কলকাতা: নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় প্রথম মৃত্যু। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল ৫৭ বছরের এক প্রৌঢ়ের। তাঁর বাড়ি দমদমে। ওই ব্যক্তির বিদেশযাত্রার কোনও রেকর্ড নেই। জ্বর-সর্দি নিয়ে শুক্রবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা-আক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে, কোয়ারেন্টাইনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল
গত ১৬ মার্চ জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার টিমের তত্ত্বাবধানে এক্সট্রাকর্পোরিয়েল মেমব্রেন অক্সিজেনেশনে (একমো) রাখা হয়েছিল তাঁকে। তার মধ্যেই সোমবার তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ দিন দুপুর ৩টে ৩৫ মিনিট নাগাদ সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই স্বাস্থ্যভবনকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ মার্চ তাঁর লালারসের নমুনা নাইসেডে পাঠানো হয়। তার পরদিন রিপোর্ট এলে দেখা যায়, তাঁর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস রয়েছে। সেই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা আইসোলেশন বেডে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসার সবরকম ব্যবস্থা ছিল সেখানে। তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তিকে বাঁচানো গেল না।
এ দিন নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠক চলাকালীন এই মৃত্যুর খবর পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে নির্দেশ দেন, যে ব্যক্তি মারা গিয়েছেন, তাঁর মৃতদেহ থেকে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, সে দিকে নজর দিতে হবে। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে গোটা প্রক্রিয়া যাতে সম্পন্ন হয়, তা সুনিশ্চিত করতে বলেন।
আরও পড়ুন: করোনার জের! শুরুর চার মাস আগেই পিছিয়ে যাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক
ওই বৃদ্ধ যে বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ছিলেন, সেই হাসপাতালের একটি সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, যে ডাক্তার ওই বৃদ্ধকে দেখছিলেন তাঁর কাছে বৃদ্ধের স্ত্রী স্বীকার করেছেন, ইতালি থেকে ফিরছিলেন তাঁদের ছেলে-বউমা। এই খবর জানতে পেরেই ওই হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক হোম কোয়ারানটিনে চলে গিয়েছেন। যে পালমনোলজিস্ট ওই বৃদ্ধকে দেখছিলেন তাঁর প্রথম থেকে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল। বৃদ্ধর স্ত্রী’কে কাউন্সিলিং করার পরই বিষয়টি তিনি চিকিৎসককে জানান। এই বিষয়টি স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকে তোলেন।
যদিও ওই ব্যক্তির তরফে প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, কোনও বিদেশ ভ্রমণ করেননি ওই বৃদ্ধ। বিদেশ থেকে আগত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শেও যাননি। দাবি করা হয়েছিল, বেশ কিছুদিন আগে ওই বৃদ্ধ ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে গিয়েছিলেন। গত ২ মার্চ পুনে হাওড়া আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসে ফেরেন তিনি। মনে করা হচ্ছিল, পুনে থেকে আসা কোন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেই আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ।কিন্তু বর্তমানে যে তথ্য উঠে আসছে, তাতে আসল তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠছে। মৃত ব্যক্তির অফিস কলকাতার ফেয়ারলি প্লেসে। এতদিন ধরে তিনি কতজনের সরাসরি সংস্পর্শে গিয়েছেন, তা নিয়েই এখন চিন্তায় স্বাস্থ্য কর্তারা।
আরও পড়ুন: Covid-19 Lockdown: কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করতে মোদীকে চিঠি মমতার
এদিকে, মৃত ব্যক্তির দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। এই ধরণের ক্ষেত্রে দেহ ডিসপোজাল করে দেওয়াই নিয়ম। সেই নির্দেশও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতের ফুসফুস থেকে এখনও ছড়াতে পারে সংক্রমণ ৷ তাই মৃতদেহের অটাপ্সি করা যাবে না৷ এই অবস্থায় তাঁকে পরানো হবে বিশেষ পোশাক ৷ তাঁকে যাঁরা ক্যারি করবেন তাঁরাও পরবেন বিশেষ পোশাক ৷
পরিবারেরর কেউ মৃতদেহ ছুঁতে পারবেন না ৷ শুধু দূর থেকে মুখ দেখানো হবে। হিন্দু রীতিতে দাহ হলেও পরিবারের কেউ কোনও রীতিরেওয়াজে থাকতে পারবেন না।