দেশের শীর্ষ আদালতের বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর’ টুইটের জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করলেন কমেডিয়ান কুণাল কামরা। আদালতের তরফে নোটিশ জারি করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছিল কমেডিয়ানকে। সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া জবাবি হলফনামায় শুক্রবার কুণাল কামরা সাফ করেন, ‘বিচারব্যবস্থার প্রতি জণগণের আস্থা নির্ভরশীল বিচারব্যবস্থার নিজস্ব কাজকর্মের উপর, সমালোচকরা কী বলছে সেটা অর্থহীন’।
সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর (Arnab Goswami) জামিন মঞ্জুর প্রসঙ্গে একাধিক টুইট করেছিলেন তিনি। তাঁর সেই মন্তব্য শীর্ষ আদালতের মর্যাদা খর্ব করছে বলে অভিযোগ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আদালত আবমাননার মামলা দায়ের হয়। সেই সময়ই কুণাল জানিয়ে দিয়েছিলেন, “কোনও আইনজীবীর প্রয়োজন নেই, কোনও ক্ষমা চাওয়া নয়, কোনও জরিমানা নয়, কোনও জায়গার অপচয় নয়।” এবারও সেই সুরই বজায় রেখে তিনি জানালেন, ক্ষমা তিনি চাইবেন না।
কুণাল এফিডেভিটে আরও লিখেছেন, তাঁর টুইট বা চুটকি বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী আদালতের ভিত নাড়িয়ে দেবে, এমনটা ভাবা তাঁর কর্মক্ষমতার অতিরঞ্জন। এখানেই থামেননি কুণাল, তিনি যোগ করেছেন, ক্ষমতাশালী কোনও প্রতিষ্ঠান সব রকম সমালোচনার ঊর্ধ্বে, গণতন্ত্রে এটা ভাবা অন্যায্য। যেমন যখন গোটা দেশে অপরিকল্পিত লকডাউন চলছে, সেই সময় পরিযায়ী (শ্রমিক)-দের বলা হয়, বাড়ি ফেরার জন্য নিজেদের রাস্তা নিজেরাই খুঁজে নিন, এটা অযৌক্তিক এবং অগণতান্ত্রিক।
তাঁর হলফনামায় কুণাল এও দাবি করেছেন, ”আমার টুইট আদালতের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে খর্ব করার উদ্দেশ্যে করা নয়।” সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, যদি সুপ্রিম কোর্টের মনে হয় তিনি তাঁর সীমা অতিক্রম করেছেন এবং তাঁর ইন্টারনেট চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া উচিত, তাহলে তিনিও কাশ্মীরের লোকদের মতো পোস্টকার্ডে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাবেন সকলকে। প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর থেকে কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। নিজের হলফনামায় সেই প্রসঙ্গও তুলে আনলেন কুণাল।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরা এবং কার্টুনিস্ট রচিতা তানেজার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করা হয়। বিচারবিভাগের প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিচারপতি অশোক ভূষণ, এ আর সাহের ও সুভাষ রেড্ডির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।
আরও পড়ুন: যৌন নিগ্রহে বম্বে হাইকোর্টের রায় ‘বিপজ্জনক’, জারি সুপ্রিম স্থগিতাদেশ
নিজের হলফনামায় কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকির জামিনের আর্জি খারিজ করা নিয়ে ফুঁসে উঠেন কুণাল। তিনি লেখেন, ‘আমরা দেখছি বাক স্বাধীনতা ও অভিব্যক্তি প্রকাশের অধিকারের উপর নির্যাতন চলছে। মুনাওয়ারের মতো কমেডিয়ানরা জেলবন্দি সেই জোকস-এর জন্য যা সে উচ্চারণও করেনি, আর স্কুল ছাত্রদের জেরা করা হচ্ছে দেশদ্রোহের মামলায়’।
তিনি বলেন, ”আমি বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে কোনও ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান সব সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। আমার টুইট কি এতটাই ক্ষমতাশালী যে আদালতের মত শক্তিশালী ভিত্তিকেও নাড়িয়ে দিতে পারে!! জোকস বস্তব নয়, আর সেটা আমি দাবিও করছি না। অনেক মানুষই আছেন, যাঁরা রসিকতার কোনও প্রতিক্রিয়াই দেন না, উপেক্ষা করেন। ঠিক যেমন রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের সমালোচকদের উপেক্ষা করে থাকেন। আর এখানেই একটা রসিকতার জীবনের শেষ হয়।” কুণাল কামরা আরও বলেন, ”আমি বিশ্বাস করি না যে কোনও উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি, বিচারক শুধুমাত্র কিছু রসিকতার কারণে নিজেদের কাজ করতে ব্যর্থ হবেন।”
কিছুটা বিঁধে তিনি বলেন, ”তাহলে কি ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি কৌতুক বা সমালোচনা গ্রহণ করতে পারেন না? এইভাবে তো আমরা কারাবন্দী শিল্পী, ল্যাপডগ সর্বস্ব দেশ পরিণত হব।”
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরা এবং কার্টুনিস্ট রচিতা তানেজার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করা হয়। বিচারবিভাগের প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদনকারী দাবি করেন, কুণালের টুইটগুলি আদালতের পক্ষে মানহানিকর। তার পরই সুপ্রিম কোর্ট নোটিস দেয় কুণালকে। তারই জবাবে শুক্রবার এফিডেভিট জমা করলেন কুণাল। শুক্রবার বিচারপতি অশোক ভূষণ, এ আর সাহের ও সুভাষ রেড্ডির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।
আরও পড়ুন: কৃষি আইনে মানুষের উপকার হবে, কেন্দ্রের ‘স্ক্রিপ্ট’ বিরোধীশূন্য সংসদে পড়লেন রাষ্ট্রপতি