ছোট্ট সাংবাদিক বৈঠক। প্রায় তারকাহীন তালিকা। অনুপস্থিত টলিতারকারা। অন্য ক্ষেত্রের বিখ্যাত মানুষদের নামও প্রায় নেই। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী, ময়নায় অশোক ডিন্ডা আর ডেবরায় ভারতী ঘোষ, উল্লেখযোগ্য শুধু এই তিন কেন্দ্র। বিজেপি-র প্রথম পর্যায়ের প্রার্থিতালিকার সারমর্ম এমনই।
২৯৪ আসনের প্রার্থী ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূল। যে টলিউড তারকারা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁদের অনেককেই প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী হয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক, রাজ চক্রবর্তী, সায়নী ঘোষ, জুন মাল্য থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন। উল্টোদিকে প্রথম পর্যায়ে বিজেপি-র তালিকা দেখলে যথেষ্টই সাদামাটা মনে হতে পারে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে গিয়েছেন প্রথম সারির একাধিক নেতা। টলিতারকারাও প্রায় নিয়মিত ব্যবধানে যোগ দিয়েছেন। সেই টলিতারকাদের কাউকেই প্রথম পর্যায়ের প্রার্থী তালিকায় স্থান দিল না গেরুয়া শিবির। ঘোষিত তালিকায় রয়েছেন বিজেপি-র ৫৬ জন প্রার্থী, একজন আজসু-র প্রার্থী। বাকি তিনটি আসনে এখনও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়নি।
শোনা যাচ্ছে, রবিবার মোদীর ব্রিগেডে হাজির থাকতে পারেন মিঠুন চক্রবর্তী। ‘মহাগুরু’ যদি বিজেপি-তে যোগ দেন, তাহলে তারকার ভিড় আরও বাড়বে। কিন্তু সকলে কি প্রার্থী হবেন? এর আগে একদিকে যেমন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষালরা বিজেপি-তে গিয়েছেন, তেমনই যোগ দিয়েছেন যশ, হিরণ, রুদ্রনীল ঘোষ, পায়েল সরকার, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের মতো খ্যাতনামা টলি তারকারাও। শেষ পর্যন্ত এঁদের মধ্যে কাদের স্থান হবে তালিকায়? সেই প্রশ্নটা যেন আরও একটু ইন্ধন পেল শনিবারের ঘোষণার পর।
এই পরিস্থিতিতে গোটা জঙ্গলমহল অর্থাৎ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশ, পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার চারটি বিধানসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করল বিজেপি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, বিজেপির বাংলা দখলের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই আসনগুলি। বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, এই দফার প্রার্থী তালিকায় দল বদল করা নেতাদের তুলনায় গুরুত্ব পেয়েছেন বিজেপির পুরনো নেতারা।
আরও পড়ুন: WB election 2021 : টিকিট না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সোনালি, ক্ষুব্ধ দীপেন্দু-আরাবুল
যেমন পুরুলিয়ার ৯টি আসনের মধ্যে দু’টি বাদে বাকি বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে লড়াই করছেন বিজেপির পুরনো সদস্যরাই। শুধুমাত্র পুরুলিয়া এবং জয়পুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা যথাক্রমে তৃণমূল এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের সদস্য ছিলেন। পুরুলিয়ার সুদীপ মুখোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে এসেছেন। প্রায় একই ছবি বাঁকুড়াতেও। এই জেলার ১২টি আসনের মধ্যে তালডাংরা এবং শালতোড়ার বিজেপি প্রার্থীরা তৃণমূলের সদস্য ছিলেন। এই জেলার বাকি ৯টি আসনে বিজেপির পুরনো সদস্যরাই টিকিট পেয়েছেন।ঝাড়গ্রামের চারটি আসনেই লড়ছেন বিজেপির পুরনো সদস্যরা।
রাজনৈতিক মহলের নজর ছিল দুই মেদিনীপুরে। পূর্ব মেদিনীপুরের ‘হাইভোল্টেজ’ নন্দীগ্রামে প্রত্যাশামতোই প্রার্থী হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। হলদিয়া, কাঁথি দক্ষিণ ও উত্তর, রামনগর ছাড়া বাকি আসনে প্রার্থী রয়েছেন বিজেপির আদিরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে চন্দ্রকোণা ছাড়া বাকি আসনে আদি বিজেপির প্রার্থীরাই লড়াই করছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার চারটি আসনের মধ্যে একমাত্র গোসাবা আসনেই তৃণমূল থেকে আসা সদস্য লড়াই করছেন।
এই প্রার্থী তালিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের কথায়, তৃণমূল বা অন্যান্য দল থেকে আসা সদস্যদের টিকিট দিলে বেজায় বিপাকে পড়তে হত গেরুয়া নেতৃত্বকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হত তারা। ঠিক যেমনটা হল পুরুলিয়ায় জয়পুর কেন্দ্রে। ফরোয়ার্ড ব্লকের নরহরি মাহাতোকে প্রার্থী করার পরই বিজেপি ছাড়লেন জয়পুর ব্লক যুব সভাপতি দিব্যজ্যোতি সিং দেও। তবে প্রশ্ন উঠছে অন্য দল থেকে আসা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিয়ে। প্রার্থী পদ না পেয়ে তাঁরা কি আদও গেরুয়া শিবিরের হয়ে কাজ করবে? সময়ই উত্তর দেবে এই প্রশ্নের।
আরও পড়ুন: হুমায়ুন কবীর বনাম ভারতী ঘোষ, দুই প্রাক্তন আইপিএসের লড়াইয়ে জমজমাট ডেবরা