কালো তালিকার খাঁড়া ঝুলছে মাথার উপরে। সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রপুঞ্জের জাতীয় নিরাপত্তা পারিষদে দুই ভারতীয়কে আন্তর্জাতিক জঙ্গি প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালাল পাকিস্তান। কিন্তু ইসলামাবাদের প্রচেষ্টা নাকচ করে দিল নিরাপত্তা পারিষদের সন্ত্রাস বিষয়ক ‘১২৬৭ কমিটি’। রাষ্ট্রপুঞ্জে আবারও মুখ পুড়ল পাকিস্তানের।
ওড়িশার বাসিন্দা গোবিন্দ পট্টনায়ক ও অন্ধ্রপ্রদেশের অঙ্গরা আপ্পাজি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তার পারিষদের ১২৬৭ কমিটির সামনে এই প্রস্তাবই পেশ করেছিল পাকিস্তান। তাদের জঙ্গি সাজানোর আপ্রাণ চেষ্টাও করেছিল। বরাবরের মতো ‘বন্ধু’ চিনকে পাশে পেলেও, পাক প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি জানায় নিরাপত্তা পারিষদের আরও পাঁচ সদস্য দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়াম। এই পাঁচ দেশেরই বক্তব্য ছিল, আন্তর্জাতিক জঙ্গি তকমা দিতে গেলে যে প্রমাণ দরকার তার কিছুই পেশ করতে পারেনি পাকিস্তান। যে যুক্তি সাজানো হয়েছে তাতে কোনওভাবেই প্রমাণ করা যায় না ওই দু’জন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন।
তার পরেই টুইট করে এই খবর জানিয়ে এই সব দেশের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস তিরুমুর্তি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘সন্ত্রাস সম্পর্কিত ১২৬৭ বিশেষ পদ্ধতিকে পাকিস্তান নির্লজ্জ ভাবে রাজনীতিকরণ করতে ও ধর্মীয় রং দিতে চেয়েছিল। পরিষদের যে সব সদস্য এই প্রস্তাবকে আটকে দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ।’’
আরও পড়ুন: ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ প্রণব মুখার্জির প্রয়াণে বিহ্বল বাংলাদেশ, স্তব্ধ হাসিনা
Pakistan’s blatant attempt to politicize 1267 special procedure on terrorism by giving it a religious colour, has been thwarted by UN Security Council. We thank all those Council members who have blocked Pakistan’s designs. @MEAIndia @DrSJaishankar @PMOIndia @harshvshringla
— PR/Amb T S Tirumurti (@ambtstirumurti) September 2, 2020
আফগানিস্তানে কর্মরত মোট চার ভারতীয়র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জে অভিযোগ জানিয়েছিল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের অভিযোগ ছিল, বেনুমাধব ডোঙ্গারা, অজয় মিস্ত্রি, আঙ্গারা আপ্পাজি এবং গোবিন্দ পট্টনায়েক আফগানিস্তানে কাজ করলেও তারা তেহরিক-ই-তালিবানের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদত দিতেন এবং অর্থসাহায্য করতেন। পেশওয়ারে সেনা স্কুলে হামলায় ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই হামলাতেও এই চারজনের যুক্ত থাকার দাবি করা হয়েছিল।
এই সব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার দাবিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস বিষয়ক ১২৬৭ কমিটির কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয় পাক সরকারের তরফে। কিন্তু এ বছরের গোড়ার দিকেই প্রথম দুই ভারতীয়র সম্পর্কিত প্রস্তাবে পদ্ধতিগত ত্রুটি দেখিয়ে আটকে দেয় আমেরিকা। এ বার আঙ্গারা আপ্পাজি এবং গোবিন্দ পট্টনায়েককে জঙ্গি ঘোষণার চেষ্টাও ব্যর্থ হল। এই দু’জনের কারও বিরুদ্ধেই উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে পারেনি পাকিস্তান। নিয়ম অনুযায়ী কোনও দেশের প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের যে কেউ স্থগিত করে দিতে পারে। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে তা তুলে না নিলে ওই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা আঙ্গারা আপ্পাজি আফগানিস্তানের একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারিতে তাঁকে কাবুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য দিকে আফগানিস্তানের একটি সংস্থায় উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন ওড়িশার বাসিন্দা গোবিন্দ পট্টনায়েক।
গত বছরের মে মাসে পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের মাথা মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এই ১২৬৭ কমিটি। চিন সেই প্রস্তাবে ভেটো দিলেও তা কার্যকর হয়নি। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তার বদলা নিতেই চার ভারতীয়কে জঙ্গি তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টায় কার্যত পুরোপুরি জল ঢেলে দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
আরও পড়ুন: চিন চাইলে ভারতীয় সেনার ক্ষতি করতে পারে আগের থেকেও বেশি , হুঁশিয়ারি বেজিংয়ের