ভোপাল: লকডাউনের আবহে ভিনরাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের দিন কাটছে চরম দুর্দশার মধ্যে। মাইলের পর মাইল তাঁরা হেঁটে চলেছেন বাড়ির পথে। তেমনই এক করুণ ছবি ধরা পড়ল উত্তরপ্রদেশের সেরিংয়ের রাস্তায়। এক অসুস্থ শিশুকে বাঁশ-কাপড়ের স্ট্রেচারে ঝুলিয়ে পরিজনেরা রওনা দিয়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কতটা পথ হাঁটলে তবে বাড়ি ফেরা যায় তা পরিযায়ী শ্রমিকেরা জানেন না। তাঁরা শুধু জানেন বাড়ি ফিরতে হবে। জানা গিয়েছে, ১৭ জনের একটি পরিবার হাঁটা শুরু করেছিল পঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে। গন্তব্য মধ্যপ্রদেশের সিংগ্রাউলি। লুধিয়ানাতে দিন মজুরের কাজ করতেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনের পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। খাবারও বেশি ছিল না। ফলে হেঁটেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেইমতো ১৫ দিন আগে হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু পথেই গুরুতর চোট পায় পরিবারের এক কিশোর। সম্ভবত ঘাড়ের কাছে কোনও হাড় ভেঙেছে তার। সেই অবস্থায় একটা স্ট্রেচার বানিয়ে তার উপর ওই কিশোরকে শুইয়ে হাঁটতে থাকে পরিবার। টানা ১৫ দিন হেঁটে কানপুর পৌঁছন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Lockdown 4.0: ৩১ মে পর্যন্ত বাড়বে মেয়াদ, চলবে বাস, বিমান, আর যা হবে…
লুধিয়ানা থেকে সিংগ্রাউলির দূরত্ব প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার ১৫ দিনে পেরিয়েছেন ওই পরিবার। কানপুরে পুলিশের চোখে পড়ে এভাবে একজনকে ঘাড়ে নিয়ে হেঁটে চলেছে কয়েকজন। তাঁরা ওই পরিবারকে থামিয়ে তাঁদের গন্তব্য জিজ্ঞাসা করেন। পরিবারের এক সদস্য জানান, রাস্তায় খাবার পেলেও পেট ভরে খেতে পাননি তাঁরা। অনেকের তো পায়ে চটিও নেই। সেখানে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। যাঁদের চটি ছিল না, তাঁদের চটি কিনে দেয় পুলিশ। তারপর বাকি পথ যাওয়ার জন্য একটু ট্রাকের ব্যবস্থা করে দেয় তারা। সেই ট্রাকেই বাকিটা পথ যাবেন ওই পরিবার।
শুধু কানপুর নয়, এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে গোটা ভারতে। লকডাউনের পর থেকেই বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকরা নিজেদের রাজ্যে ফেরার চেষ্টা করছেন। পরবর্তীকালে অনেক রাজ্য বাসের ব্যবস্থা করলেও কিংবা কেন্দ্রের তরফে ট্রেনের বন্দোবস্ত করা হলেও তার আগেই অনেকে হেঁটে রাজ্যে ফেরার চেষ্টা করেছেন। তার খেসারতও দিতে হচ্ছে শ্রমিকদের। কখনও ক্লান্তি, কখনও পথেই অসুস্থ হয়ে কিংবা কখনও দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে শ্রমিকদের। কিন্তু তারপরেও হাঁটা থামছে না। প্রতিদিন ভারতের কোনও না কোনও প্রান্তে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার উপর দিয়ে সার দিয়ে হেঁটে চলেছেন শ্রমিকরা। কোলে ছোট বাচ্চা, মাথায় জিনিসপত্র। জীবনের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে আপনজনের সঙ্গে ঘরে ফেরার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ফের পথ দুর্ঘটনা, দুই লরির সংঘর্ষে উত্তরপ্রদেশে মৃত ২৩ পরিযায়ী শ্রমিক