ওয়েব ডেস্ক: ১৯৯৯ এ ওড়িশা সুপার সাইক্লোনের স্মৃতি ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর গতিতে বাংলা ও ওড়িশার দিকে এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আমফান।২১ বছর আগে ওই বিধ্বংসী সাইক্লোনের পোশাকি নাম ছিল ‘১৯৯৯ ওড়িশা সাইক্লোন’।
এবার আসছে আমফান।বিকেল ৫টা নাগাদ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মূল ধ্বজা হাওয়ায় উড়ে যায়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই লাগানো হয় নতুন ধ্বজা। বাতাসের গতিবেগ তীব্র না থাকলেও কেন উড়ে গেল মূল ধ্বজা খতিয়ে দেখছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।এর মধ্যে অশুভ লক্ষণ দেখছেন অনেকেই।
১৯৯৯-এর ২৯ অক্টোবর ঘণ্টায় ৩০০ মাইল গতিবেগে এই সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়। বলা হয়, ভারতের ইতিহাসে এটাই গত শতকের বিধ্বংসীতম ঘূর্ণিঝড়।আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামিকাল বুধবার দুপুরের পর এটি আছড়ে পড়বে সাগরদ্বীপ সহ সুন্দরবন এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনভাবে এটি আঘাত করবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিকে। প্রথমে হেড, তার পর আই ও শেষ আমফানের টেল আছাড় খাবে ভূ-ভাগে।
আরও পড়ুন: ‘পাশে আছি’, আমফান আতঙ্কের মধ্যেই মমতাকে ফোনে আশ্বাস অমিত শাহর
৯৯-এর সুপার সাইক্লোনের গতি মাপতে ব্যর্থ হয় যন্ত্রও। এবার কি তেমনটাই হবে? আশংকা দলা পাকাচ্ছে মনে।ঝড় আসছে, পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু সেই মহা ঘূর্ণিঝড় যে আক্ষরিক অর্থেই ছিন্নভিন্ন করে দেবে গোটা রাজ্যকে, দুঃস্বপ্নেও ভাবতেও পারেননি উৎকলবাসী। আমফানের আতঙ্ক ফের মনে করিয়ে দিল সেই দুঃসহ স্মৃতিকে।
ওই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ রাতারাতি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল গোটা রাজ্যকে।ঘণ্টায় ৩০০ মাইল গতিবেগে এই সুপার সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়। বলা হয়, ভারতের ইতিহাসে এটাই গত শতকের বিধ্বংসীতম ঘূর্ণিঝড়।
নিছক নিম্নচাপ হিসেবেই তাইল্যান্ড উপসাগরে এর জন্ম হয়েছিল।রাডারে ধরা পড়েছিল ১৯৯৯ এর ২৪ অক্টোবর সকালে। ৫ দিনের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে সেই নিম্নচাপ পরিণত হয় মহা ঘূর্ণিঝড়ে।
৩৬ ঘণ্টা ধরে প্রায় ২৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গিয়েছিল বালেশ্বর, ভদ্রক, কেন্দ্রাপড়া, জগৎসিংহপুর, পুরী এবং গঞ্জাম জেলার উপর দিয়ে।মহা ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বা আই অব স্টর্ম ছিল পারাদ্বীপ।
বাতাসের তীব্রতার কারণে শেষ পর্যন্ত হাওয়া অফিসের বাতাসের গতিবেগ মাপার যন্ত্র অ্যানিমোমিটার একটা মুহূর্তে গতিবেগ মাপতে ব্যর্থ হয়েছিল। তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত চলেছিল । ৭ মিটার থেকে ১০ মিটার অবধি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল ২০ কিমি অবধি এলাকা। সারা রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হন অন্তত ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ।
সুপার সাইক্লোনের জেরে ভারী বর্ষণে কটক, ভুবনেশ্বর-সহ ওড়িশার ১৪ টি উপকূলীয় জেলা, উপকূল সংলগ্ন ২৮ টি শহর চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।সরকারি তথ্য অনুসারে এই ঝড়ের তাণ্ডবলীলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯,৮৮৫ জন। যদিও বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছিল ৫০ হাজারে। শুধু জগৎসিংহপুর জেলাতেই মৃত্যু হয় ৮১১৯ জনের। গোটা ওড়িশায় অনাথ হয়েছিল ১,৫০০ শিশু।আহত হন ৭,৫০৫ জন। মারা যায় বা নিখোঁজ হয়ে যায় তিন লক্ষের বেশি গবাদি পশু।
উপকূলীয় অংশে ৩৩ লক্ষের বেশি ঘরবাড়ি কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার মধ্যে ২৩ হাজারের বেশি বাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল। প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ বাড়ি ঝড়ে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সাড়ে ১৬ লক্ষের বেশি ঘরবাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রায় ন’লক্ষ আশ্রয়।সে সময় ওড়িশায় মাত্র ২১টি ত্রাণশিবির ছিল, যেখানে আশ্রয় নিতে পেরেছিলেন মাত্র দু’হাজার মানুষ।
আরও পড়ুন: উপকূল থেকে সরানো হচ্ছে ২ লাখ মানুষকে! ‘আমফান’ আতঙ্ক দীঘা-সুন্দরবনে