নেতা কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে ধর্ম খুঁজছেন ? সেটা আপনার মূর্খামি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

সৈয়দ আলি মাসুদ

নুসরত জাহানের অঞ্জলি দেওয়া কিংবা ঢাকের তালে কোমর দোলানো নিয়ে কিছু লোক বেজায় ক্ষুব্ধ। তাদের সমস্যা হল তারা নুসরত জাহানকে মুসলিম ভাবেন। ইসলামে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ। সুতরাং সেই মূর্তিপূজা কেন্দ্রিক সমস্ত উদ্দীপনা ও উল্লাসও মুসলিমদের কাছে নিষিদ্ধ। কিন্তু এই মুসলিমদের কে বোঝাবে যে উনি একজন অভিনেত্রী মাত্র । উনি রংমহলের বাসিন্দা। যে পেশার সঙ্গে তিনি জড়িত সেটা ইসলামি নয়। তাছাড়া আপনি সেখানে ইসলাম খুঁজতেই বা যাচ্ছেন কেন? এই মূর্খামি একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত সম্পদ।

নুসরত বর্তমানে তৃণমূলের সাংসদ। বসিরহাটবাসী তাঁকে বিপুল ভোট জিতিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। কিসের জন্য তিনি এই বিপুল ভোট পেয়েছেন তা কি ভেবে দেখেছেন? আসলে তিনি এই ভোট পেয়েছেন বিনোদনমূল্যের কারণেই। এই ধরণের প্রার্থীদের যখন আম আদমি ভোট দেন, তখন তাঁদের মাথায় এই সাইকোলজি কাজ করে যে নুসরত বসিরহাট এলে আর যাইহোক তাঁকে দেখা যাবে। ব্যস। এর বেশি কিছু নয়।এখন তিনি ঢাকের তালে কোমর দোলালে তাঁর ওপর রাগারাগি করার কোনও যুক্তি তো দেখিনা।তৃণমূলের ওপরই বা রাগ কিসের !

আরও পড়ুন : প্রেম প্রত্যাখানের জের, দিনের আলোয় তরুণীকে গুলি, ক্যামেরাবন্দি নৃশংস খুন

তবে রংমহলের বাসিন্দাদের উচিত অর্বাচীনদের এই ধরনের টিপ্পনীতে আমল না দেওয়া। দেখুন সোশ্যাল মিডিয়াতে লোকে নরেন্দ্র মোদিকে নিয়েও মস্করা করে। তা ধরতে নেই। আগে লোকে যা আড়ালে আবডালে বলত, এখন অনেকেই তা সোশ্যাল সাইটে বলে বা লেখে। তাতেই তাদের মজা।

নুসরত একটি মুসলিম নাম বয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে তাঁর কিছু সুবিধাও হয়। হিন্দুদের কাছে তিনি মুসলিম। মুসলিমের কাছে হিন্দু। তৃণমূলের কাছে তিনি তৃণমূল। আর বিজেপির কাছ…! শোনা যায় ,নুসরতের শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে নাকি গেরুয়া শিবিরের সম্পর্ক বেশ ভালো।

নুসরত বহিরঙ্গে হিন্দুধর্ম মতান্তরে সংস্কৃতির নানা লক্ষণ সচেতনভাবে বহন করেন।বলা ভালো ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসাবে তা অনেক সময় ক্যারি করেন। তা নাহলে ইসকন কোন যুক্তিতে তাঁকে দিয়ে রথের দড়ি টানায় বলতে পারেন ? আবার রোজার সময় তিনি মায়ের পাশে মাথায় ওড়না দিয়ে ইফতারের ছবি পোস্ট করেন। ওঁদের কাছে সবটাই ছবি। ধর্ম কিংবা অধর্ম সবটাই ওঁদের ইন্স্টাগ্রাম পোস্ট। অথচ আহম্মকের দল তা নিয়ে চিল্লে মরে।

 

View this post on Instagram

 

Durga Pujo ~ Dhaak Vibes 💖

A post shared by Nusrat (@nusratchirps) on

নেতা কিংবা অভিনেতা, নেত্রী কিংবা অভিনেত্রী সবটাই ছবি বস! এটা শিখতে হয়। আপনার যারা ভাবছেন নুসরত আপনাদের ধর্মের নাম ডোবাচ্ছে, তারা নিজেদের দিকে একবার দেখুন। ঢাকের তালে কোমর দোলালে আপত্তি, আর অফিসে ঘুষ খেলে? কাজের জায়গায় ফাঁকি দিলে ?অন্যায়ভাবে বোনকে বাপের সম্পত্তিতে থেকে বঞ্চিত করলে? সময় মত বিশেষ রাজনৈতিক দলের দাসত্ব করলে? সুদ খেলে? পণ নিলে ? দিনরাত মিথ্যা কথা বললে? অন্যের সঙ্গে লাগাতার অসভ্যতা করলে? আল্লাহ রসূলের নাম করে ‘ধর্ম ব্যবসায়’ করলে? ইনসাফের কথা বলে সংখ্যালঘু আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে সংবাদপত্র বানিয়ে বিশেষ রাজনৈতিক দলের ধামা ধরলে? মালিক হবার সুবাদে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের সঙ্গে অসভ্যতা করলে? নিজেকে রুজি রুটির মালিক ভাবলে?সেটা ইসলামে অন্যায় নয় ? নুসরতদের বেলায় যত দোষ !

তবে একথা সত্য কিছু মিডিয়া অযথা মুসলিমদের ‘মৌলবাদী’ প্রতিপন্ন করে রমন সুখ উপভোগ করে। তানিস্কের বিজ্ঞাপন যখন ‘কট্টর হিন্দুদের’ জন্য বন্ধ করে দিতেহল, তখন এই মিডিয়ারা অনেকেই ট্টর হিন্দু’র জায়গায় লিখল ‘নেটিজেন’। কট্টর মুসলিমদের বেলায় লেখা হয় ‘মৌলবাদী’! যে লোকগুলি তানিস্কের বিরুদ্ধে এমন অসভ্য করেছে কিংবা যারা নুসরাতকে গালাগালি করেছে তাদের থেকেও এই ধরণের মিডিয়া ভয়াবহ। এই অসভ্য লোকগুলোকে আপনি চিনতে পারছেন। কিন্তু এই মিডিয়া ইন্টেলেকচুয়ালি বিভাজন বাড়িয়ে চলছে।

 

View this post on Instagram

 

Shubho mahalaya… সকল কে.

A post shared by Nusrat (@nusratchirps) on

দেখুন কে মুসলিম আর কে মুসলিম নয় তাঁর বিচার ব্যক্তি মুসলিমের হাতে নেই। তবে কিছু লক্ষণ থাকে সন্দেহ নেই।। যেমন যে লোকটি রেপ করেছে তাঁর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয় না। সে রেপ করেছে বলে সে দেশপ্রেমী নয়, এটাও সংবিধান বলে না। একই সঙ্গে যে লোকটি ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেয় সে এদেশের বাসিন্দা নয় একথা বলা যায় না। যিনি ইনকাম ট্যাক্স দেননি তিনি যদি চিৎকার করে বলেন, ‘ভারত মাতা কি জয়’  তাহলে তাঁর ট্যাক্স মকুব হয়ে যাবে না। তেমনি কোনও মুসলিম যদি সিনেমা কিংবা নাটক অথবা মডেলিংয়ের মত পেশায় থাকেন, তবে তাঁর পেশাকে ইসলামি বলা যাবে না। তিনি নিজেকে মুসলিম দাবি করতেই পারেন।

আসলে যারা নুসরতের কিংবা নুসরতদের মত ব্যাক্তিত্বদের প্রতি রাগ করছে, তাদের কিছু কথা আছে। কিন্তু সেটা তারা গুছিয়ে বলতে পারে না। তাঁর জায়গায় অসভ্যতা করে। আসলে যে কথা তারা বলতে চায় তা হল আপনাদের স্বভাবে এমন দ্বিচারিতা কেন ? কেন আপনি কিংবা আপনারা অনেকেই সাধারণের আবেগ নিয়ে খেলবেন। মূর্তিপূজা এবং ইসলাম পাশাপাশি থাকতে পারে না। আপনি জানেন। তারপর পরও দ্বিচারিতা কেন? যেমন আপনি একই সঙ্গে ভারত এবং পাকিস্তানের বাসিন্দা হতে পারেন না। একহাতে ভারতের পতাকা এবং এক হাতে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে আপনি বৃহৎ মানবতার কথা বলে স্বাধীনতা দিবস উজ্জাপন করতে পারেন না। একই সঙ্গে বিজেপি এবং কংগ্রেস সমর্থক ও ভোটার হতে পারেন না। এক সঙ্গে সিপিএম এবং তৃণমূল হতে পারেন না। এগুলো আমরা মেনে নিয়েছি। সেখানে কেউ আপনাকে বলবে না আপনি বিজেপিকেও ভোট দিন, আবার কংগ্রেসকেও দিন। একই সঙ্গে।  ইসলাম কপটতাকে ঘৃণা করে। এই লোকগুলো অনেকে সেটাই বোঝাতে চায়। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেসব শব্দ ও ভাষা ব্যবহার তা ইসলাম অনুমোদন করে না।

আরও পড়ুন : সন্তানের জন্য সবেতনে ছুটি পাবেন ‘সিঙ্গেল পেরেন্ট’ বাবাও

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest