে চোখে, হাসি ফুটেছে ব্যানার্জি পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে বিরাটিতে।
ঘটনাটির সূত্রপাত ৩ নভেম্বর। ওই দিনই করোনা আক্রান্ত হয়ে খড়দার বলরাম বসু সেবামন্দির কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হন বিরাটির বাসিন্দা শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও খড়দার বাসিন্দা মোহিনীমোহন মুখোপাধ্যায়। সেদিন রাতেই বারাসতের কোভিড হাসপাতালে ২ জনকে রেফার করা হয়। তবে সঙ্কটজনক অবস্থা থাকায় শুধুমাত্র মোহিনীমোহনকেই বারাসতে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে চলে যায় শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত নথি।
মোহিনীমোহন মুখার্জি পরিবারকে ফোন করে ওই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল জানায় তাদের রোগী ভাল হচ্ছে। রোজই ফোন করে খবর নেয় পরিবার। ফোনের ওপার থেকে প্রত্যেকবারই জানান হয়, রোগী একটু একটু করে ভালো হচ্ছে। পরিবার ভাবতে বসেছিল, করোনাকে প্রায় জয় করেই নিয়েছেন মোহিনীমোহন মুখার্জি।
কিন্তু ঘটনা বাঁক খায় শুক্রবার। হঠাৎ হাসপাতাল থেকে মুখার্জি পরিবারে ফোন করে বলা হয় রোগী সুস্থ বাড়ি ফিরছে। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পর রোগী অ্যাম্বুলেন্সের চালককে বলেন বিরাটি যাব, মুখার্মীজি পরিবার বলেন পলতা। এরপরই তারা দেখেন রোগী তাদের নয়। তখনই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সত্য উদঘাটন হয়। ১৩ নভেম্বর যিনি মারা গিয়েছিলেন তিনি হলেন মোহিনীমোহন মুখার্জি।
শিবদাসবাবুর পরিবারের সদস্যরা ভুল করে মোহিনীমোহনের দেহ সৎকার করেন। এদিকে, ২০ নভেম্বর, শুক্রবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটি পান শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ঘটনায় খড়দার কোভিড হাসপাতালের কর্মীদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। এ ব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্য ভবন। ৪ সদস্যের এক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ঘটনার কথা প্রকাশ্যে না আনার জন্য দুই পরিবারকেই চাপ দেওয়া হয় হাসপাতালের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন: শাড়িতে চেকস! নতুন ফ্যাশনে মন মজেছে বি-টাউনের সুন্দরীদের