দিল্লি গেলেন না শুভেন্দু অধিকারী।বৃহস্পতিবার তিনি যাচ্ছেন তমলুকের নিমতৌড়িতে একটি ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে। সেখানে তিনি কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল পর্যন্ত তিনি শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দফতর উত্তরকন্যায় ছিলেন। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে তাঁর বৈঠক করার কথা। এখন দেখার, কলকাতায় ফিরে এসে মমতা সামগ্রিক ভাবে দলের বিষয়ে কিছু বলেন কি না। দেখার এ-ও যে, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে তাঁর শুক্রবারের প্রস্তাবিত বৈঠকের বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয় কি না।
বুধবার বিধায়কপদে ইস্তফা দেওয়ার পর জল্পনা শুরু হয়েছিল শুভেন্দুর দিল্লিযাত্রা নিয়ে। অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, শুভেন্দু দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের বঙ্গসফরের সঙ্গে হয়ে আসবেন। তার পর মেদিনীপুরে অমিতের জনসভায় বিজেপি-তে আনুষ্ঠানিক বাবে যোগ দেবেন। কিন্তু বুধবার রাতেই জানা যায়, শুভেন্দুর আপাতত দিল্লি যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। তিনি যে বিজেপি-তে যোগ দেবেন, তা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে কোনও সন্দেহ না থাকলেও কবে তাঁর যোগদান, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। জল্পনা এ-ও যে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের অন্য কেউ বিজেপি-তে যোগদান করবেন কি না। বিজেপি ইতিমধ্যেই অমিতের মেদিনীপুরের সভায় ‘চমক’ থাকবে বলে বার্তা দিতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞপ্তি রাজ্যের: নয়া বছরের প্রথম দিন থেকেই ৩% ডিএ সরকারি কর্মীদের
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলকে উল্লেখ করে এই সময়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বুধবার বিধানসভায় এক বাম বিধায়ককে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন ‘দাদা’। ওই বিধায়কের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী নাকি জানিয়েছেন, শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে আরও ১০ জন বিধায়কও তাঁর সঙ্গে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাবেন। তারপর ধাপে ধাপে আরও একাধিক বিধায়ক সেই পথে হাঁটবেন বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। তার আগে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর বক্তব্য কী হতে পারে, তা নিয়েও জল্পনা এবং আগ্রহ বাড়ছে।
শুভেন্দুর বিধায়কপদ ছাড়ার পর থেকে ঘটনা দ্রুত গড়াতে শুরু করেছে। বুধবার বিকেলে ইস্তফা দেওয়ার পর রাতেই শুভেন্দু যান তৃণমূলের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে। ঘটনাচক্রে, সুনীলও দলের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে পৌঁছে যান জিতেন্দ্রও। প্রায় দেড়ঘন্টা সকলে সেখানে ছিলেন। যদিও ওই মিলনকে ‘সামাজিকতা’ বলেই অভিহিত করছেন। কারণ, সম্প্রতি সুনীলের মাতৃবিয়োগ হয়েছে। সেই কারণেই শুভেন্দু-সহ অন্যদের সেখানে যাওয়া বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত। যদিও দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘রাজনীতির লোকেরা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও রাজনীতির কথাই বলে। লোক লৌকিকতা বা সামাজিকতার কথা তো আর দেড়ঘন্টা ধরে বলা যায় না!’’
অন্যদিকে, শুভেন্দুর ওই সভার আগেই তাঁর কলকাতার বাড়ির সামনে মমতার ছবি-সংবলিত পোস্টার পড়েছে। যেখানে লেখা আছে, ‘আমরা দিদির অনুগামী’, ‘আমরা তৃণমূলের অনুগামী’। অর্থাৎ, শুভেন্দু-অনুরাগীরা ‘দাদার অনুগামী’ বলে গোটা রাজ্যে যে পোস্টার সাঁটছেন, তার পাল্টাও তৃণমূলের তরফে দেওয়া শুরু হয়ে গেল। এই পোস্টার-যুদ্ধ যে আরও গড়াবে, তা নিয়ে উভয় শিবিরেরই সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আশঙ্কা, রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি শুভেন্দুর