ব্রিগেডের ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হতে হতেও হেরে গেলেন ‘ভাইজান’

বামেদের বোধহয় এই উপলব্ধি এখনও হয়নি যে তাদের গায়ে ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে। তার প্রমান ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ব্রিগেড মানে ময়দানে ভিড়। কিন্তু বামেদের ব্রিগেড মানে মঞ্চেও ভিড়। কারণ, সব জোট সঙ্গীর প্রতিনিধিত্ব চাই। আবার বক্তা তালিকাতেও সেই প্রতিনিধিত্ব রাখতে হয়। রবিবারও তার ব্যতিক্রম হল না। বাম শরিকরা তো বটেই, সেই সঙ্গে কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ। আব্বাস তাঁর দলের একমাত্র বক্তা হলেও কংগ্রেসের পক্ষে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী ছাড়াও ছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।

কেমন বক্তব্য রাখলেন কে? কার কথায় বেশি উত্তাল হল ব্রিগেড? তাঁর হিসেব কষেছি আমরা। আর সেটা করতে গিয়ে দেখা গেল, বামেদের মধ্যে মঞ্চ মাতানোয় এখনও এগিয়ে সিপিএম। অন্য দিকে, শক্তি অনুযায়ী ম্লান শরিকরা। তবে রবিবারের জমায়েতে নিজের শক্তি দেখানো আব্বাস গলার জোরও দেখিয়েছেন বক্তব্যে। বলা যেতে পারে ব্রিগেডের উচ্ছ্বাসে তিনিই ছিলেন ‘হিরো’। আবার জোটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জোটের অন্দরের বিতর্ক সামনে এনে তিনিই ব্রিগেডে ছন্দপতনের ‘ভিলেন’।

রবিবার, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন আব্বাস। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই আব্বাসের হুঙ্কার, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এখন ঘুম উড়ে গিয়েছে। ২০২১-এ আমরা মমতাকে শূন্য পাইয়ে দেখিয়ে দেব।’’ একইসঙ্গে রবিবারের সমাবেশে দেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাতের আহ্বানও জানিয়েছেন আব্বাস। আইএসএফ-এর ওই নেতা যখন মঞ্চ থেকে একের পর এক ঝাঁঝালো মন্তব্য করছেন তখন রীতিমতো গর্জন শুরু করেছে ব্রিগেডের জনতা। যার কিছুটা ঝলক পাওয়া গিয়েছে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম, সিপিএম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রমের বক্তব্য চলাকালীন। আব্বাসের প্রতি সমর্থন দেখে তাঁকে ‘ব্রিগেডের হিরো’ হিসাবেও আখ্যা দিয়েছেন ঘরমুখী বাম কর্মী, সমর্থকদের অনেকেই।

আরও পড়ুন: বিজেপির চোখে বাংলাকে দেখছে কমিশন,৮ দফায় ভোট নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা বললেন হারিয়ে ভূত করে দেব

কিন্তু যে জোটের মঞ্চে তিনি হাজির হয়েছেন, সেখানে দ্বন্ধ সামনে না আনলেও ক্ষতি হত না কোনও। বরং এই মুহূর্তে তৃণমূল এবং বিজেপি-র মতো দু’টি প্রবল শক্তির মুখোমুখি তখন শক্ত করে হাতে হাত ধরে ব্যারিকেড গড়াটাই মূল উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত ছিল। কংগ্রেস বা অধীর চৌধুরীর উপর রাগারাগি করার সুযোগ তিনি পরেও পাবেন। কিন্তু শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। এখানে আব্বাস সিদ্ধির উচিত ছিল নিজের গ্রহণযোগ্যতা আরও একটু বাড়িয়ে নেওয়া, আরও একটু নিজের জমি শক্ত করে নেওয়া নেতা হিসাবে।

কিন্তু তিনি দূরের কথা না ভেবে তাৎক্ষণিক লাভের কথা ভাবলেন, নিজেকে সবার থেকে বড় প্রমাণের খুব খারাপ চেষ্টা করলেন তিনি- যা প্রশ্ন তুলে দিল জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই জোট যদি শেষ পর্যন্ত হয়, তখন কংগ্রেসকে বলা এই কথা গুলো আব্বাস সিদ্দিকীর গলায় বিঁধে থাকবে কাঁটার মত। প্রতিপক্ষ বারবার মনে করিয়ে দেবে এই কথাগুলো। বাম থেকে কংগ্রেস, আইএসএফ সকলেই বলছে রবিবার ব্রিগেডের ভিড় ছিল ঐতিহাসিক। সেই দাবির সত্যতা পরিসংখ্যান বলবে।

কিন্তু বক্তব্যের নিরিখে অনেক ঐতিহাসিক সমাবেশ দেখেছে এই ব্রিগেড। সেই হিসেবে রবিবারের সমাবেশকে সামগ্রিক ভাবে ‘ফেল’ বলাও অত্যুক্তি হবে না। অথচ নিজেকে গ্রেস নম্বর দিয়ে পাস্ করিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল ভাইজানের কাছে। তার উপরের আছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা তো আছেই। মাথায় টুপি দিয়ে দাড়িওয়ালা কেউ সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বললেই ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে দেগে দেওয়ার তকমা এদেশের বহু পুরানো রীতি। বাম কর্মীদের একাংশের দাবি, রাজ্য রাজনীতির এমন একটি সন্ধিক্ষণে আব্বাসের হাত ধরা ‘ঐতিহাসিক অপরাধ’। তাঁদের ব্যাখ্যা, আইএফএস ‘সাম্প্রদায়িক’ তাস খেলতে ‘অভ্যস্ত’। তাই এমন দলের সঙ্গে হাত মেলানোর অর্থ বামেদের গায়েও ‘সাম্প্রদায়িকতা’র তকমা লাগা।

বামেদের বোধহয় এই উপলব্ধি এখনও হয়নি যে তাদের গায়ে ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে। তার প্রমান ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট। যখন বামেদের ভোটব্যাঙ্ক খালি হয়েছে আর বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক ভর্তি হয়েছে। ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা পড়েছে কংগ্রেসের গায়েও। কারণ এখন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নিজেদের ‘হিন্দু’ প্রমানে বড় বেশি ব্যস্ত। কিন্তু বিগ্রেডের মঞ্চে দ্বন্দ্ব সামনে এনে আব্বাস যেন নিজেই সমালোচিত হওয়ার জন্য মাথা পেতে দিলেন। আর এই ভুলই আব্বাসকে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ – এর খেতাব থেকে সরিয়ে দিল অনেকটাই দূরে। মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: বিজেপির প্রার্থী তালিকায়ও তারকাখচিত, জেনে নিন এগিয়ে কারা…

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest