আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বেই বাংলায় লড়বে তাঁর দল। ফুরফুরা শরিফে এসে জানিয়ে দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলায় আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বেই এগিয়ে যাব আমরা। ওঁর পাশে থাকব আমরা। উনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাকেই সমর্থন করব।’’ বিধানসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (মিম) বাংলায় কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানান ওয়াইসি।
বৈঠক শেষ হতেই আব্বাসকে পাশে নিয়ে বিবৃতি দেন আসাদউদ্দিন। জানিয়ে দেন, আসন্ন নির্বাচনে আব্বাসকে পাশে নিয়েই ময়দানে নামছে তাঁর দল। রবিবার সকালে আসাদুদ্দিন কলকাতা থেকে সোজা ফুরফুরা শরীফে গিয়ে মাজারে কবর জিয়ারত করেন ওয়েইসি।গতকাল আসাদুদ্দিন ওয়াইসি হায়দারাবাদ থেকে কলকাতায় আসেন। জানা গেছে, রাতে এ রাজ্যের মিমের দায়িত্বে থাকা জামিরুল হাসানের সঙ্গে আলোচনার পর ফুরফুরায় গিয়ে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেন ওয়েইসি। দুপুরে আব্বাস সিদ্দিকীর বাড়িতে রাজনৈতিক আলোচনার পর মধ্যাহ্ন ভোজন করবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
At Furfura Sharif, West Bengal in a meeting with Pirzada Abbas Siddiqui sb, Pirzada Naushad Siddiqui sb, Pirzada Baizid Amin sb & Janab Sabir Ghaffar sb pic.twitter.com/lptUX24JnJ
— Asaduddin Owaisi (@asadowaisi) January 3, 2021
ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন বা মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। রবিবার সকালের এই সাক্ষাৎ বুঝিয়ে দিল একুশের নির্বাচনে তৃণমূল সরকারের সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে চাপে পড়তে পারে ঘাসফুল পার্টি । ওয়েইসি তাঁর এই লড়াইয়ে পাশে চাইছেন আব্বাস সিদ্দিকিকে।এদিনের সাক্ষাৎকে প্রথম থেকে আব্বাস সিদ্দিকি সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেই দাবি করছেন। কিন্তু তার মধ্যে যে অন্য গপ্পো আছে তা অস্বীকারের উপায় নেই।
আরও পড়ুন: আগাম বোঝার উপায় নেই, নিঃশব্দে হানা দিচ্ছে ‘সাইলেন্ট’ হৃদরোগ
আচমকা বাংলা আসাদউদ্দিনের আগমন নিয়ে প্রশ্ন করলে, রাজ্যে মিমের সভাপতি জামিরুল হাসান জানান, জানুয়ারিতে আসাদউদ্দিন বাংলায় আসছেন, তা আগে থেকেই ঠিক ছিল। নিজে থেকেই ফুরফুরা শরিফে গিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন জামিরুল। ফুরফুরা শরিফে তিনি আসাদউদ্দিনের সঙ্গী হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাংগঠিনক কাজকর্ম ছেড়ে তাঁকে নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন আসাদউদ্দিন। তাই এ দিন ফুরফুরা শরিফে মিমের রাজ্য নেতৃত্বের তেমন কোনও বড় মুখকেই দেখা যায়নি। রবিবার বিকেলের বিমানেই ফের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা আসাদউদ্দিনের।
তবে আসাদউদ্দিন যতই চেষ্টা করুন না কেন, বাংলার মানুষ মিম-কে গ্রহণ করবে না বলে মত তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘আসাদউদ্দিন তো আগেই জানিয়েছিলেন পশ্চিম বাংলায় আসবেন। আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে বৈঠকটা নতুন ব্যাপার। উনি জানেন বাংলায় কিছু হবে না ওঁদের। তাই ফুরফুরা শরিফে গিয়েছেন। বিজেপির হয়ে ভোট কাটাই মিমের লক্ষ্য। বাংলার মানুষ ওদের গ্রহণ করবে না। তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকবেন। মিমের আগমনে বাংলার রাজনীতিতেও কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
কয়েকদিন আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী দেখা করেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার সঙ্গে। সূত্রের খবর, সিদ্দিকিকে জোটের সঙ্গে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। মিম প্রধান ওয়েইসির বঙ্গে আসায় নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “ওরা শিক্ষিত দল। আমাদের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ দলে নতুন দল তৈরির স্বাধীনতা আছে।”
এদিকে মিম প্রধানের বৈঠক প্রসঙ্গে সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিম (Md. Selim) বলেন, “বাস্তব অবস্থা ভোটের আগের সবাই চেষ্টা করছেন। আমাদের রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে। তার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে অনেকেই মনে করছেন ধর্মভিত্তিক ঐক্য যাতে গড়ে তোলা যায়। সেটা রাজ্যের পরিপন্থী হবে। তাই আমরা বাম গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ সমস্ত শক্তিকে একজোট করার চেষ্টা করছি। মিমকে ব্যবহার করে বিজেপি এই রাজ্যে শক্তিশালী হতে চাইছে। কিন্তু ওরা শক্তিশালী হলে ফুরফুরাতে দৌড়াতে হত না।”
মিম সমর্থকদের দাবি, ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি সর্বদা মিমকে ভোট কাটুয়া বলে খোঁচা দেয়। বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস ও সিপিএমও আসলে ভোট কাটুয়া ছাড়া কিছু নয়। বিজেপির মত একটা সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ দলকে মেনে নিতে বাম নেতাদের আপত্তি নেই। তাদের যেহেতু মমতার দল কুরসী থেকে উপরে ফেলছিল, তাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য তৃণমূলকে হটানো। যা তাদের কম্মো নয়। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়লেই কোনো লাভ হবে না। কারণ বাংলায় এখন আর তাদের রাজনৈতিক জমি বলে কিছু নেই।
একটি সাম্প্রদায়িক দল, যারা সারা দেশে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাদের প্রতি বাংলায় বাম-কংগ্রেস খানিকটা নরম মনোভাব দেখাচ্ছে বলে মিমপন্থীদের দাবি। তাদের বক্তব্য মিমকে সর্বদা সাম্প্রদায়িক দল বলে এক ঘরে করে রাখার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের দুটি দল কংগ্রেস ও সিপিএম এখন বাঁচার জন্য একজোট হচ্ছে। মিম কেবল মুসলিমের কথা বলে না। মিম নির্যাতিতর কথা বলে। মিম সংবিধান বাঁচানোর লড়াই করে। মিম ব্রহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা করে। সে কারণেই তাকে সাম্প্রদায়িক বলে দেগে দেবার চেষ্টা হয়। বিজেপির ‘মদতদাতা’ বলে অপপ্রচার করা হয়। বঙ্গ বামেরা বিজেপিকে আটকায় না। তাদের চেষ্টা হল বিজেপি মমতাকে কুর্সিতে থেকে সরালে, তারা পরে বিজেপিকে হঠাবে। এই হাস্যকর যুক্তিতে এখনও মেতে রয়েছেন কমরেড
দিদিমণি মিমকে ভয় পাচ্ছেন ধর্মীয় কারণে। এদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলির দুর্বলতা হল তারা আজও জানেনা মুসলিমরা ধর্ম দেখে ভোট দেয় না। তারা কাজ দেখে ভোট দেয়। যে দল তাদের মানুষের মর্যাদা দেবে, মুসলিমরা তাদের ভোট দেয়। সেক্ষেত্রে মুসলিম ভোট যে ঘাসফুলের দিকে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। তৃণমূলের উচিত মিমের বিরোধিতা না করে যে জনকল্যাণমুখী কাজ সরকার শুরু করেছে তাকে আরও বেশি করে জনমুখী করা। মনে করছেন সচেতন তৃণমূলপন্থীরা।
আরও পড়ুন: বাড়তি খরচ! বেলুড় মঠ টিকিট কাউন্টার বন্ধ করছে রেল