কোনও সাংবাদিক বৈঠক নয়। তৃণমূলের তরফ থেকে কোনও বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়নি। সোমবার দুপুরে হঠাৎ শোনা গেল, কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে দলের যাবতীয় সাংগঠনিক দায়দায়িত্ব থেকে প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে অব্যাহতি দিয়েছে তৃণমূল। এ ব্যাপারে তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও নির্দেশ পাননি বলে জানালেও রত্নাকে অপসারণ করার এই খবর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট জোড়ালো হয়ে ওঠে। কারণ, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর দলে ফেরা নিয়ে তৈরি হওয়া জল্পনা।
শোভন চট্টোপাধ্যায় যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সেই ১৩১-এর দায়িত্ব শোভনের স্ত্রী রত্নাকে দিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। অনেক দিন ধরেই শোভন আর রত্নার সঙ্গে থাকেন না। বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায় শোভনের বাড়িতে রত্না থাকেন। শোভন সে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে গোলপার্কের একটি অভিজাত আবাসনে থাকেন। শোভন-রত্নার মধ্যে এই দাম্পত্য কলহকে কেন্দ্র করেই দলের নেতৃত্বের সঙ্গে শোভনের দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল। শোভনের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে খোদ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েক বার প্রকাশ্যে কটাক্ষ ছুড়েছিলেন। সে সব বিষয়কে কেন্দ্র করে দূরত্ব এত বেড়ে যায় যে, প্রথমে শোভন মন্ত্রিত্ব ও মেয়র পদ ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
আরও পড়ুন: বাসের সিটে মিলল চালকের রক্তাক্ত দেহ, চাঞ্চল্য চুঁচুড়ায়
পরে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন। আর শোভন দল ছাড়তেই রত্নার হাতে শোভনের ওয়ার্ডের দায়িত্ব তুলে দেয় তৃণমূল। কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শোভনকে আরও বেশি অস্বস্তিতে ফেলতেই তৃণমূল ওই পদক্ষেপ করেছিল। এখন সেই পদক্ষেপ ফিরিয়ে নেওয়া কিসের ইঙ্গিত? শোভনের ঘর ওয়াপসির কথাবার্তা কি তা হলে চূড়ান্ত? সেই কারণেই রত্নার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ? গোটা রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে সোমবার দুপুর থেকে।
শুরু থেকে শোভনের অবস্থান নিয়ে জল্পনা ছিলই। বিজেপির কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যায় না তাঁকে। এমনকী অমিত শাহ-র সভাতেও দেখা মেলে না তাঁর। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দলের অন্দরে। দলীয় সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা , বৈশাখীকে দলের বড় পদ দেওয়ার মতো একাধিক দাবি রয়েছে শোভনের। তাই দলীয় অবস্থান নিয়ে তিনি যে খুশি নন এ বিষয় স্পষ্ট। এরই মাঝে গতকাল রত্নার দায়িত্ব খর্ব করেছে তৃণমূল। তবে হাজার শর্ত থাকলেও এত বছরের অভিজ্ঞ এক রাজনৈতিক নেতাকে হাতছাড়া করতে চায় না বিজেপি। তাই শোভনের দল ছাড়া নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন তড়িঘড়ি শোভনের বাড়ি পৌঁছে যান অরবিন্দ মেনন। জানা গিয়েছে, এদিন শোভনের সমস্ত দাবিই শোনেন তিনি। যদিও সূত্রের খবর, শোভনকে কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি মেনন। কাজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন অধরাই।
এবার কি বাস্তবেই তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন শোভন নাকি বিজেপির হেভিওয়েটরা দেখা করে পালটে দিলেন গোটা ‘খেলা’? উত্তর দেবে সময়।
আরও পড়ুন: বীরভূমে ভিন্জাতে প্রেম, স্বামীহারা তরুণীর সাজা ‘গণধর্ষণ’