রাস্তার উপরেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন সিস্টার অ্যান রোজ নু তওয়ং। চার পাশে সশস্ত্র সেনা-পুলিশ। বন্দুক উঁচিয়ে যেন ঘিরে ধরেছে তাঁকে। তবু অনড় বছর পঁয়তাল্লিশের ওই খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনী। তাঁর কাতর আর্জি, বাকিদের ছেড়ে দিক সেনা, দরকারে তাঁকে যেন মেরে ফেলা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি নোবেলজয়ী নেত্রী সু কি-কে আটক করেছিল মায়ানমারের সেনা। তারপর গোটা দেশের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে সামরিক বাহিনী। পাল্টা সু কি-র মুক্তির দাবিতে লাগাতার পথে নামছে সে দেশের জনতা। আন্দোলন ভাঙতে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, গুলি কোনও কিছুই বাদ রাখেনি সেনা পুলিশ। তবু আন্দোলন দমেনি। এমনই অবস্থায় মূহুর্তে উঠে এসেছে সন্ন্যাসিনীর প্রতিরোধ গড়ে তোলার এই ফ্রেম।
জানা গিয়েছে, মায়ানমারের উত্তরাংশের মিটকিনা শহরে সোমবার ঘটেছে এই ঘটনা। সাদা পোশাক পরিহিত ওই মহিলা এক জন ক্যাথলির সন্ন্যাসিনী। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশে এক সন্ন্যাসিনীর এই কাতর আবদেন আরও এক বার সামনে এনেছে সেনা শাসনে থাকা মায়ানমারের ভয়ঙ্কর ছবি। সেনার সামনে এই সাহসিকতার জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিনা খরচে বেড়াতে যেতে চান চাঁদে? আপনার স্বপ্নপূরণ করবেন জাপানের এই ধনকুবের
এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, সন্ন্যাসিনীর কাতর আর্তির সামনে অল্প সময়ের জন্য হলেও থমকে যায় উর্দিধারীর দল। সিস্টার অ্যানের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে হাতজোড়ও করতে দেখা যায় কয়েক জনকে। কিন্তু পরে বোঝা গেল, সেটা ছিল নিছকই বিরতি!
সিস্টারের পেছনে ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা ভিড়টাকে লক্ষ্য করে শেষমেশ গুলি চালিয়েই দিল সেনা-পুলিশ। ও ভাবে রাস্তায় বসে থাকা অবস্থাতেই সন্ন্যাসিনী দেখলেন, মাথায় গুলি খেয়ে প্রতিবাদীদের একজন লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। সিস্টারের আক্ষেপ, “আমরা চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারলাম না। জানি না আরও কত জীবনের অপচয় এ ভাবে দেখে যেতে হব।” ‘যেন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল’, পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে এমন কথা বলেন তিনি।
দিনের শেষে বিধ্বস্ত ওই সন্ন্যাসিনী বলেন, “পুলিশ যে ভাবে ওদের ধরতে তাড়া করছিল, তা ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতোই। পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালালে ভিড়টা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আজ সশস্ত্র বাহিনীকে ঠেকাতে পারলাম না। তবু মানুষের বিপদ দেখলে আবার নামব পথে।”
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু ফরাসি ধনকুবের ও রাফাল প্রস্তুতকারক অলিভিয়ার দাসোর