সপ্তমীর সকাল। নবপত্রিকার স্নান দিয়ে শুরু দুর্গা পুজো। সকাল থেকেই লোক সমাগম শুরু হয়েছে গঙ্গা সহ বিভিন্ন পুকুর ঘাটে। কেন করানো হয় এই নবপত্রিকা স্নান?
নবপত্রিকার অর্থ ন’টি পাতা। এমনিতে যদিও ন’টি উদ্ভিদকেই নবপত্রিকা হিসেবে ধরা হয়। এই উদ্ভিদগুলো হল— কদলি বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান। একটি পাতা সমেত কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ জড়ো করা হয়। তার পর তাদের একজোড়া বেল সহ সাদা অপরাজিতা লতা দিয়ে বাঁধা হয়।
এবার এই উদ্ভিদের সমষ্টিকে স্নান করিয়ে নতুন লাল কাপড় পরিয়ে ঘোমটা জড়িয়ে দেওয়া হয়। দেখে মনে হবে লজ্জাবনত এক বধূ। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করানো হয়। সেখানেই চলে পুজো। চলতি ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।
আরও পড়ুন: কপালের এই রেখা থাকা দৈব আশীর্বাদের লক্ষণ, জেনে নিন বিস্তারিত
নবপত্রিকার ন’টি উদ্ভিদ আসলে দুর্গার ন’টি বিশেষ রূপের প্রতীক গণ্য করা হয়। দুর্গার এই নয় রূপ হল, রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’। ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ’ মন্ত্রে পূজিতা হন।
পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল আচার শুরু হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমার সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নবপত্রিকার মাধ্যমে আসলে শস্যদেবীর পুজো করা হয়।
মহাস্নানের মারফত দুর্গোৎসবের মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দুর্গা ঠাকুরের সামনে দর্পন (আয়না) রেখে তাতে প্রতিফলিত প্রতিবিম্ব শুদ্ধ জল দিয়ে স্নান করানো হয়।
আরও পড়ুন: নবরাত্রিতে কোন দিনে কোন রূপে পূজিত হন দুর্গা, জানুন…