বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে। ইতিমধ্যেই তিনি তৃণমূল ভবনে পৌঁছেছেন বলে খবর। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগেই শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি বলেন, “শুভেন্দু সুযোগসন্ধানী। আমি ওঁকে নেতা বলে মনেই করি না। দশ বছর তৃণমূল সরকারে থেকে সেখান থেকে সব সুবিধা নিয়ে এখন বিজেপিতে যোগ দিলেন।”
সোমবার তৃণমূল ভবনে যোগদানের আগে সুজাতা বলেন, ‘দিনের শেষে আমরা সম্মান চাই। যোগ্যতার প্রকৃত বিচার-মর্যাদা চাই। কোনও দলে যদি যোগ্যতাই ক্ষুণ্ণ হয়, মর্যাদা পাওয়া না যায়, সেখানে থাকা মানে মূর্খামি।’
আরও পড়ুন: আজ রাতেই শহরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বামীজীর বাড়ি হয়েই শুরু ‘শাহি’ সফর
সোমবার তৃণমূল ভবনে সৌগত রায়ের পাশেই বসেন সুজাতা। রয়েছেন কুণাল ঘোষও। বেলা একটা নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে সুজাতা মণ্ডল খাঁ-র হাতে দলের পতাকা তুলে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সাংবাদিক বৈঠকে সুজাতা বলতে থাকলেন নিজের ক্ষোভের কথাই। নিজেই বললেন, “এতটা বিজেপির জন্য প্রাণপাত করল যে মেয়েটি, কট্টর বিজেপি মেয়েটি হঠাৎ কেন এই চ্যালেঞ্জ নিল? সেটা একবার ভেবে দেখবার রয়েছে।” নিজেই আবার সে প্রশ্নের উত্তর দেন। বলেন, ” সবকিছুর পরেই আমরা চাই সম্মান পেতে। দলিত সম্প্রদায়ের মেয়ে হয়ে, তফশিলির মেয়ে হয়ে বিষ্ণুপুরের মানুষের যে ভালবাসা পেয়েছি তাই আমার প্রাপ্তি।”
তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত দিন যে দলটার বিরুদ্ধে লড়াই করতাম, সেই দল ছেড়ে এখন অনেকেই বিজেপিতে আসছেন। যে সব দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা এত দিন তৃণমূলে ছিলেন, তাঁরাই বিজেপিতে এসে এখন শুদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। বিজেপি এখন তৃণমূলের ‘বি’ টিমে পরিণত হচ্ছে। তা হলে আমি ‘বি’ টিমে কেন থাকব? ‘এ’ টিমেই চলে এলাম।’’ সুজাতার বক্তব্য, ‘‘যে ভাবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পথ দেখাবেন, সে ভাবেই এগিয়ে যাব। আমি কাপুরুষতা পছন্দ করি না। নিজেকে ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই মনে করি।’’
এদিন নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেন তিনি। সুজাতা বলেন, “১০ বছরের বেশি সময় ধরে দল থেকে পার্টি থেকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তিনি নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সব দিয়েছেন। কিন্তু উনি হয়তো মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছেন। যে দলটায় উনি ঝাঁপ মেরেছেন, সেই দলে একসময়ে ২জন সাংসদ ছিলেন। আমরা সেটি ১৮টি করেছি। উনি একজন ধান্দাবাজ, লোভী। কালকে ওই দলে দুঃসময়ে হলে তিনি আরেক দলে ঝাঁপ মারবেন।” একই সঙ্গে তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে সুজাতা বলেন, ‘আগামী দিনে কে বলতে পারেন, আমার এই সিদ্ধান্তে সৌমিত্র খাঁ সামিল হবেন না? ‘ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আগামী দিনে রাজ্য সভাপতি (বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ) যোগ দেবেন না, কে বলতে পারে।’
কথা প্রসঙ্গে ফের একবার শুভেন্দুকে খোঁচা তাঁর। বললেন, “সুযোগসন্ধানীদের মতো ঝুলিয়ে রাখিনি। দলের দুঃসময়ে দল থেকে বেরিয়ে যাব বা সুসময়ে অন্য দলে ঝাঁপ দেব এমন নই আমি।”
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সৌমিত্রকে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে জেতানোর পিছনে বড় ভূমিকা ছিল সুজাতার। আদালতের নির্দেশে সৌমিত্র সে সময় ভোটপ্রচারে যেতে পারেননি। গোটা কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার সামলে ছিলেন সুজাতা। কিন্তু এর পর কেন তিনি তড়িঘড়ি তৃণমূলে যোগ দিলেন? বিজেপি সূত্রে খবর, এর আগেরবার যখন অমিত শাহ সাংগঠনিক বৈঠকে কলকাতা আসেন, তখন সুজাতা সেই বৈঠকের ‘ফেসবুক লাইভ’ করেন। এতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর উপর চটে যান। প্রকাশ্যেই তাঁকে ভর্ৎসনা করা হয় বলেও খবর। এর পর থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে সুজাতার।
আরও পড়ুন: IPS- ইস্যুতে মমতার পাশে পাওয়ার, বিজেপি বিরোধী লড়াই জোরদার করার বার্তা NCP সুপ্রিমোর