ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক, যাঁর ঝুলিতে দু-দু’টি বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বরাবরই হিসেবের বাইরে তিনি। চেনা ছকে কোনওদিনই তাঁকে ফেলা যায় না। স্বাধীনতা দিবসের সন্ধেয় সেভাবেই সারা দেশকে হতচকিত করে দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছোট্ট একটা পোস্ট, ‘আপনাদের ভালবাসা ও সমর্থনের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সন্ধে ৭.২৯ মিনিট থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে গণ্য করবেন।’
আরও পড়ুন: ৭৪ বছর পর লজ্জার নজির, ৮ গোল হজম করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিলেন মেসিরা
তবে অতীত শুধু জাতীয় দলে, ক্রিকেট থেকে নয়। সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় অবসরের কথা জানালেও ধোনি স্পষ্ট করে দেননি ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে সরে গেলেন কিনা। তবে যেহেতু ইতিমধ্যেই আইপিএলের আঙিনায় ঢুকে পড়েছেন ধোনি, তাই তাঁকে চেন্নাইয়ের জার্সিতে মাঠে নামতে দেখা যাবে নিশ্চিত।
- ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির। অভিষেক ম্যাচেই প্রথম বলেই রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় মহেন্দ্র সিং ধোনিকে।
- দেশের হয়ে ৩৫০টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন ধোনি। করেছেন ১০,৭৭৩ রান। ব্যাটিং গড় ৫০.৫৭। রয়েছে ১০টি সেঞ্চুরি এবং ৭৩টি হাফ সেঞ্চুরি।
- ভারতের হয়ে ৯০ টি টেস্ট খেলেছেন মাহি। করেছেন ৪৮৭৬ রান। গড় ৩৮.০৯।
- টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে ৯৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ধোনি। করেছেন ১৬১৭ রান।
- পঞ্চম ভারতীয় হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দ্বিতীয় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে এই নজির রয়েছে মাহির।
- ২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট ছাড়েন ধোনি। ৬০টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ২৭টিতে জিতেছিলেন তিনি।
- এ তো গেল ব্যাটিংয়ের পরিসংখ্যান। উইকেটকিপার হিসেবে ধোনির রেকর্ড কেমন? টেস্টে তিনি ক্যাচ নিয়েছেন ২৫৬টি এবং স্টাম্পিং ৩৮টি। একদিনের আন্তর্জাতিকে ৩২১টি ক্যাচ এবং ১২৩টি স্টাম্পিং। আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে ৫৭টি ক্যাচ ও ৩৪টি স্টাম্পিং।
কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে কি ধোনিকে মাপা যায়! ২০০৭ সালে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপের মুহূর্তে অখ্যাত যোগীন্দর শর্মার হাতে বল তুলে দেওয়া বা ওয়াংখেড়েতে ব্যাটিং অর্ডার বদল করে চার নম্বরে নেমে নুয়ান কুলশেখরের বলে ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়ে ব্যাট ঘোরানো, ধোনির আসল মুন্সিয়ানা তো ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসকেই বদলে দেওয়া। সেই ইতিহাস কোনওদিন মোছা যাবে না।
চিরকালই চমক দিয়ে এসেছেন ধোনি। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালীনই ধোনি জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। আচম্বিতে নেওয়া তাঁর এই সিদ্ধান্তে কেঁপে গিয়েছিল ক্রিকেটবিশ্ব।বছর তিনেক আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর ঠিক আগে সবাইকে চমকে দিয়েই নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’।
ধোনি তো এমনই। কাউকে কিছু বুঝতে দেন না আগে থেকে। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালের হারের পর থেকে আর মাঠে ফেরেননি ধোনি। ক্রিকেটভক্তরা প্রায় প্রতিদিনই জানতে চাইতেন কবে অবসর নিচ্ছেন মাহি। তিনি কি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন, তা নিয়েও চলত গবেষণা। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ধোনিকে নিয়ে নানা মতামত দিতেন। কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত কথা তিনি নিশ্চুপ। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত যে নিতে চলেছেন তিনি, তা আগাম জানতে দেননি কাউকেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেও আইপিএল অবশ্য খেলবেন তিনি। তবে তাঁর আইপিএল-কেরিয়ার কতদিন দীর্ঘায়িত হবে সে ব্যাপারে অবশ্য এ দিন কিছু জানাননি।
আরও পড়ুন: BREAKING: ‘মাহি ভাই তোমার যাত্রায় সামিল হলাম’, এবার অবসর ঘোষণা করলেন রায়না